নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ বরিশাল নগরীর স্যানিটারি ও টাইলসের প্রতিষ্ঠিত এক ব্যবসায়ীকে একের পর এক মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। নগরীর রুপাতলীর হাউজিংয়ের নগর প্লাজার জসিম খান নামে স্যানিটারী ও টাইলস ব্যবসায়ী একাধিক মিথ্যা মামলায় জর্জরিত হয়ে এখন ব্যবসায় ক্ষতির পাশাপাশি প্রতিনিয়ত আদালতের বারান্দায় ঘুরে ঘুরে সময় পাড় করছেন। এলাকাবাসীর কাছে মামলাবাজ হিসেবে চিহিৃত নগর প্লাজার মালিক আব্দুল মান্নানের বিরুদ্ধে গুরুতর এই অভিযোগ। তিনি ব্যবসায়ী জসিম খানের ঘর মালিক। এছাড়াও আব্দুল মান্নান বরিশাল মহানগরের ২৪নং ওয়ার্ড জামায়াতের দায়িত্বশীল নেতা। অভিযোগ রয়েছে- অদৃশ্য ক্ষমতা প্রয়োগ করে মামলাবাজ জামায়াত নেতা আব্দুল মান্নান নগরীর ২৪ ও ২৫ নম্বর ওয়ার্ড এলাকায় আদালত কর্তৃক নিষিদ্ধ জামায়াতের দাওয়াতি কার্যক্রম পরিচালনা করার পাশাপাশি সাধারণ ব্যবসায়ী ও বাসিন্দাদের অহেতুক হয়রানি করছেন। জামায়াত নেতার অব্যহত মিথ্যা মামলা থেকে রক্ষা এবং নিষিদ্ধ জামায়াতের ক্যাডার বাহিনীর হুমকি থেকে রক্ষা পেতে ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী জসিম খান আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং প্রশাসনের উর্ধ্বতন মহলের হস্তক্ষেপ কামনা করছেন। এদিকে জামায়াত নেতা মান্নানের হয়রানির শিকার স্থানীয় একাধীক ব্যবসায়ী আদালত, পুলিশ এবং স্থানীয় জন প্রতিনিধিদের দ্বারস্থ হয়ে সুষ্ঠু নিস্পত্তি করার পরও তিনি তা অমান্য করে একই অভিযোগে আবারও হয়রানির করার আশ্রয় নেয়। ফলে তিনি এখন ওই এলাকায় মামলাবাজ হিসেবে খেতাব পেয়েছেন। মিথ্যা মামলায় হয়রানির শিকার ভুক্তভোগি স্যানিটারী ও টাইলস ব্যবসায়ী জসিম খান গনমাধ্যম কর্মীদেরকে অভিযোগ করে বলেন- ২০১৩ সাল থেকে তিনি অত্যন্ত সুনামের সাথে রুপাতলি হাউজিংয়ের নগর প্লাজার ভবন মালিক আব্দুল মান্নান এর মার্কেটে ব্যবসা পরিচালনা করে আসছেন। ব্যবসা পরিচালনাকালে ভবন মালিক বিভিন্ন সময় তার কাছ থেকে ধার বাবদ টাকা লেনদেন করেন। এসময় তার সাথে ভালো সম্পর্ক স্থাপন হয়। সু-সম্পর্ক স্থাপনের একপর্যায়ে গত ২০১৯ সালের মাঝামাঝি সময় ভবন মালিক আব্দুল মালিক আদালত কর্তৃক নিষিদ্ধ বাংলাদেশ জামায়াত ইসলামীতে যোগ দেওয়ার জন্য তার বাস ভবনে ডেকে নিয়ে তার (ভাড়াটিয়া জসিম খান) কাছে একটি ফরম নিয়ে আসে। এসময় আবদুল মান্নান ওই ফরম পুরন করার জন্য জসিম খানকে প্রস্তাব করেন এবং আরও ৫০জনকে যোগদান করিয়ে দেওয়ার জন্য বলেন। কিন্তু তার সেই প্রস্তাবে জসিম রাজি না হয়ে তিনি নাখোশ হয়। এবং কিছুদিন যেতে না যেতেই তার দোকানে তালা ঝুলিয়ে দেয়া হয়। এবং বলা হয় জামানতের টাকা দেওয়া হবেনা। বিষয়টি সমাধানের জন্য ব্যবসায়ী জসিম স্থানীয় গন্যমান্য ব্যাক্তিবর্গ ও স্থানীয় কাউন্সিলর এর দ্বারস্থ হন। কাউন্সিলর স্থানীয়দের নিয়ে বিষয়টি মিমাংসা করে দেওয়ার পরও ভবন মালিক আব্দুল মান্নান তা অমান্য করে তিনি তার অবস্থানে অনড় থাকেন। এরপর জসিম খানের বিরুদ্ধে একের পর এক দেওয়া