খোন্দকার কাওছার হোসেন ॥ বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে খুলনা ও গাজীপুরের মত কারচুপি করতে চাইলে বরিশালের মানুষ তা মেনে নেবে না। বড় আন্দোলনের মুখে পড়বে সরকার। যা আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য বড় ইস্যু হয়ে দাড়াতে পারে। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে নগরীর এক নম্বর ওয়ার্ডের পশ্চিম কাউনিয়ায় নিজ বাসভবনে দখিনের খবরের সঙ্গে একান্ত সাক্ষাতকারে বিএনপি মনোনীত ধানের শীষের প্রার্থী এ্যাডভোকেট মজিবর রহমান সারোয়ার এসব কথা বলেন। তার সঙ্গে সাক্ষাতকারটি প্রশ্নউত্তর আকারে সাজানো হল।
দখিনের খবর : বর্তমানে নির্বাচনের পরিবেশ কেমন বলে মনে করছেন?
মজিবর রহমান সরোয়ার : বিরোধী নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার চলছে, আতঙ্ক রয়েছে, মানুষের আতঙ্ক দুর হয় নাই। আচরন বিধি লংঘন চলছে। নির্বাচন কমিশনকে আচরন বিধি লংঘনের বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে বলেছি কিন্তু তারা গায়ে মাখছে না। ইসির যদি তৎপরতা থাকতো তবে মানুষের মনের শঙ্কা কেটে যেত। এরই মধ্যে পুলিশ কমিশনারের গায়ে হাত দেয়া হয়েছে, এতে মানুষের মনে ধারণা জন্মেছে এরা (আওয়ামী লীগ) বুঝি সবই পারে। এখনও মানুষের মনে আতঙ্ক রয়েছে। সুষ্ঠু ভোট নিয়েও শঙ্কা রয়েছে। আমি নির্বাচন কমিশনকে বলেছি, নির্বাচনের দিন সকালে ব্যালট পেপার কেন্দ্রে পাঠাতে কিন্ত ইসি তাতে রাজি হয়নি। সবারই প্রশ্ন ভোটের দিন কী হবে।
দখিনের খবর : আপনার জনসংযোগে কোন প্রতিবন্ধকতা তৈরি হচ্ছে কিনা ?
মজিবর রহমান সরোয়ার : না আমার চলায় কোন প্রতিবন্ধকতা তৈরি হচ্ছে না। তবে আমার পক্ষে যারা প্রচারনা চালাচ্ছে তাদেরকে বাঁধা দেয়া হচ্ছে। তারা ঠিকমত কাজ করতে পারছেন না। তবে আজই (বৃহস্পতিবার) ৬ নম্বর ওয়ার্ডে গণসংযোগকালে রাস্তায় দাড়িয়ে টেলিভিশন রিপোর্টাররা আমার বক্তব্য নিচ্ছিলেন এটা দেখে নৌকার প্রচারে ব্যবহৃত মাইকটি আমার দিকে ফিরিয়ে প্রচারনা চালাতে থাকে, যাতে আমি ঠিকমত কথা বলতে না পারি। এটাকে আপনি কিভাবে দেখবেন। এখন নিয়ন্ত্রিত আইন ইচ্ছা করলেও আমি দুইটার আগে প্রচারণা চালাতে পারবো না, আইনে উঠান বৈঠকের কথা বলা হয়েছে, আমি সিটিতে উঠান পাব কোথায়। সবদিকে একটা কাটসাট ব্যাপার।
দখিনের খবর : আপনি জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ঘোষণা দিয়েছিলেন, মেয়র প্রার্থী হলেন কেন?
মজিবর রহমান সরোয়ার : নির্বাচনতো আমার স্বাধীনতায় হয় না। দলের সিদ্ধান্তে আমাকে নির্বাচন করতে হয়। দলের সিদ্ধান্ততো আমাকে মানতে হবে।
দখিনের খবর : তফসিলের পরে আপনি ভোটে নেমেছেন সেক্ষেত্রে আপনি পিছিয়ে আছেন কি না ?
মজিবর রহমান সরোয়ার : প্রচারণায় পিছিয়ে থাকা আর জনগনের মধ্যে থাকাতো এক কথা না। আমি জনগণের মধ্যে আছি, জনগণের মধ্যে আমার কাজ সব সময়ই চলছে। স্কুল কলেজ, মাদ্রাসা, মসজিদ, মন্দিরে আমার কাজ চলছে দীর্ঘ বছর ধরে। যা আমার প্রচারণায় কাজ করে। রাস্তায় রাস্তায় ঘোরলে আমার সঙ্গে জনগনের দেখা হয়, কাজ হয়। দীর্ঘদিন আমি এ এলাকার সংসদ সদস্য ছিলাম। প্রথম নির্বাচিত মেয়র আমি। আমার সময়ে বরিশালে যে উন্নয়ন হয়েছে তা হঠাৎ করে এসে আমার প্রতিপক্ষ এটা পাবে কোথায়। সরকারি উন্নয়নের বাইরে আমার ব্যক্তিগত অর্থে উন্নয়ন এখনও চলছে।
দখিনের খবর : খুলনা ও গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে আপনার দলের অনেক অভিযোগ রয়েছে, বরিশালের নির্বাচন নিয়ে আপনার আগাম ধারণা কী ?
