দখিনের খবর ডেস্ক ॥ সরকার সারাদেশের হাজার হাজার সরকারি সংস্থাকে ইন্টারনেট নেটওয়ার্কের আওতায় নিয়ে আসার উদ্যোগ নিয়েছে। অপটিক্যাল ফাইবার ক্যাবলের মাধ্যমে ওই নেটওয়ার্ক স্থাপন করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে ১৮ হাজার ১৩২টি সরকারি সংস্থাকে ইন্টারনেট নেটওয়ার্কের আওতায় নিয়ে আসার কাজ চলছে। সরকারি ও বেসরকারি সংস্থাগুলো একটি নেটওয়ার্ক মধ্যে থাকলে দেশের মানুষ সব জায়গা থেকেই সেবা নিতে পারবে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে গ্রাম ও শহরের বৈষম্য অনেকাংশে দূর হবে। ইতিমধ্যে ২ হাজার ৬শ’টি ইউনিয়ন তথ্য কেন্দ্রে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সংযোগ দেয়া হয়েছে। তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগ ইউনিয়ন নেটওয়ার্কিংয়ের বড় একটি অংশ স্থাপন করছে। বাকি অংশ দুটি বেসরকারি কোম্পানি স্থাপন করছে। নেটওয়ার্ক স্থাপন প্রকল্পের মাধ্যমে ‘বাংলা গভ নেট ও ইনফো সরকার’ প্রযুক্তি সেবার বিস্তার ঘটিয়ে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হচ্ছে। সরকার ইতিমধ্যে ১৪ হাজার রকমের সেবা বিগডাটায় দিয়েছে। সেখান থেকে সরকারের অনেক সেবা মানুষ নিতে পারছে। তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগ সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, দেশের সব মন্ত্রণালয়, বিভাগ, অধিদফতর ও বেসরকারি সংস্থাগুলোকে এক নেটওয়ার্কের মধ্যে নিয়ে আসার কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে। চলতি বছরের মধ্যে প্রকল্পটির কাজ শেষ হবে। তখন দেশের শহর ও গ্রামের বৈষম্য দূর হবে। শহরের মানুষ আর গ্রামের মানুষ সমভাবে ইন্টারনেট ব্যবহারের সুবিধা পাবে। ডিজিটাল সেবাগুলো সম্পর্কে ই-গভর্নেন্স ব্যবস্থায় এগিয়ে যেতে সময় এবং অর্থের ব্যয় কমিয়ে আনা দরকার। সেজন্যই এক্সেস টু ইনফরমেশন (এটুআই) এর উদ্যোগে চালু করা হয়েছে একশপ, একপে এবং একসেবা। সরকার সব সেবা একই প্ল্যাটফর্মে নিয়ে আসতে চায়। পর্যায়ক্রমে সরকারের ৩ হাজার সেবাকে একসঙ্গে নিয়ে আসা হবে। সেজন্য আইসিটি বিভাগ আগামী ২ বছরের মধ্যে ৪০ হাজার ফ্রিল্যান্সার তৈরি করবে। স্কুল পর্যায়ে শিশু-কিশোরদের প্রযুক্তি জ্ঞানে দক্ষ করতে ২০২১ সালের মধ্যে ৬৪টি জেলায় শেখ কামাল আইটি ইউকিউবেশন সেন্টার স্থাপন করা হবে। ইতিমধ্যে ‘ডিজিটাল মিউনিসিপ্যালিটি সার্ভিসেস সিস্টেম’ পাইলট প্রকল্পের অধীন পরীক্ষামূলকভাবে ময়মনসিংহ সিটি কর্পোরেশন ও ৯টি পৌরসভা ফরিদপুর, গোপালগঞ্জ, নাটোর, ঝিনাইদহ, টুঙ্গিপাড়া, পীরগঞ্জ, সিংড়া, তারাব ও রামগতিতে ‘ডিজিটাল অটোমেশন পদ্ধতিতে নাগরিক সেবা’ কার্যক্রম শুরু হয়েছে। ‘একসেবায়’ এখন পর্যন্ত ১৬২টি সরকারি সেবা চালু রয়েছে। ওই সেবা পেতে নাগরিকদের