দখিনের খবর ডেস্ক ॥ বরেণ্য অভিনেতা এটিএম শামসুজ্জামান মারা গেছেন। গতকাল বুধবার সকাল ৯টার দিকে ঢাকার সূত্রাপুরের নিজ বাসভবনে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮০ বছর। এর আগে বুধবার সকালে তাকে পুরান ঢাকার আজগর আলী হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। হাসপাতালে ডা. আতাউর রহমান খানের তত্ত্বাবধানে ছিলেন জনপ্রিয় এ অভিনেতা। গত শুক্রবার বিকেলে তাকে হাসপাতাল থেকে বাসায় নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। এর আগে ২০১৯ সালের শুরুর দিকে পরিপাকতন্ত্রের জটিলতা নিয়ে চার মাসেরও বেশি সময় একই হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন তিনি। এটিএম শামসুজ্জামান ১৯৪১ সালের ১০ সেপ্টেম্বর নোয়াখালীর দৌলতপুরে নানাবাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৬১ সালে পরিচালক উদয়ন চৌধুরীর ‘বিষকন্যা’ সিনেমায় সহকারী পরিচালক হিসেবে প্রথম কাজ শুরু করেন। তিনি প্রথম কাহিনি ও চিত্রনাট্য লিখেছিলেন ‘জলছবি’ সিনেমার জন্য। অভিনেতা হিসেবে এটিএম শামসুজ্জামানের অভিষেক ১৯৬৫ সালে। এরপর ১৯৭৬ সালে আমজাদ হোসেন পরিচালিত ‘নয়নমণি’ চলচ্চিত্রে খলনায়ক হিসেবে তিনি আলোচনা আসেন। ২০০৯ সালে ‘এবাদত’ নামের প্রথম সিনেমা পরিচালনা করেন এটিএম শামসুজ্জামান। ১৯৮৭ সালে কাজী হায়াৎ পরিচালিত ‘দায়ী কে’ চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য শ্রেষ্ঠ অভিনেতা বিভাগে প্রথম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান তিনি। ২০১২ সালে রেদওয়ান রনি পরিচালিত ‘চোরাবালি’ ছবিতে পার্শ্বচরিত্রে অভিনয়ের জন্যে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান এটিএম শামসুজ্জামান। ৪২তম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের আজীবন সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন এই অভিনেতা। এছাড়া শিল্পকলায় অসামান্য অবদানের জন্য ২০১৫ সালে তাকে একুশে পদকে ভূষিত করা হয়। গতকাল বুধবার বাদ জোহর নারিন্দার পীর সাহেব বাড়ি মসজিদে তার জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এর আগে এটিএম শামসুজ্জামানের শেষ ইচ্ছে অনুযায়ী নারিন্দার পীর সাহেব তার গোসলের প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেন। এছাড়াও এফডিসি বা অন্য কোথাও নেওয়া হয়নি তার মরদেহ। প্রথম জানাজা শেষে সূত্রাপুরে কমিউনিটি সেন্টারে সর্ব সাধারণের শ্রদ্ধা জানানোর জন্য বরেণ্য অভিনেতার মরদেহ রাখা হয়। এরপর সূত্রাপুর জামে মসজিদে তার দ্বিতীয় জানাজা শেষে জুরাইন কবরস্থানে দাফন করা হয়। রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর শোক: বরেণ্য অভিনেতা এটিএম শামসুজ্জামানের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল বুধবার গণমাধ্যমে পাঠানো শোক বার্তায় রাষ্ট্রপতি বলেন, এটিএম শামসুজ্জামানের মৃত্যু দেশের সাংস্কৃতিক অঙ্গনের জন্য এক অপূরণীয় ক্ষতি। বাংলাদেশে অসাম্প্রদায়িক চেতনার বিকাশে তার অবদান মানুষ শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করবে। আলাদা এক শোকবার্তায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, জনপ্রিয় এই শিল্পী তার অসাধারণ অভিনয়ের মধ্য দিয়ে দেশবাসীর হৃদয়ে বেঁচে থাকবেন। রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী মরহুমের আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন এবং তার শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান। মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের শোক: এটিএম শামসুজ্জামান মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করছেন মন্ত্রিসভার সদস্যরা। গতকাল বুধবার শোক প্রকাশ করে বাণী দিয়েছেন মন্ত্রিসভার সদস্য মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রীরা। এ ছাড়া শোক জানিয়েছেন বিভিন্ন রাজনীতিবিদরা। মন্ত্রিসভার সদস্যরা আলাদা আলাদা শোক বাণীতে এটিএম শামসুজ্জামানের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। তারা তার আত্মার মাগফিরাত কামনা করে শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক শোকবার্তায় বলেন, দেশবরেণ্য জনপ্রিয় এ অভিনেতা তার অনবদ্য অভিনয়ের মধ্য দিয়ে দর্শক হৃদয়ে দীর্ঘকাল স্মরণীয় হয়ে থাকবেন। শোক প্রকাশ করে বাণী