দখিনের খবর ডেস্ক ॥ দুর্নীতির মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হয়ে ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি কারাগারে যান বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। তারপর ২৫ মাসের মধ্যে প্রায় অর্ধেক সময় ছিলেন হাসপাতালে। গতবছর ২৫ মার্চ প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ বিবেচনায় সেখান থেকে মুক্তি পেয়ে গুলশানের বাসায় বসবাস করলেও রাজনীতিতে তার কোনো অংশগ্রহণ লক্ষ্য করা যায়নি। যদিও দলের নেতারা দাবি করছেন খালেদা জিয়া এখনও মুক্ত নন। তিনি কারাবন্দি থেকে এখন গৃহবন্দি। দলীয় সুত্র জানায়, আপাতত রাজনীতির দিকে কোনো মনোযোগ নেই এই নেত্রীর। বড় ছেলে লন্ডন প্রবাসী তারেক রহমানের হাতেই দলের হাল ছেড়ে দিয়েছেন। নিজে শারিরীকভাবে সুস্থ না হলে এবং পূর্ণাঙ্গ জামিন না পেলে হয়তো তাকে আর রাজনীতিতে নাও দেখা যেতে পারে। দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, দেশনেত্রী মুক্ত নন। সরকার তাকে মুক্তি দিলেও নানা শর্ত দেওয়ায় তিনি চিকিৎসাও নিতে পারছেন না। সুতরাং তাকে আমরা মুক্তি বলতে পারছি না। তিনি এখনও গৃহবন্দি। সুত্র জানায়, হাইকোর্ট, সুপ্রিম কোর্টে জামিনের আবেদন করে ব্যর্থ হওয়ার পর পারিবারিকভাবে প্রধানমন্ত্রীকে আবেদন জানানো হয়। ওই আবেদনে মানবিক কারণে তার মুক্তি চান পরিবারের সদস্যরা। প্রধানমন্ত্রী তাদের আবেদনে সারা দেন। ফলে ২০২০ সালের ২৫ মার্চ করোনা সংক্রমণের মধ্যে তাকে বিশেষ শর্তে জামিন দেওয়া হয়। প্রথমে তাকে ছয় মাসের জন্য জামিন দেওয়া হয়েছিল। দ্বিতীয় দফায় সেপ্টেম্বরে তার জামিনের মেয়াদ আরও ছয় মাস বাড়ানো হয়েছে। কিন্তু জামিনের প্রধান দুটি শর্ত হলো, তিনি বাড়ি থেকে চিকিৎসা নেবেন এবং নিজ খরচে এই চিকিৎসা করবেন। সরকারি সুত্র বলছে জামিনের শর্তের মধ্যে কোথাও লেখা নেই যে, খালেদা জিয়া রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড করতে পারবেন না কিংবা কোনো বক্তৃতা বিবৃতি দিতে পারবেন না। যদিও দলীয় নেতারা বলছেন সরকার তাকে মুক্তি দিলেও শর্ত দেওয়ায় তিনি রাজনীতিতে সক্রিয় হতে পারছেন না। ২৫ শে মার্চ জামিন পাওয়ার পর দুইবার ঈদে দলের স্থায়ী কমিটির কয়েকজন সদস্যের সাথে সৌজন্য সাক্ষাৎ ছাড়া কোনো রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করেননি খালেদা জিয়া। এসময় শুধুমাত্র দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, আইনজীবী মাহবুব উদ্দিন খোকন এবং তার ব্যক্তিগত সহকারি শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস ও চিকিৎসকরা তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে পেরেছেন। তিনি কোন রাজনৈতিক বক্তৃতা বিবৃতি দেয়া থেকে নিজেকে বিরত রেখেছেন। ২০দলীয় জোটের শরিক নেতারা সাক্ষাতের অনুমতি চেয়েও পাননি। বিএনপির নেতারা দাবি করেন যে, খালেদা জিয়া একরকমের বন্দি জীবন যাপন করছেন এবং সরকার তাকে গৃহবন্দি করে রেখেছে। কিন্তু তাদের এক অংশ মনে করে যে, খালেদা জিয়া আসলে মুচলেকা দিয়ে জামিন নিয়েছেন এবং রাজনীতি না করার শর্তে তিনি জামিন পেয়েছেন। সেজন্যই তিনি রাজনীতি থেকে নিজেকে দূরে রেখেছেন। ১৯৮১ সালের ৩০ মে সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে জিয়াউর রহমানকে হত্যা করা হয়। এরপর সাংবিধানিক ধারায় ক্ষমতায় আসেন ভাইস-প্রেসিডেন্ট বিচারপতি আব্দুস সাত্তার। কিন্তু সাত্তার বেশিদিন ক্ষমতায় থাকতে পারেননি। ১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ এক রক্তপাতহীন সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করেন হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ। এরপর বিএনপিতে সৃষ্টি হয় টানাপোড়ন, দ্বন্দ্ব, অনৈক্য এবং ভাঙ্গনের মুখোমুখি দাঁড়ায় দলটি। এ সময় বিএনপি নেতাকর্মীদের ডাকে সারা দিয়ে খালেদা জিয়া বিএনপির নেতৃত্বে আসেন। আওয়ামী লীগের সঙ্গে যুগপত ভাবে দীর্ঘ নয় বছর স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনের মাধ্যমে দলটি পুনর্গঠিত করেন। ১৯৯১ সালের নির্বাচনে নাটকীয়ভাবে বিএনপি জয়ী হয় এবং বিএনপির এই বিজয় সবাইকে বিস্মিত করে। ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে তারা পরাজিত হয়। ২০০১ এর নির্বাচনে জামায়াতকে সঙ্গে নিয়ে আবারও বিপুলভাবে বিজয়ী হয়। এক এগারো সরকার পরবর্তী ২০০৯ এর নির্বাচনে ভরাডুবির পর খালেদা জিয়া একের পর এক ভুল সিদ্ধান্ত নিতে থাকেন। ২০১৪ তে নির্বাচনে না যাওয়া। গণভবনে সংলাপের জন্য আমন্ত্রণ জানালে তা প্রত্যাখ্যান করা। ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর মৃত্যুর পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাত না দেওয়া ছিল তার বিতর্কিত সিদ্ধান্ত। খালেদা জিয়া এখন রাজনীতিতে আছেন কি নেই সেটি একটি বড় প্রশ্ন। তবে দলীয় নেতারা মনে করেন, রাজনৈতিক পট পরিবর্তন হলে খালেদা জিয়া আবার রাজনীতিতে সক্রিয় হবেন। তিনিই হবেন জাতীয়তাবাদী শক্তির নেত্রী। দলীয় চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার কারাবন্দিত্বের তিন বছর পূর্তিতে সারাদেশে প্রতিবাদ বিক্ষোভ সমাবেশের ডাক দিয়েছে বিএনপি। সোমবার (৮ ফেব্রুয়ারি) সারা দেশে এই কর্মসূচি পালন করবে দলটি।
Leave a Reply