ভিন্ন ভিন্ন মন্ত্রণালয়ে বা ভিন্ন ভিন্ন ওয়েবসাইটেও যেতে হবে না। এক জায়গা থেকেই ওসব সেবা পাওয়া যাবে। পর্যায়ক্রমে তাতে আরো ৩ হাজার সেবা অন্তর্ভুক্ত করা হবে। ‘একপে’ এর মাধ্যমে সরকারি বিভিন্ন ইউটিলিটি সেবার বিল ও অন্যান্য ফি এক জায়গা থেকেই দেয়া যাবে। আর ‘একশপ’ এর মাধ্যমে দেশের যে কোন জায়গা থেকে পণ্য উৎপাদক বা উদ্যোক্তারা ই-কমার্সে তাদের পণ্য বিক্রি করতে পারবে। সূত্র জানায়, বাংলা গভ নেট ও ইনফো সরকার পকল্পের আওতায় দেশের প্রায় সব উপজেলা ফাইবার অপটিক ক্যাবলে সংযুক্ত হয়েছে। তার মাধ্যমে দেশের ১৮ হাজার ১৩২টি সরকারি সংস্থা অবিভক্ত নেটওয়ার্কের আওতায় নিয়ে আসার কাজ চলছে। সচিবালয় উচ্চগতির নিরবিচ্ছিন্ন ইন্টারনেট সেবার আওতায় এসেছে। দেয়া হয়েছে ওয়াইফাই সুবিধাও। পাশাপাশি ৭০ হাজার তরুণ-তরুণীকে তথ্য প্রযুক্তি পেশাজীবী হিসেবে গড়ে তোলা হয়েছে। তার মধ্যে ২০ হাজার জনকে বুনিয়াদি প্রশিক্ষণ, ১০ হাজার জনকে টপ আইটি প্রশিক্ষণ এবং সাড়ে ৪ হাজার জনকে ফাস্ট ট্র্যাক ফিউচার লিডার হিসেবে গড়ে তোলা হচ্ছে। হাইটেক পার্কের অন্তর্ভুক্ত ‘স্টিল এনহান্সমেন্ট’ কর্মসূচির আওতায় ২ হাজার ৪৫০ জনকে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। তাছাড়া লার্নিং আর্নিং প্রকল্পের আওতায় আরো ২৬ হাজার জনকে ফ্রি ল্যান্সিং প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। প্রশিক্ষণপ্রাপ্তদের কাছ থেকে আবার অন্যরা শিখবে। এভাবে দেশে দক্ষ আইটি বিশেজ্ঞ গড়ে ওঠবে। এদিকে তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগ জানিয়েছে, সারাদেশের সব মানুষকে একটি নাম্বারে নাগরিক সেবা সম্পর্কিত তথ্য প্রদানের উদ্দেশ্যে ‘ন্যাশনাল কল সেন্টার’ তৈরি করা হয়েছে। সেই সঙ্গে কোরিয়া সরকারের সহায়তায় আইসিটি মাস্টারপ্ল্যান তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। সারাদেশের সব সরকারি প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইটকে একটি অভিন্ন প্ল্যাটফর্মের আওতায় নিয়ে এসে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় পাবলিক ওয়েব পোর্টাল ‘জাতীয় তথ্য বাতায়ন’ চালু করা হয়েছে। ঠিক একইভাবে একটি নাম্বারের মাধ্যমে নাগরিক সেবার নতুন উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। এটি সম্পন্ন করতে পারলে নাগরিক সুবিধা পাওয়া আরো সহজ হবে। দেশের সব নাগরিক এই সুবিধার আওতায় আসবে। ইন্টারনেট এখন মানুষের মৌলিক অধিকারের পর্যায়ে চলে গেছে। তাই শহর ও গ্রামের বৈষম্য দূর করতে ইন্টারনেট সুবিধা দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া হয়েছে। কোন মানুষ যাতে ইন্টারনেটের বাইরে না থকে সেজন্যই সরকার প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে।
Leave a Reply