নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ জালজালিয়াতির মাধ্যমে বরিশাল সদর উপজেলার কাশিপুর ইউনিয়নের গণপাড়ায় রেজাউল করিম গংদের ষাটের দশক থেকে রেকর্ডিও ও ভোগদখলিয় প্রায় অর্ধকোটি টাকার সম্পত্তি জাল দলিলের মাধ্যমে অনেকটা আকষ্মিকভাবে জবর দখলের জন্য মরিয়া হয়ে ওঠেছে মেহেন্দিগঞ্জের ভূমিদস্যু তোফাজ্জেল হোসেন ওরফে তোফাজল ও তার ভাই সন্ত্রাসী রুবেল মিয়া। ঘটনাটি প্রকাশ পায় চলতি বছরের ১২ আগস্ট। ঐ দিন ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে আকষ্মিকভাবে সম্পত্তি দলিল মূলে মালিক দাবী করে দখল করতে যায় ভূমিদস্যু তোফাজ্জেল ও তার ভাই রুবেল। জমিতে নামলেই প্রকৃত মালিকরা বাঁধা দেয় এবং জবরদখলকারীদের নিকট কাজপত্র দেখতে চাইলে তারা তা দেখাতে পারেনি। এক পর্যায় উভয় পক্ষের মধ্যে চরম উত্তেজনা সৃষ্টি হলে বিমাবন্দর থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনে। এরপর ভূমিদ্যুরা জমি থেকে পিছু হটে।
জানা গেছে, বরিশাল সদর উপজেলার ২ নং কাশিপুর ইউনিয়নের অন্তর্গত জে.এল ১২ নং গণপাড়া মৌজার এস.এ ৪০৮, ৪০৯, ও ৭০২ নং খতিয়ানের ভূমিতে রেকর্ডিও অনিল রতন চক্রবার্তী মালিক দখিলকার থাকাকালীন তৎসম্পত্তি মোকাম বরিশাল প্রথম সাব জজ আদালতে ১৯৬০সনের ১২ নং দেওয়ানী মোকদ্দমার রায় প্রাপ্তে ডিক্রি মূলে রেজাউল করিম, হেমায়েত উদ্দিন মাঝি, সামছুল হক মাঝি মালিক হইয়া তৎসম্পত্তি মোকাম বরিশাল সার্কেল অফিসার রাজস্ব আদালতে ১৯৬৩-১৯৬৪ সনের ৫৪ ধারার বিধান মতে ৫৮০৮ কেটি নং জমাখারিজ মোকদ্দমার ইং ৩১/০৩/১৯৬৪ তারিখের আদেশ মোতাবেক রেকর্ড সংশোধন করাইয়া সৃজিত এসএ ৮১২ নং খতিয়ান খুলিয়া তাহাতে রেকর্ড সুত্রে রেজাউল করিম, সামছুল হক মাঝি মালিক দাখিলকার থাকাকালীন তাহাদের নিকট হইতে মোকাম বরিশাল সদর জয়েন্ট সাব রেজিস্ট্রি অফিসের বিগত ইং ১৪/১০/১৯৬১ তারিখের ৯৩২৩ নং রেজিস্ট্রিকৃত দলিল মূলে মালিক হন তোফাজ্জেল হোসেন ওরফে তোফাজল। ক্রয়কৃত রেকর্ডিও জমির পরিমান ঃ ২৯.৩৪ শতাংশ।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ভূমিদস্যু তোফাজ্জেল হোসেন ওরফে তোফাজল জালজালিয়াতির মাধ্যমে উক্ত সম্পত্তি পাকাপোক্ত করতে চলতি বছরের ১০ জানুয়ারী মাসে ছোট ভাই সন্ত্রাসী ভূমিদস্যু মোঃ রুবেল মিয়ার কাছে বিক্রি করে। যার দলিল নং ৩৯৯, তারিখ ঃ ১০/০১/২০১৮ ইং। বিষয়টি আদালত পর্যন্ত