দখিনের খবর ডেস্ক ॥ দেশের ভালোর জন্য যে কোনো মুহূর্তে পদত্যাগ করতে প্রস্তুত রয়েছেন বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার। কে এম নূরুল হুদা নেতৃত্বাধীন ইসি মেয়াদের চার বছর পার করার পর দুর্নীতি-অনিয়মের অভিযোগে ৪২ জন নাগরিকের দাবির প্রতিক্রিয়ায় একথা বলেন তিনি। সোমবার বিকালে আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে নিজ কার্যালয়ে ‘ইসির পঞ্চম বর্ষের প্রারম্ভে আমার বক্তব্য’ শিরোনামে সাংবাদিকদের সামনে আসেন তিনি। এ সময় তিনি লিখিত বক্তব্য পাঠের পাশাপাশি সাংবাদিকদের চারটি প্রশ্নের জবাব দেন। দেশের ৪২ জন ‘বিশিষ্ট নাগরিক’ আপনাদের পদত্যাগ দাবি করেছেন- এ বিষয়ে আপনার অবস্থান কী? এ প্রশ্নের জবাবে মাহবুব তালুকদার বলেন, ‘আমাদের কাছে পদত্যাগ দাবি করেছেন কিনা জানি না। দাবি যদি করে থাকেন, আর আমি ব্যক্তিগতভাবে পদত্যাগ করলে যদি লাভ হয়, দেশের যদি কোনো উপকার হয়, তাহলে আমি যে কোনো মুহূর্তে পদত্যাগ করতে প্রস্তুত।’ ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে নূরুল হুদা নেতৃত্বাধীন ইসি যাত্রা শুরু করে। ২০২২ সালে তাদের মেয়াদ শেষ হবে। ভোট নিয়ে সমালোচনার পর বর্তমান ইসির বিরুদ্ধে আর্থিক অনিয়ম, দুর্নীতি ও অর্থসংশ্লিষ্ট গুরুতর অসদাচরণের অভিযোগ তুলে এর তদন্ত করতে রাষ্ট্রপতিকে চিঠি দিয়েছে ৪২ নাগরিক। এ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, ‘আমরা একটি প্রসেসের মধ্য দিয়ে নির্বাচন কমিশনার নির্বাচিত হয়েছি। এখন যদি আমাদের বিষয়ে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠিত হয়, সেক্ষেত্রে আমাদের কোনো বক্তব্য নেই। আর একটা প্রসেসের মধ্য দিয়ে নির্বাচিত হওয়ার পরে আমি পদত্যাগ করে ফেললাম, তা কোনো বিষয় হয় না। আমি ব্যক্তিগতভাবে দুই-তিনবার পদত্যাগের অনুরোধ পেয়েছি। এখন কতবার পদত্যাগ করবো সেটাও একটা প্রশ্ন।’ নির্বাচন কমিশন গঠনে আইন প্রণয়নের সুপারিশ করবেন কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে নির্বাচন কমিশনার বলেন, ‘এই সুপারিশ আমাদের ওপর নির্ভর করে না। নির্বাচন কমিশন যারা নিয়োগ করেন বা সংশ্লিষ্ট থাকেন তারা এ সুপারিশ করতে পারেন।’ এর আগে লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘বর্তমান নির্বাচন কমিশনের আজ চার বছর পূর্ণ হলো। পেছনের দিকে তাকিয়ে মনে হয় আমাদের মন আত্মবিশ্লেষণ প্রয়োজন। প্রায় সব নির্বাচন অবাধ সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ হয়েছে বলে আমরা তৃপ্তি বোধ করি। কিন্তু নির্বাচন বিষয়ে আমাদের সব দাবি জনগণের উপলব্ধির সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। কেবল রাজনৈতিক দল নয়, নীরব জনগোষ্ঠীর অশ্রুত ভাষা শ্রবণের প্রচেষ্টা থাকা প্রয়োজন।’ ‘বর্তমানে নির্বাচন এককেন্দ্রিক হয়ে যাচ্ছে’ মন্তব্য করে এ কমিশনার বলেন, ‘এককেন্দ্রিক নির্বাচন বহুদলীয় গণতন্ত্রের উপাদান হতে পারে না। যেহেতু নির্বাচন ছাড়া গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা যায় না, সেহেতু নির্বাচনের প্রতিটি আইনকানুন ও আচরণবিধি কঠোরভাবে পালনের মধ্য দিয়ে গণতন্ত্রকে পরিপালন ও সংরক্ষণ করতে হয়। কিন্তু নির্বাচন প্রক্রিয়া যথাযোগ্য সংস্কার না করার কারণে নির্বাচন ব্যবস্থাপনা এখন গভীর খাদের কিনারে। এই সংস্কার নির্বাচন কমিশনের ওপর নির্ভর করে না। এজন্য রাজনৈতিক দলগুলো এবং সংশ্লিষ্ট সবার সমঝোতা প্রয়োজন।’ তিনি বলেন, ‘পৌরসভা নির্বাচনের ফলাফল দেখে আমার ধারণা হচ্ছে নির্বাচন নির্বাসনে যেতে চায়। নির্বাচন অর্থ অনেকের মধ্য থেকে ভোটের মাধ্যমে বাছাই। কিন্তু সে অবস্থা আজকাল পরিলক্ষিত হয় না। প্রশ্ন জাগে, নির্বাচন কি এখন পূর্বে নির্ধারিত? নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক ও সর্বজন গ্রহণযোগ্য না হলে, কোনও বিতর্কিত নির্বাচনের মাধ্যমে গণতন্ত্র আপন মহিমায় বিকশিত হতে পারে না।’
Leave a Reply