মুঃ শাহীন, গৌরনদী ॥ বরিশালের সর্বোত্তরের জনপদ গৌরনদী উপজেলা। সড়ক পথে রাজধানী ঢাকা থেকে বরিশালসহ দেশের দক্ষিনাঞ্চলের ৬ জেলার প্রবেশ দ্বার এটি। ৬ জেলার কাছে বেশ গুরুত্বপূর্ন এ জনপদটি। গৌরনদী ও আগৈলঝাড়া উপজেলা নিয়ে গঠিত হয়েছে জাতীয় সংসদের ১২১ ও বরিশাল-১ আসন। এ আসনে নৌকার একক প্রার্থী বর্তমান এমপি ও সাবেক চীফ হুইপ আলহাজ্ব আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ্। এখানে ধানের শীষের প্রার্থী হিসেবে সাবেক এমপি ও বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক এম. জহির উদ্দিন স্বপনকে পেতে চায় দলের মাঠের নেতা-কর্মী সমর্থক ও ধানের শীষের সাধারন ভোটাররা। জানাগেছে, গৌরনদীর ৭টি ইউনিয়ন, ১টি পৌরসভা ও আগৈলঝাড়ার ৫টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত হয়েছে এ আসনটি। স্বাধীনতা পরবর্তি ১০টি জাতীয় নির্বাচনে এ আসন থেকে আওয়ামী লীগ প্রার্থী, ৫ বার বিএনপি প্রার্থী ৩বার ও জাতীয় পার্টির প্রার্থী ২বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। দলীয় কর্মী সমর্থক ও ভোটারদের সমর্থনে এবারের নির্বাচনে এ আসনে আওয়ামীলীগের নৌকা মার্কার একক প্রার্থী হিসেবে দলীয় মনোনয়নপত্র কিনে জমা দিয়েছেন বর্তমান সংসদ সদস্য ও সাবেক চীফ হুইপ আলহাজ্ব আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ। নৌকা মার্কার প্রার্থী হিসেবে এ আসনে তার মনোনয়ন একেবারে নিশ্চিত বলছেন আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতাকর্মীরা। তবে এ আসনে বিএনপির দলীয় মনোনয়ন ফরম কিনেছেন মোট ৬ জন। এরা হলেন, সাবেক সাংসদ এবং বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সাবেক তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক এম. জহির উদ্দিন স্বপন, ২০০৮এর নির্বাচনে এ আসনে বিএনপির প্রার্থী ও দলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ইঞ্জিনিয়ার আবদুস সোবাহান, কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আকন কুদ্দুসুর রহমান, কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য এ্যাডভোকেট গাজী কামরুল ইসলাম সজল, গৌরনদী পৌর বিএনপির সাবেক সভাপতি মোঃ মিজানুর রহমান খান মুকুল (ভিপি মুকুল), আগৈলঝাড়া উপজেলা বিএনপির সহসভাপতি মোল্লা বশির আহমেদ পান্না। আওয়ামীলীগের দলীয় সূত্রে জানাগেছে, গত ২মাস ধরে ১২টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভার সর্বমোট ১১৭টি ওয়ার্ডে কমিটি পূনঃগঠন এবং ওয়ার্ড কার্যালয় স্থাপনের পাশাপাশি ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে আওয়ামীলীগের নৌকা মার্কার পক্ষে চলেছে ব্যাপক গণসংযোগ। এ ছাড়া প্রতিটি ভোট কেন্দ্রের জন্য আলাদা আলাদা কমিটিও করা হয়েছে। এর মাধ্যমে আওয়ামীলীগ ও সহযোগী সংগঠনকে আরো বেশী চাঙ্গা করা হয়েছে। পাশাপাশি এলাকার মুক্তিযোদ্ধাদেরকেও আওয়ামীলীগের পক্ষে সংগঠিত করা হয়েছে। গৌরনদী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক ও গৌরনদী পৌর মেয়র মোঃ হারিছুর রহমান বলেন, এ অঞ্চলের উন্নয়নের একমাত্র কান্ডারী আমাদের মহান নেতা আলহাজ্ব আবুল হাসানাত আবদুল¬াহ। তিনি দেশের দক্ষিণাঞ্চলের রাজনৈতিক অভিভাবক। দীঘদিন যাবত তিনি এককভাবে গৌরনদী-আগৈলঝাড়াসহ পুরো দক্ষিনাঞ্চলের নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন। আমরা যখনই যথাযথ প্রকৃয়ার মাধ্যমে যথাযথ স্থানে তাকে সমাসিন করেছি, তখনই তিনি এ অঞ্চলের রাস্তা, ঘাট, ব্রীজ, কালভার্ট, স্কুল,কলেজ, মসজিদ, মাদ্রাসার ব্যাপক উন্নয়ন করেছেন। তিনি ব্যাতিত অন্য কেউ এ উন্নয়ন করতে পারেন নি। তিনি এ নির্বাচনী এলাকাসহ দেশের দক্ষিণাঞ্চলের ব্যাপক উন্নয়ন করেছেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে সারা দেশে যে সমন্বিত উন্নয়ন কার্যক্রম চলছে তার ধারাবাহিকতায় দক্ষিনাঞ্চলসহ বিশেষ করে গৌরনদী-আগৈলঝাড়া যে উন্নয়ন কার্যক্রম হচ্ছে এবং যে গুলো চলমান রয়েছে, এ উন্নয়ন কার্যক্রম দেখে তার