গড়ালে বেড়িয়ে আসে থলের বিড়াল। রুবেল মিয়ার দলিল পর্যালোচনা করে দেখা যায়, মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলার উলানিয়া ইউনিয়নের তেতুলিয়া গ্রামের মরহুম মনসুর আহম্মেদের পুত্র তোফাজ্জেল হোসেন ওরফে তোফাজল, জন্ম ঃ ১৯৫৭ সালের ১৫ জুন। অর্থাৎ তোফাজল উল্লেখিত সম্পত্তি যখন ক্রয় করেন তখন তার বয়স মাত্র ৪ বছর ৪ মাস ১দিন। স্থানীয়দের প্রশ্ন পিতা জীবিত না থাকা অবস্থায় মাত্র ৪ বছর বয়সে কি করে তোফাজ্জেল হোসেন ওরফে তোফাজল জন্মস্থান মেহেন্দিগঞ্জ থেকে বরিশালের কাশিপুর এসে জমি ক্রয় করলেন? খোঁজ নিয়ে আরও জানা গেছে, তোফাজ্জেল হোসেন ওরফে তোফাজল তার ভাই মোঃ রুবেল মিয়াকে চলতি বছরের ১০ জানুয়ারী যে দলিল দিয়েছেন তাতে তিনি যে রেজিস্ট্রিকৃত দলিল নম্বর ৯৩২৩ উল্লেখ করেছেন তাহারও কোন হদিস পাওয়া যাচ্ছে না। অর্থাৎ সাবরেজিস্ট্রি অফিসে উক্ত নম্বরের কোন দলিলের আলামত অদ্যাবধি খুঁজে পাওয়া যায় নাই। এখানেই ফাঁস হয়ে যায় ভূমিদস্যু তোফাজ্জেল হোসেন ওরফে তোফাজল’র জালজালিয়াতির ঘটনা।
তোফাজ্জেল হোসেন ওরফে তোফাজল এর জমির কাগজপত্র পর্যালোচনা করে আরও জানা যায়, চলতি বছরে তার ভাই রুবেল মিয়াকে দলিল দেওয়ার পর রুবেল মিয়া তা দাখিল করে সদর এ্যাসিল্যান্ড থেকে নামজারি করে রেকর্ড করে নেয়। এখানেও রুবেল মিয়া ও তোফাজ্জেল হোসেন ওরফে তোফাজল ব্যাপক জালিয়াতি করেছেন। নামজারি করার সময় যে পর্চা দাখিল করা হয়েছে তাও ভূয়া, এমনকি তোফাজ্জেল হোসেন ওরফে তোফাজল উক্ত সম্পত্তির দলিল মূলে মালিক হয়েছেন সেই দলিলটিও এ্যাসিল্যান্ড অফিসে দাখিল করেন নাই। জমির প্রকৃত মালিকদের প্রশ্ন রুবেলের দলিলের সাথে তোফাজ্জেল হোসেন ওরফে তোফাজল’র দলিল দাখিল না করে কিভাবে রুবেলের নামে নাজারি করা হলো। এছাড়া খোঁজ নিয়ে আরও জানা গেছে, রেকর্ড রুমের রেকর্ড থাকলেও কাশিপুর তহশিল অফিসে এখনও জমির প্রকৃত মালিক রেজাউল করিম, সফিজদ্দিন বেপারী, হেমায়েত উদ্দিন ও সামছূল হকদের নামে এখনও রেকর্ড রয়েছে।
জমির প্রকৃত মালিক রেজাউল করিমের জেষ্ঠ পুত্র হুমায়ুন কবির জানায়, আমরা মোঃ রুবেল মিয়ার নামে নামজারির বিরুদ্ধে মামলা করেছি। এছাড়া জালজালিয়াতির অভিযোগে তোফাজ্জেল হোসেন ওরফে তোফাজল ও তার ভাই রুবেল মিয়াসহ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে মামলা করার প্রস্তুতি নিয়েছি।
Leave a Reply