নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বরিশাল-২ আসনে এখন একটাই প্রশ্ন। কে হচ্ছেন এ আসনের বড় দলগুলোর প্রার্থী। ইতিমধ্যে উভয় আসনেই একাধিক হেভিওয়েট প্রার্থীর নাম শোনা যাচ্ছে। নিজ নিজ দলের মনোনয়ন পেতে প্রার্থীরা একদিকে যেমন দলের হাইকমান্ডে লবিং চালিয়ে যাচ্ছেন। অন্যদিকে তৃণমূল পর্যায়ে নেতাকর্মীদের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করে চলার চেষ্টা করছেন তারা। এ আসনে একাধিক প্রার্থীর নাম শোনা যাচ্ছে দলগুলোর মধ্যে।
বরিশাল-২ (উজিরপুর-বানারীপাড়া) আসনের নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন নিশ্চিত করতে ব্যাপক তৎপরতা শুরু করেছেন সম্ভাব্য প্রার্থীরা। ক্ষমতাশীন দল আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীরা প্রকাশ্যে মাঠে নামলেও বিএনপি’র মনোনয়ন প্রত্যাশীরা কেন্দ্রে লবিং চালানোর পাশাপাশি ব্যক্তিগতভাবে মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীদের সাথে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রক্ষা করছেন। এছাড়া জাতীয় পার্টিসহ অন্য দলের নেতারাও নির্বাচনকে সামনে রেখে তৎপর রয়েছেন। ২টি পৌরসভা ১৭টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত বরিশাল-২ (উজিরপুর-বানারীপাড়া) আসন। অবহেলিত গ্রাম-জীবন মানুষ চায় কাঙ্খিত উন্নয়ন। বরিশাল-২ আসনে ৩ লাখ দুই হাজার ৩শ তেত্রিশ ভোটের মধ্যে এক লাখ ৪৯ হাজার ৮৬ জন নারী ভোটার। নতুন ভোটার ৪৩ হাজার ২৭৯। দেশের প্রথম নির্বাচনে এ আসন থেকে বিজয়ী হয় আওয়ামী লীগ প্রার্থী। এরপর তা ফিরে পেতে লেগেছে ৩৬ বছর। স্বাধীনতার পর এই আসনে সবচেয়ে বেশি চারবার সংসদ সদস্য পেয়েছে জাতীয় পার্টি। আওয়ামী লীগ ৩, ওয়ার্কার্স পার্টি ও বিএনপি বিজয়ী হয়েছে দুবার করে। এ আসনের আ’লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীরা হলেন, বর্তমান এমপি জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তালুকদার মো. ইউনুস। তবে তিনি বরিশাল-৫ (মহানগর-সদর) থেকেও মনোনয়ন চাইতে পারেন। ইউনুস ছাড়াও দলের সমর্থন পেতে প্রার্থিতার দৌড়ে আছেন আওয়ামী লীগের হাফ ডজন নেতা। সাবেক এমপি মনিরুল ইসলাম মনি, আওয়ামী লীগের সাবেক কেন্দ্রীয় সদস্য হাবিবুর রহমান খান, ছাত্রলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি শাহে আলম তালুকদার, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক ছাত্রলীগ নেত্রী রুবিনা মিরা, বানারীপাড়া উপজেলা চেয়ারম্যান গোলাম ফারুক, শিল্পপতি ক্যাপ্টেন এম. মোয়াজ্জেম হোসেন বাবলু এবং শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হকের দৌহিত্র ফাইয়াজুল হক রাজু দলীয় মনোনয়ন পেতে ইতোমধ্যে গণসংযোগ শুরু করেছেন।
অপরদিকে এ আসনে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশীর তালিকায় রয়েছেন দলের নির্বাহী কমিটির সদস্য বরিশাল জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি ও বানারীপাড়া উপজেলা বিএনপির সভাপতি এস. সরফুদ্দিন আহমেদ সান্টু। এ আসনে ২০ দলীয় জোট থেকে সান্টুর মনোনয়ন অনেকটা নিশ্চিত। এছাড়া মনোনয়ন দৌড়ে রয়েছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, জাতীয় প্রেসক্লাবের যুগ্ম সম্পাদক ও সাংবাদিক নেতা ইলিয়াস খান এবং বিএনপির কেন্দ্রীয় সহ-বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক রওনক ইসলাম টিপু এবং দুলাল হোসেন।
