আমতলী প্রতিনিধি ॥ সোমবার দুপুরে আমতলী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বরগুনা জেলা আওয়ামীলীগের সদস্য ও আমতলী উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক পৌর মেয়রের কর্মী ও সমর্থকদের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও ইট পাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটেছে। এতে ৭টি মোটর সাইকেল ভাংচুর ও প্রতিপক্ষের হামলায় ১১ জন আহত হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। আহতদের মধ্যে গুরুতর অবস্থায় ২ জনকে পটুয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বাকীদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। আইন শৃংখলা রক্ষায় শহর জুড়ে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এ ঘটনার সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। জানাগেছে, আমতলী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামীলীগ সদস্য আলহাজ্ব গোলাম ছরোয়ার ফোরকানকে ঋণ খেলাপীর অভিযোগে গত ১৭ ফেব্রুয়ারী বরগুনা জেলা যুগ্ম জজ প্রথম আদালত ও নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালে বিচারক আল মামুন উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান পদ থেকে অব্যাহতি দিয়ে প্রতিদ্বন্ধি প্রার্থী সামসুদ্দিন আহম্মেদ ছজুকে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বিজয়ী ঘোষনা করে নির্বাচন কমিশনকে ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে গেজেটভুক্ত করার আদেশ দেন। এ আদেশের বিরুদ্ধে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আলহাজ¦ গোলাম ছরোয়ার ফোরকান রবিবার বরগুনা জেলা ও দায়রা জজ আদালত এবং নির্বাচনী আপিল ট্রাইব্যুনালে আপিল করেন। আদালতের বিচারক মো. হাসানুল ইসলাম মামলাটি আমলে নিয়ে যুগ্ম জজ প্রথম আদালতের দেয়া রায় স্থগিত করেন। রায় স্থগিত হওয়ায় সোমবার সকাল ১১ টার দিকে উপজেলা চেয়ারম্যানের কয়েক হাজার কর্মী সমর্থকরা মোটর সাইকেল শোভাযাত্রা করে তাকে শাখারিয়া থেকে উপজেলা পরিষদ প্রাঙ্গণে নিয়ে আসে। এ দিকে উপজেলা চেয়ারম্যানের আগমন প্রতিহত করতে উপজেলা আওয়ামীলীগ সাধারণ সম্পাদক পৌর মেয়র মো মতিয়ার রহমানের নেতৃত্বে অন্তত পাঁচ শতাধিক নেতা-কর্মী ও সমর্থকরা এসে উপজেলা কমপ্লেক্সেরে মধ্যে সকাল ১০ টার দিকে অবস্থান নেন। উপজেলা চেয়ারম্যান ও তার সমর্থকরা ইউএনও অফিসের সম্মুখে ,চেয়ারম্যানের অফিস ও ইউএনও অফিসের দোতালায় অবস্থান নেয় এবং সাধারণ সম্পাদক পৌর মেয়রের সমর্থকরা স্মৃতিস্তস্তের পাদদেশে অবস্থান নেয়। এ সময় দু’পক্ষের কর্মী-সমর্থকরা বিভিন্ন ধরণের উস্কানী মূলক শ্লোগান দিতে থাকে। এক পর্যায়ে দুপক্ষের মধ্যে বিচ্ছিন্ন কিছু ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া এবং ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। পুলিশ উভয় পক্ষকে ছত্রভঙ্গ করে তাৎক্ষনিক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এক পর্যায়ে পুলিশ উভয় পক্ষকে উপজেলা পরিষদ কমপ্লেক্সের মধ্য থেকে সরিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করে। আমতলী উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক পৌর মেয়র মো. মতিয়ার রহমান উপজেলা চেয়ারম্যানের আগমন প্রতিহত করার কথা অস্বীকার করে বলেন, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান গোলাম সরোয়ার কয়েকশ সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে আমতলী এসে আওয়ামীলীগের কর্মী সমর্থকদের উপর হামলা ও আমতলীতে নৈরাজ্য সৃষ্টির চেষ্টা করে। আমি এটা প্রতিরোধ করেছি। এছাড়া উপজেলা চেয়ারম্যানের কর্মী সমর্থকরা আমার কর্মী সমর্থকদের উপর হামলা করে। এতে ৬ জন কর্মী আহত হয়েছে। তাদেরকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। আমতলী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব গোলাম সরোয়ার ফোরকান অভিযোগ করে বলেন, আমতলী পৌরসভার মেয়র মো: মতিয়ার রহমানের সন্ত্রাসী কর্মী সমর্থকরা পৌরসভার সামনে দিয়ে আমার কর্মী সমর্থকরা বাড়ী ফিরে যাওয়ার সময় তাদের উপর হামলা করে। হামলায় ৫ জন আহত হয়েছে এর মধ্যে জাহাঙ্গীর (২৫) ও সিরাজ (৫০) অবস্থা গুরুতর হওয়ায় দুপুর ২টায় তাদেরকে পটুয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। অপর আহতদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। এছাড়া তারা আমাদের ৭টি মোটর সাইকেল ভাংচুর করেছে। তিনি হামলার বিচার দাবী করেন। আমতলী থানার ওসি মো. শাহ আলম হাওলাদার বলেন, হামলায় আহত হওয়ার বিষয়টি আমার জানা নেই। কেউ অভিযোগ করলে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেয়া হবে আমতলী -তালতলী সার্কেলের এএসপি মো রবিউল ইসলাম বলেন। পুলিশের কঠোর হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হয়েছে। বড় ধরনের কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। বরগুনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এসএম তারেক রহমান বলেন, আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যথেষ্ট সজাগ রয়েছে। আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে ছিল। তিনি আরো বলেন, পরিস্থিতি রক্ষায় শহরে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। তবে সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য আমতলী উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভুমি) ও নিবাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিতাশ তামান্না সার্বক্ষনিক দায়িত্ব পালন করেছেন।
Leave a Reply