আগৈলঝাড়া প্রতিনিধি ॥ খ্রিষ্ট ধর্মীয় উপাসনালয়ের ভুঁয়া সভাপতি সেঁজে সরকারী অনুদানের টাকা আত্মসাৎ করার পর প্রশাসনিক চাপে পরে আত্মসাতের টাকা সরকারী কোষাগারে ফেরত দিয়েছেন ভূয়া ওই সভাপতি। ঘটনাটি জেলার আগৈলঝাড়া উপজেলার রাজিহার গ্রামের খ্রিষ্টান সমাজ পল্লীর। উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিস ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বীদের ধর্মীয় উৎসব ‘শুভ বড়দিন’ উদ্যাপন উপলক্ষে আগৈলঝাড়া উপজেলার ৬৯টি গীর্জার প্রত্যেকটিতে সরকারীভাবে ২২ হাজার তিন‘শ ৮৩ টাকা বরাদ্দ করা হয়। জেলা প্রশাসক বরাবরে গীর্জা বা চার্চ প্রধানদের আবেদন অনুযায়ি বরাদ্দকৃত অর্থ ৬৯টি গীর্জা ও সমাজ প্রধানদের অনুকুলে প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিস থেকে ২০২০ ইং সালের ২৩ ডিসেম্বর অনুদানের চেক প্রদান করেন স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তা ও জনপ্রতিনিধিরা। গীর্জা বা সমাজ প্রধান হিসেবে রাজিহার খ্রিষ্টান সমাজের (ক্যাথলিক চার্চের) অনুকুলে ওই খ্রিষ্টান পল্লী সভাপতি সুশান্ত সরকার প্রশাসনের কাছ থেকে ২৩ ডিসেম্বর সরকারী অনুদানের ২২ হাজার তিন‘শ ৮৩ টাকার চেক গ্রহন করেন। অপরদিকে একই খ্রিষ্টান পল্লীর কথিত সভাপতি সেঁজে রাজিহার গ্রামের মার্সেল হালদার “রাজিহার ক্যাথলিক চার্চের” নামে গত ৭ জানুয়ারি প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিস থেকে ২২ হাজার তিন‘শ ৮৩ টাকার চেক গ্রহন করেন এবং টাকা উত্তোলন করে আত্মসাৎ করেন। স্থানীয় সূত্রে আরও গেছে, চার্চ প্রধানদের সরকারী অনুদান গ্রহনের জন্য স্ব-স্ব ইউনিয়নের চেয়ারম্যানদের প্রত্যয়নপত্র, জাতীয় পরিচয়পত্র, ফোন নম্বর প্রদান পূর্বক অনুদানের চেক নিতে হয়েছে। সেখানে রাজিহার ইউপি চেয়ারম্যান একই এলাকার একই গীর্জার অনুকুলে দু’জনকে কিভাবে গীর্জা প্রধান বা সভাপতির প্রত্যয়ন দিলেন তা নিয়েও প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। এবিষয়ে রাজিহার খ্রিষ্টান সমাজের (ক্যাথলিক চার্চের) সভাপতি সুশান্ত সরকার জানান, সরকারীভাবে ২২ হাজার তিন‘শ ৮৩ টাকা অনুদান উত্তোলন করে তা বড়দিন উৎসব উদযাপনে খরচ করেছেন। কিন্তু মার্সেল হালদার অনুদানের টাকা গ্রহন করেছেন তা তাদের কমিটির কারো জানা নেই। প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মোঃ মোশাররফ হোসেন জানান, রাজিহার ইউনিয়ন চেয়ারম্যানের প্রত্যয়ন করা ব্যক্তিকে তিনি অনুদারে চেক প্রদান করেছেন। একই চার্চের নামে দুইবার সরকারী অনুদান গ্রহন করা কথিত সভাপতি মার্সেল হালদারকে সরকারী টাকা ফেরত দিতে বলা হয়েছে। রাজিহার ক্যাথলিক চার্চের কথিত সভাপতি মার্সেল হালদার জানান, তিনি সভাপতি থাকা অবস্থায় অনুদানের আবেদন করেছিলেন। বর্তমান সভাপতি সুশান্ত সরকার ও সমাজের লোকজন তাকে অনুদানের টাকা উত্তোলন করতে বলায় তিনি উত্তোলন করেছেন। সভাপতি সুশান্তর আগে টাকা উত্তোলনের কথা তিনি জানতেন না। তিনি আরও জানান, সুশান্ত যে টাকা উত্তোলন করেছে তা দিয়ে তিনি সমাজের কোন কাজে ব্যবহার করেননি। তিনি ওই টাকা দিয়ে আগামী মেম্বর নির্বাচনের জন্য তার অনুসারি লোকজনদের দাওয়াত করে ভুরিভোজ করিয়েছেন। তাতে খ্রিষ্টান সমাজের কোন লোক দাওয়াত পায়নি। টাকা উত্তোলনের বিষয়টি ভুল হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, বুধবার সরকারী অনুদানের সমপরিমান ২২ হাজার তিন‘শ ৮৩ টাকা আগৈলঝাড়া সোনালী ব্যাংকের মাধ্যমে উপজেলা পরিষদের ০৩০১২০০০০০০১২ হিসাব নম্বরে জমা দিয়েছেন। যার রশিদ নং- খ৪৮৬৭৩৬। ঘটনার জন্য ইউএনও বরাবরে ক্ষমা চেয়ে বুধবার লিখিত জবাব দেয়া হয়েছে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ আবুল হাশেম জানান, একই ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের নামে দুই ব্যক্তি অনুদানের টাকা গ্রহন করায় তাদের কাছে লিখিত বক্তব্য চাওয়া হয়েছে। চেয়ারম্যানের কাছেও বক্তব্য চাওয়া হবে জানিয়ে তিনি আরও জানান, বিষয়টি আসলে একটি প্রতারনা। তাদের লিখিত বক্তব্য পাওয়ার পরেই পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
Leave a Reply