অনলাইন ডেক্স ॥ ভোরের স্নিগ্ধতায় সবুজ পাতার ওপর শিশির বিন্দু। ঘাসের ওপর ঝরা শিউলির মিষ্টি সুবাস। নদীর তীরে মৃদু মন্দ হাওয়ায় ভেসে বেড়াবে কাশফুলের পাপড়ি। আকাশে শুভ্র সফেদ মেঘের আনাগোনা। শেষ রাতে হালকা হিমেল পরশ। প্রকৃতিতে ঋতুরানি শরতের এমনই অসাধারণ চরিত্রই ফুটে ওঠার কথা এখন। কিন্তু মধ্য আশ্বিনেও সূর্যের তাপে পুড়ছে রাজশাহী! দিনের গড় তাপমাত্রা ৩৪ থেকে ৩৬ ডিগ্রি তাপমাত্রার মধ্যে ওঠানামা করছে। প্রকৃতি যেন তপ্ত নিঃশ্বাস ছাড়ছে।
ফলে টানা তাপদাহে কাহিল হয়ে পড়েছে পদ্মাপাড়ের মানুষ। গরমের তীব্রতায় পশু-পাখিরাও হাঁসফাঁস করছে। প্রচ- গরমে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে এই নগরের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। বিশেষ করে শিশু ও বৃদ্ধরা যেন দুর্বিষহ দিন পার করছেন। ঘরে বাইরে কোথাও স্বস্তি নেই। প্রখর রোদে মাটি ফেটে চৌঁচির হয়ে যাচ্ছে। এর ওপর গত কয়েকদিন থেকে শহরের অধিকাংশ এলাকায় পাল¬া দিয়ে বেড়েছে লোডশেডিং। ফলে সব কাজেই স্থবিরতা নেমে এসেছে। দুপুর ১২টা গড়াতেই রাস্তাঘাট জনশূন্য হয়ে যাচ্ছে। আগুনমুখো আবহাওয়ার কারণে খাঁ খাঁ করছে রাজশাহীর রাজপথ। কর্মজীবী মানুষ ছাড়া কেউই খুব জরুরি কাজ না থাকলে বাড়ির বাইরে বের হচ্ছে না। যারপরনাই ভোগান্তিতে থাকা মানুষের মধ্যে বৃষ্টির জন্য হাহাকার পড়ে গেছে। তবে কাঙ্খিত বৃষ্টির দেখা নেই। গত ২১ সেপ্টেম্বর সর্বশেষ বৃষ্টি হয়েছে রাজশাহীতে, তাও পরিমাণে কম। আবহাওয়া অফিসের হিসেবে শূন্য দশমিক ৭ মিলিমিটার। তাপমাত্রা বাড়ায় ঘরে ঘরে ডায়রিয়া, জ্বর, সর্দি-কাশিসহ বিভিন্ন উপসর্গে আক্রান্তের সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। এসব রোগে বৃদ্ধ-বৃদ্ধা ও শিশুরাই বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। পাশাপাশি উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্তদের দুর্ভোগ বেড়েছে তীব্র গরমে।
রাজশাহী আবহাওয়া অফিসের জ্যেষ্ঠ পর্যবেক্ষক দেবল কুমার মৈত্র বাংলানিউজকে জানান, বর্তমানে রাজশাহীর ওপর দিয়ে মাঝারি তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। রোববার (৩০ সেপ্টেম্বর) বেলা সাড়ে ৩টায় মহানগরীতে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে, ৩৫ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এদিন সকালে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ২৫ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সকালে বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ৯৬ শতাংশ এবং বিকেল ৩টায় ৪৭ শতাংশ। গত এক সপ্তাহ থেকে তাপমাত্রা ৩৪ থেকে ৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে ওঠানামা করছে। এর মধ্যে গতকাল ২৯ সেপ্টেম্বর ছিল ৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ২৮ সেপ্টেম্বর ছিল ৩৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস ও ২৭ সেপ্টেম্বর ছিল ২৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
জানতে চাইলে আবহাওয়া কর্মকর্তা দেবল কুমার মৈত্র বলেন, প্রকৃতির হিসেবে এ সময় এমন আবহওয়া থাকার কথা নয়। তবে জলবায়ুর পরিবর্তনের প্রভাবে আবহাওয়া এমন খামখেয়ালি আচরণ করছে। যার বিরূপ প্রভাব পড়ছে প্রাণিকূলে।
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. আবুল কালাম আজাদ বাংলানিউজকে বলেন, এই গরমে ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা কিছুটা বেড়েছে। এছাড়া হৃদরোগ ও উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত হয়ে রোগীর ভর্তির সংখ্যাও বাড়ছে। আর ইনডোরে জ্বর, সর্দি-কাশিসহ বিভিন্ন উপসর্গে আক্রান্ত হয়েও রোগীরা চিকিৎসা নিচ্ছেন। তাই এসময় রোদ এড়িয়ে চলতে এবং পরিমাণ মতো বিশুদ্ধ পানি পান ও ফলমূল খাওয়ার পরামর্শ দেন হাসপাতালের এই চিকিৎসক।
Leave a Reply