সফল নেতৃত্বর প্রতি আস্থাশীল হয়ে এখানকার মানুষ আজকে ঐক্যবদ্ধ এবং একাট্টা। উন্নয়নের এ ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে হলে এ আসন থেকে বারবার জননেতা আলহাজ্ব আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহকে নির্বাচিত করতে হবে। যে কারনে আমরা আশাবাদী স্মরনকালের সেরা ব্যাবধানে সমস্ত জনগনকে নিয়ে আমরা ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে নৌকা প্রতিকে আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহকে বিজয়ী করব ইংশআল্লাহ। বিএনপির তৃনমূলের নেতাকর্মীসহ সাধারন ভোটারগন মনে করেন, এ আসনে ধানের শীষকে জেতাতে হলে সাবেক এমপি এম. জহির উদ্দিন স্বপনের বিকল্প নেই। নিজ এলাকা গৌরনদী উপজেলার ৭টি ইউনিয়নের মধ্যে ৫টিতেই এম. জহির উদ্দিন স্বপনের একটি বিশাল ভোটব্যাংক রয়েছে। ওই ৫টি ইউনিয়ন থেকেই ৬০-৭০ হাজার ভোট তাঁর পক্ষে যাবে। তা ছাড়া ২০০১ সালের নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে তিনি এলাকায় বেশ উন্নয়ন করেছেন। তারা বলছেন এম, জহির উদ্দিন স্বপন ব্যাতিত বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী দলের বিভিন্ন পদধারী ৫ নেতা নেতা ইঞ্জিনিয়ার সোবাহান, আকন কুদ্দুস ও গাঁজী সজল, ভিপি মুকুল, পান্না মোল্লা দলীয় অবস্থানের কারনে নিজেদেরকে যোগ্য ও জনপ্রীয় প্রার্থী বলে দাবি করলেও মাঠের চিত্র ভিন্ন। মাঠে তাদের অবস্থান বেশ দুর্বল। এদের কারো কারো বিরুদ্ধে এলাকায় আওয়ামীলীগের বি-টীম হয়ে কাজ করারও অভিযোগ রয়েছে। কেউ কেউ সরকারি দলে তার প্রভাবশালী আতœীয়কে ব্যাবহার করে এ সরকারের আমলেই ফুলে ফেপে টাকার কুমির হয়েছেন। ফলে ভোটের মাঠের লড়াইয়ে ওই নেতাদের ওপর ভরসা করতে পারছেন না দলের তৃনমূলের নেতাকর্মী ও ধানের শীষের সাধারন ভোটারগন। তাদের দাবি ওই নেতারা মনোনয়ন পেলে প্রতিকসহ আতœসমর্পন করবে নৌকার প্রার্থীর কাছে। গৌরনদী পৌর বিএনপির সাবেক সাধারন সম্পাদক শরীফ জহির সাজ্জাদ হান্নান বলেন, এম, জহির উদ্দিন স্বপনের মনোনয়ন প্রায় নিশ্চিত হওয়ায় খবর পেয়ে স্থানীয় আওয়ামীলীগ দিশেহারা হয়ে পড়েছে। তারা এখন বাড়ি বাড়ি গিয়ে মাঠে না নামার জন্য বিএনপির নেতা-কর্মী সমর্থকদেরকে হুমকি দিয়ে আসছে। স্বপনকে ঠেকাতে ইতোমধ্যে তারা নেতা-কর্মীদের নামে একাধিক গায়েবী মামলা দিয়েছে। অসংখ্য নেতাকর্মী ওপর হামলা চালিয়ে আহত করেছে। এর পরেও তারা স্বপনকে কোন ভাবেই ঠেকাতে পারবে না। কারন, বিএনপির মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীসহ গৌরনদী-আগৈলঝাড়ার সাধারন মানুষের সঙ্গে সাবেক এমপি এম. জহির উদ্দিন স্বপনের সার্বক্ষণিক ঘনিষ্ট যোগাযোগ রয়েছে। তিনি নবীন-প্রবীনের সমন্বয় ঘটিয়ে তাদেরকে নিয়ে একযোগে কাজ করতে বেশ স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। এ কারনে মাঠের নেতা-কর্মী সমর্থকদের একটি বড় অংশ তাকেই এ আসনে বিএনপির নেতা মেনে আসছে। এ ছাড়া সংখ্যালঘু ভোটার অধ্যুষিত এ আসনে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের অনেক প্রভাবশালী নেতৃবৃন্দসহ ওই সম্প্রদায়ের অসংখ্য ভোটারের সঙ্গে তার ব্যাক্তিগত নিবির সম্পর্কসহ কারো কারো সাথে হৃদ্যতাপূর্ণ পারিবারিক সম্পর্ক রয়েছে। এম.জহির উদ্দিন স্বপনকে ধানের শীষের প্রার্থী হিসেবে পেলে তাকে বিজয়ী করতে ওই সংখ্যালঘু নেতা-কর্মীরাও ভোটের মাঠে জীবনবাজী রাখবেন। পাশাপাশি নির্বাচনী এলাকার পোশজীবি, সুশীল সমাজ ও সহজ-সরল জীবনযাপনে অভ্যস্ত নিরিহ সাধারন মানুষের মধ্যে রয়েছে তার ব্যাপক গ্রহণযোগ্যতা। সব মিলিয়ে তাকেই সবাই ধানের শীষের পক্ষে এ আসনের ভোটের মাঠের লড়াইয়ে নির্ভরযোগ্য কান্ডারী ভাবছেন। আওয়ামীলীগ তার দাবি, এ বিবেচনা থেকেই দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ও দেশ নায়ক তারেক রহমান এ আসনে এম. জহির উদ্দিন স্বপনকে মনোনয়ন দেবে। আর স্বপন মনোনয়ন নিয়ে নির্বাচনী মাঠে আসলে এ আসনে বিএনপির বিজয় ইনশাল্লাহ একেবারে সুনিশ্চিত।
Leave a Reply