দিয়েছেন- সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, কৃষিমন্ত্রী মো. আবদুর রাজ্জাক, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, তথ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাছান মাহমুদ, আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, স্থানীয় সরকার মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম, শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি, পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান, খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার, শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন, বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম, পরিবেশ বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন, ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী, রেলপথ মন্ত্রী মো. নূরুল ইসলাম সুজন, ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার, বিজ্ঞান ও প্রযু্ক্িত মন্ত্রী ইয়াফেস ওসমান। এছাড়া শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার, যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী মো. জাহিদ আহসান রাসেল, নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক, সংস্কৃতি বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলী, পানিসম্পদ উপমন্ত্রী একেএম এনামুল হক শামীম শোক প্রকাশ করেছেন। এটিএম শামসুজ্জামানের মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন জাতীয় সংসদের সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী। তিনি মরহুমের রুহের মাগফেরাত কামনা এবং তার শোকসন্তপ্ত পরিবার-পরিজন ও শুভানুধ্যায়ীদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান। দেশের শক্তিমান অভিনেতা ও বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব এটিএম শামসুজ্জামানের মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও বিরোধী দলীয় উপনেতা গোলাম মোহাম্মদ (জিএম) কাদের। এক শোকবার্তায় তিনি প্রয়াত এই অভিনেতার বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন। পাশাপাশি তার শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানান। বিশিষ্ট এই অভিনেতার মৃত্যুতে একইভাবে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন জাতীয় পার্টির মহাসচিব জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু, জাতীয় সাংস্কৃতিক পার্টির আহ্বায়ক শেরিফা কাদের ও সদস্য সচিব আলাউদ্দিন আহমেদ। আওয়ামী লীগের শ্রদ্ধা: বিশিষ্ট অভিনেতা এটিএম শামসুজ্জামানের মরদেহে শ্রদ্ধা নিবেদন করেছে ক্ষমতাসীন দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। দলটির দপ্তর বিষয়ক সম্পাদক ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ সহকারী ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়ার নেতৃত্বে এ শ্রদ্ধা জানানো হয়। রাজধানীর সূত্রাপুরে এটিএম শামসুজ্জামানের নিজ বাসভবনে শ্রদ্ধা জানানোর সময় আরও উপস্থিত ছিলেন দলের ত্রাণ ও সমাজ কল্যাণ সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী, উপ-দপ্তর সম্পাদক সায়েম খান, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আবদুল আউয়াল শামীম এবং ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু আহমেদ মন্নাফী প্রমুখ। শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া বলেন, এটিএম শামসুজ্জামান বাংলাদেশের চলচ্চিত্র জগতের একজন কিংবদন্তিসম অভিনেতা ছিলেন। তার শৈল্পিক অভিনয় দিয়ে সর্বস্তরের মানুষের মন জয় করেছিলেন। বহুমাত্রিক এই শিল্পীর মৃত্যুতে বাংলাদেশের চলচ্চিত্র অঙ্গনের অপূরণীয় ক্ষতি হলো। তার স্থান সহজে পূরণ হবার নয়। তিনি বহুমাত্রিক অভিনেতা ছিলেন। বিপ্লব বড়ুয়া আরও বলেন, তিনি অমর। বাংলাদেশের সংস্কৃতি জগতে তার অবদান জাঁতি আজীবন শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ রাখবে। এই মহান অভিনেতা জীবনের শেষবেলা পর্যন্ত বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিক ছিলেন। বঙ্গবন্ধুর আদর্শ এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনার প্রতি অবিচল থেকেই তিনি চিরবিদায় নিলেন। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করছেন।
Leave a Reply