মজিবর রহমান সরোয়ার : খুলনা ও গাজীপুরের মত বরিশালে সম্ভব নয়। এখানে আমি ৫ বার জনগনের ভোটে নির্বাচিত। আমি সাধারণ মানুষের সঙ্গে দীর্ঘদিন জড়িত। হঠাৎ করে তারা (আওয়ামী লীগ) যদি কিছু করে সাধারণ মানুষ তা মেনে নেবে না। বড় ধরণের আন্দোলন তৈরি হবে, ঝুকিতে পড়বে সরকার। প্রতিপক্ষ সাদেক আবদুল্লাহ শক্তিশালী প্রার্থী না হলেও তার বর্তমান অবস্থান শক্তিশালী। তিনি শক্তিশালী পরিবারের সদস্য।
দখিনের খবর : আপনি কি জয়ের জন্য প্রতিযোগীতা করছেন না রাজনৈতিক ইস্যু তৈরি করার জন্য প্রতিযোগীতা করছেন? মজিবর রহমান সরোয়ার : বিজয় নিশ্চিত জেনেই প্রতিযোগীতা করছি। তবে ইস্যু হয়ে যায়। গাজীপুর ও খুলনার নির্বাচনে কিন্তু প্রমান হয়ে গেছে দলীয় সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন হয় না, সম্ভব নয়। এ নির্বাচনে তো সরকার পতন হবে না, তারপরও যদি তারা বাড়াবাড়ি করে তবে তা ভাল হবে না। এটা এখন জাতীয় রাজনীতির পার্ট (অংশ) হয়ে গেছে।
দখিনের খবর : দেশের মানুষ জানে বিরোধী দলকে মেয়র বানালে উন্নয়ন হবে না তারপরও কেন মানুষ বিএনপিকে ভোট দেবে? মজিবর রহমান সরোয়ার : সরকার যে সর্বত্র দলীয়করণ করছে এটা দেশের মানুষ জানে, তারা দেখতে পাচ্ছে। মেয়রের চেয়ারটি রাজনৈতিক, উন্নয়নের সঙ্গে এর কোন সম্পৃক্ততা থাকে না। মানুষ আগে ব্যক্তিকে ভোট দিত এখন মার্কাকে ভোট দেয়। যারা ধানের শীষে ভোট দেবে তাদের দিয়ে নৌকায় ভোট দেওয়াতে পারবেন না। আর যারা নৌকায় ভোট দেবে তাদের দিয়ে ধানের শীষে ভোট দেওয়ানো সম্ভব নয়।
দখিনের খবর : ভোটে ২০ দলীয় জোটের কোন তৎপরতা দেখা যাচ্ছে না, বিশেষ করে জামায়াতে ইসলামীকে, কেন?
মজিবর রহমান সরোয়ার : ২০ দল (একটু দুরে বসা জোটের শরীক লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরানকে দেখিয়ে) আমার সঙ্গে আছে। জামায়াত একটু ভয়ের মধ্যে রয়েছে। তারা গোপনে কাজ করছে। তাদের কাজ অব্যাহত রয়েছে। তাদের সঙ্গে ২০ দলীয় জোটের সমন্বয়ক নজরুল ইসলাম খানকে নিয়ে বৈঠক হয়েছে। জামাত এক সঙ্গে কাজ করছে, করবে।
দখিনের খবর : বর্তমান মেয়র আহসান হাবিব কামাল বিএনপি নেতা, তাকে ব্যর্থ মেয়র হিসেবে মনে করে বরিশালের ভোটাররা, এর দায় আপনার ঘাড়ে পরবে কি না?
মজিবর রহমান সরোয়ার : সরকার যে তাকে কাজ করতে দেয়নি এটা বরিশালের মানুষ জানে। এর প্রভাব বরং সরকারের ঘাড়ে পড়বে বলে আমি মনে করি।
দখিনের খবর : মেয়র নির্বাচিত হলে নগরীর সমস্যাগুলো কিভাবে সমাধান করবেন?
মজিবর রহমান সরোয়ার : আমি এ সিটি করপোরেশনের প্রথম নির্বাচিত মেয়র। সমস্যার সমাধান কিভাবে করতে হয় সে অভিজ্ঞতা আমার রয়েছে। তারপরও ইশতেহারে বিস্তারিত বলেছি। অভিজ্ঞ ও প্রজ্ঞাবানদের নিয়ে সমস্যাগুলোর গুরুত্ব চিহ্নিত করবো, এরপর ধারাবাহিকভাবে তা সমাধানে ঝাপিয়ে পরবো।
দখিনের খবর : সিটি করপোরেশনের অপচয় কিভাবে রোধ করবেন?
মজিবর রহমান সরোয়ার : একান্ত প্রয়োজনীয় না হলে কোন খাতে খরচ করবো না। অপ্রয়োজনীয় খাতগুলো বাতিল করবো।
Leave a Reply