দখিনের খবর ডেস্ক ॥ সকাল ৯টা। কিন্তু সূর্যের দেখা নেই। ঘন কুয়াশার চাদরে পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (পবিপ্রবি) পুরো ক্যাম্পাস মোড়া। ফগ লাইট কুয়াশা ভেদ করে পাজেরো গাড়ি উপাচার্যের কার্যালয়ের দিকে এগিয়ে চলছে। কাছে আসতে বোঝা গেল, সেটি রেজিস্ট্রারের। কিন্তু গাড়িতে উপাচার্যের পতাকা লাগানো নিয়ে যে কারোর মধ্যে ভুলের সৃষ্টি হওয়টাই স্বাভাবিক। তবে গাড়ির ভেতরে থাকা ব্যক্তিটি বেরিয়ে আসার পর সব ভুলের অবসান ঘটল। চালক প্রশাসনিক ভবনের সামনে গাড়িটি দাঁড় করালেন। দরজা আলতো করে খুলে ধরলেন। অধ্যাপক ড. স্বদেশ চন্দ্র সামন্ত যখন নেমে পড়লেন, তখন বোঝা গেল পবিপ্রবির রেজিস্ট্রার আসছেন। কিন্তু উপাচার্যের পতাকা তার গাড়িতে কেন? এমনটি ভাবতে ভাবতে ভবনের প্রবেশদ্বারে দাঁড়িয়ে থাকা গার্ড বলেই ফেললেন স্বদেশ স্যার সম্প্রতি উপাচার্যের রুটিন দায়িত্ব পেয়েছেন। প্রায় চার বছর ধরে অধ্যাপক ড. স্বদেশ চন্দ্র সামন্ত রেজিস্ট্রারের অতিরিক্ত দায়িত্বে রয়েছেন। অধ্যাপক ড. স্বদেশ চন্দ্র সামন্ত জানান, পবিপ্রবির উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. হারুনর রশীদ ৪ জানুয়ারি তার মেয়াদ পূর্ণ করেছেন। তাই উক্ত শূন্যপদে পরবর্তী উপাচার্য নিযুক্ত না হওয়া পর্যন্ত প্রশাসনিক প্রয়োজনে অন্তর্র্বতীকালীন ব্যবস্থা হিসেবে পবিপ্রবির জ্যেষ্ঠ ডিন হিসেবে আমাকে দৈনন্দিন রুটিন দায়িত্ব পালনের জন্য মন্ত্রণালয় থেকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আদেশের চিঠি আমি ৬ জানুয়ারি পেয়েছি। সেই থেকে দায়িত্বে রয়েছি। যারা আছেন উপাচার্যের তালিকায়: উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. হারুনর রশীদ ৪ জানুয়ারি তার মেয়াদ পূর্ণ করেছেন। তার আগেই বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন থেকে উপার্যের সম্ভাব্য একটি তালিকা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। মঞ্জুরি কমিশনের শীর্ষপর্যায়ের এক কর্মকর্তা বলেছেন, তালিকার শীর্ষে রয়েছেন পবিপ্রবির জ্যেষ্ঠ অধ্যাপক আ ক ম মোস্তফা জামান। তিনি শুধু জ্যেষ্ঠই নন, তার কাজের দক্ষতা, সততার কারণে প্রশাসনিকভাবে তাকেই উপাচার্য হিসেবে নিয়োগের জন্য অভ্যন্তরীণ একটি সভায় সুপারিশ করা হয়েছে। তবে অন্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উপাচার্য নিয়োগও হতে পারে বলে মঞ্জুরি কমিশনের সূত্রটি জানিয়েছে। মঞ্জুরি কমিশনের সূত্র ধরে ক্যাম্পাসে খোঁজ নিয়েও আ ক ম মোস্তফা জামানের ব্যাপারে পজিটিভ তথ্য মিলেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সংকট কিংবা ভালো কাজে ঘুরেফিরে উপাচার্যরা মোস্তফা জামানকেই সামনের সারিতে নিয়ে আসেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বার্থে দাপ্তরিক কাজ করতে গিয়ে মোস্তফা জামানকে অনেক কঠোর সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে। এতে করে ক্যাম্পাসে কতিপয় কর্মকর্তা-কর্মচারী, এমনকি হাতে গোনা কিছু শিক্ষক ভেতরে ভেতরে তার কাজের বিরোধিতা করছেন। এমন বিরোধীরাও এক বাক্যে শিকার করেছেন, মোস্তফা জামানের মতো দক্ষ আর সৎ ব্যক্তি পবিপ্রবিতে দ্বিতীয়টি নেই। মঞ্জুরি কমিশনের তালিকায় আরো দুজনের নাম রয়েছে। এদের একজন হচ্ছেন সাবেক উপ-উপাচার্য অধ্যাপক মোহাম্মদ আলী। আরেকজন হচ্ছেন, অধ্যাপক ড. আবুল কাসেম চৌধুরী। দুজনই আওয়ামী লীগ ঘরাণার রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত। আবুল কাসেম চৌধুরী শিক্ষক সমিতির সভাপতি। শিক্ষক সমিতির নির্বাচনকে ঘিরে আওয়ামী লীগের মধ্যে বিভক্তি দেখা দিয়েছিল। তা ছাড়া মোহাম্মদ আলী উপ-উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. হারুনুর রশীদের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি হয়। এ কারণে মোহাম্মদ আলী অনেকটা কোণঠাসা অবস্থায় ছিলেন। হারুনর রশীদের হ্যাটট্রিক : সদ্য বিদায়ী উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. হারুনর রশীদ। বিলুপ্ত কৃষি কলেজের অধ্যাপক ছিলেন। কলেজ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে উন্নীত হলে তিনি স্বল্প সময়ের জন্য উপাচার্যের রুটিন দায়িত্ব পালন করেছেন। দ্বিতীয় দফায় তিনি গেল ৪ জানুয়ারি উপাচার্যের চার বছরের মেয়াদ পূর্ণ করেছেন। তার মেয়াদে বড় একটি প্রকল্প পাস হয়েছে। কিন্তু সেই প্রকল্পে কাজ শুরুই করতে পারেননি। যদিও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো তালিকায় তার নাম নেই। তবুও তিনি আবারও উপাচার্যের দায়িত্বের (এক্সটেনশন) জন্য চেষ্টা করে যাচ্ছেন বলে ক্যাম্পাসে গুঞ্জন রয়েছে। গুঞ্জনের কারণ খুঁজতে গিয়ে জানা গেল, অধ্যাপক ড. মো. হারুনর রশীদ তার মেয়াদের শেষ সময় এসে কোনো নিয়োগ দিয়ে যাননি। এমনকি স্থানীয়দের চাপের মুখে অনেক নিয়োগ স্থগিত করেছেন। যেহেতু শেষ সময়ে তিনি কোনো বিতর্কে জড়াননি, তাই তার অনুসারী শিক্ষকরা ধারণা করছেন, উপাচার্য হিসেবে তাঁর এক্সটেনশন হতে পারে।
Leave a Reply