হয় পাঁচটি মিথ্যা মামলা। নগরীর ২৫ নম্বর ওয়ার্ডস্থ রুপাতলী এলাকার মৃত আছমত আলী খানের ছেলে জসিম খান আরও বলেন, নগর প্লাজার মালিক আবদুল মান্নানের দোকান ভাড়া গ্রহনকালে তাকে অগ্রিম জামানত হিসেবে ২৯ লক্ষ টাকা জমা দেই এবং প্রতিমাসে ১২ হাজার টাকা ভাড়া এবং ২০১৯ সালের ৩০ অক্টোবর তারিখ পর্যন্ত দুই পক্ষের মধ্যে চুক্তিনামায় উভয়ের স্বাক্ষর হয়। প্রথম চুক্তির মেয়াদ শেষে আমার অগ্রিম জমা ২৯ লক্ষ টাকা গ্রহণ করে তার দোকান ঘরের ভাড়ার টাকা সম্পূর্ণ পরিশোধসহ দোকান ঘর চাই। বিষয়টি লিখিত এবং মৌখিকভাবে ভবন মালিক আব্দুল মান্নানকে জানাই। এতে সে ক্ষিপ্ত হয়ে গভীর রাতে দোকান তালাবদ্ধ করে রাখে। পরে স্থানীয় কাউন্সিলরসহ স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের জানালে তারা ঘটনাস্থলে এসে দোকানে তালা ভেঙে আমাকে দোকান বুঝিয়ে দেন। এতে ক্ষীপ্ত হয়ে কিছুদিন পর ভবন মালিক দোকানের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে। হয়রানিমূলক মামলার শিকার জসিম খান জানান, ব্যবসার জন্য পরিচিত স্থানীয় বিভিন্ন লোকজন আত্মীয় স্বজন ও বরিশাল নগরীর একাধীক ব্যাংক থেকে আমার সম্পত্তি (জমি) মর্গেজ রেখে ঋন গ্রহণ করি। এদিকে দোকানের বিদ্যুৎ লাইন কেটে দেওয়ার পর বিষয়টি অবহিত করে কোতয়ালি মডেল থানায় সাধারন ডায়েরি করে জসিম খান। যার নং-৪৮২, তারিখ ১০ জানুয়ারি ২০২০ইং। পরে বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ দোকানে বিদ্যুৎ লাইন পুনঃস্থাপন করে। এর কিছুদিন পর জামায়াতের একাধীক ক্যাডার বাহিনী দোকানে এসে জসিমকে দেখে নেওয়ার হুমকি দিয়ে গালমন্দ করে। এসময় প্রতিবাদ করায় তারা আমাকে মারধর করে। এই ঘটনায় বরিশাল বিজ্ঞ সদর সিনিয়র জজ আদালতে ‘বাড়ি ভাড়া’ নিয়ন্ত্রণ আইনে একটি আদালতে মামলা দায়ের করে জসিম। গতবছর করোনা মহামারীকালে ব্যবসায় ধ্বস নেমে অনেক টাকার ক্ষতি হওয়া সত্ত্বেও আদালতের নির্দেশে মাসিক ১২ হাজার টাকা করে নিয়মিত পরিশোধ করা হয়। তারপরও ভবন মালিক আব্দুল মান্নান এবং তার ছেলে ডা: মো. জিয়াউল হক মিলে বরিশাল আদালতে মিথ্যা অভিযোগে হয়রানিমূলক পাঁচটি মামলা দায়ের করে। যার মধ্যে দুটি ইতিমধ্যে আদালত কর্তৃক খারিজ করা হয়েছে। ব্যবসায়ী জসিম বলেন, আব্দুল মান্নান এমন একজন মামলাবাজ ব্যক্তি যিনি আমাকে ঘায়েল করা জন্য একটার পর একটা মিথ্যা মামলা দিয়ে আদালতের বারান্দায় ঘুরাচ্ছেন। তার উত্থাপিত অভিযোগ একস্থান থেকে মিথ্যা প্রমানিত হয়ে নিস্পত্তি হলে তিনি আরেকটি মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে অভিযোগ দ্বার করিয়ে মামলা দিয়ে হয়রানি অব্যহত রেখেছেন। এ বিষয়ে অভিযুক্ত দোকান মালিক জামায়াত নেতা আবদুল মান্নান জামায়াতের সাথে জড়িত নয় অভিযোগকে অস্বীকার করে বলেন, আমার বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগগুলো মিথ্যা। তবে, ব্যবসায়ী জসিম খানকে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি সঠিক কোনো জবাব না দিয়ে ব্যবসায়ী জসিমকে “বদমাইশ” বলে বেফাঁস মন্তব্য করেন।
Leave a Reply