জাতীয় পার্টির (এরশাদ) প্রার্থিতা নিয়ে যাদের নাম আলোচিত হচ্ছে তাদের মধ্যে রয়েছেন দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য সাবেক চিত্রনায়ক মাসুদ পারভেজ সোহেল রানা। জাসদের কেন্দ্রীয় নেতা ও উজিরপুর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ বাদল, ওর্য়ার্কাসপার্টি থেকে কেন্দ্রীয় যুব মৈত্রীর সাবেক সভাপতি রফিকুল ইসলামও ১৪ দলীয় জোটের মনোনয়ন প্রত্যাশী এ আসন থেকে। এছাড়া স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে সাবেক এমপি ও সাবেক ছাত্রনেতা গোলাম ফারুক অভির নামও এলাকায় আলোচনায় আছে।
২০০৮ সালে আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহর অনুপস্থিতিতে বরিশাল-১ আসন থেকে নির্বাচিত হন অ্যাডভোকেট তালুকদার মো. ইউনুস। ২০১৪ সালের নির্বাচনে তাকে দেয়া হয় বরিশাল-২ আসন। বিএনপি-জামায়াতবিহীন এ নির্বাচনে তার প্রতিদ্বন্দ্বী ছিল জাতীয় পার্টির নাসির উদ্দিন। ওই নির্বাচনে বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তালুকদার মো. ইউনুস পেয়েছিলেন ১ লাখ ৩৪ হাজার ৭৮ ভোট, নাসির পেয়েছেন ৫ হাজার ৮৮ ভোট। ইউনুসের বাড়ি বরিশাল মহানগরীর সদর রোডে। বানারীপাড়া বা গৌরনদীতে তার কোনো বাসভবনও নেই। তাই এবার বানারীপাড়াবাসীর মন জয় করা কঠিন হয়ে পড়বে বলে রাজনৈতিক মহল মনে করছেন। এছাড়া বরিশাল-২ আসনে এবার অ্যাডভোকেট তালুকদার মো. ইউনুস মনোনয়ন পাচ্ছেন কিনা তা নিয়ে রয়েছে ধূম্রজাল। অপরদিকে প্রখ্যাত দানবীর কেন্দ্রীয় বিএনপির কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য সরফুদ্দিন আহম্মেদ সান্টুর রয়েছে ব্যাপক জনসমর্থন। অবহেলিত উজিরপুর-বানারীপাড়ার সকল নাগরিককে তিনি কাছের করে নিয়েছেন। সারা বাংলাদেশে রয়েছে শিল্পপতি সরফুদ্দিন সান্টুর দান। তিনি এবারের নির্বাচনেও অংশগ্রহণ করবেন। মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে এগিয়ে রয়েছেন আওয়ামী লীগ থেকে বরিশাল-২ আসনে তালুকদার মোঃ ইউনুস। তবে তিনি এ আসন থেকে মনোনয়ন না পেলে বানারীপাড়া উপজেলা চেয়ারম্যান গোলাম ফারুক মনোনয়ন পেতে পারেন বলে মনে করেছে তৃনমূল। এক্ষেত্রে তালুকদার মোঃ ইউনুসের আসন পরিবর্তন হলেও হতে পারে। একাধীকবার নির্বাচিত তালুকদার মোঃ ইউনুস সকল প্রকার বির্তকের উর্ধেŸ থেকে রাজনীতি করেছেন। তার রাজনৈতিক ক্যারিয়ারে কোন দাগ নেই বল্লেই চলে। তবে সম্প্রতি উজিরপুরের জল্লা ইউপি চেয়ারম্যান বিশ^^জিৎ হত্যার ঘটনায় তালুকদার মোঃ ইউনুসের পিএস কে জড়িয়ে মামলা করার কারনে মনোনয়ন টেনশনে পরতে পারেন তিনি। আওয়ামী লীগ থেকে এ আসনে সাবেক এমপি মনিরুল ইসলাম মনির নামও শোনা যাচ্ছে। সব দিক থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে দানবীর সরফুদ্দিন সান্টুর নাম এগিয়ে রয়েছে। সাধারণ ভোটাররাও মনে করছেন লড়াইটা হবে সর্বজনপ্রিয় দানবীর খ্যাত এস. সরফুদ্দিন আহমেদ সান্টুর সাথে বর্তমান সংসদ তালুকদার মোঃ ইউনুস এর সাথে।
এ ব্যাপারে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য তালুকদার মো. ইউনুস বলেন, সরকারের সুশাসনসহ নানা ইতিবাচক কারণে আগামীতে জনগণ এই আসনে নৌকার বিজয় নিশ্চিত করবে। এ আসনে একাধিক সম্ভাব্য প্রার্থী থাকলেও দলের সভাপতি শেখ হাসিনা যাকে মনোনয়ন দেবেন, সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে তার পক্ষে কাজ করবেন। আগামীতে সুষ্ঠু সুন্দর ভোট হলে এই আসনে বিএনপি প্রার্থীর নিশ্চিত বিজয় দেখছেন বিএনপির অন্যতম মনোনয়ন প্রত্যাশী এস. সরফুদ্দিন সান্টু। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ বরিশাল-২ আসনে কোনো উন্নয়ন করতে পারেনি। এখানকার আওয়ামী লীগের এমপি ইউনুস অন্য এলাকার লোক। যোগ্য নেতাকে বিএনপির মনোনয়ন দেওয়া হলে এবং সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করলে বরিশাল-২ আসনে বিএনপি প্রার্থী বিপুল ভোটের ব্যবধানে বিজয়ী হবে।
Leave a Reply