বানারীপাড়া প্রতিনিধি ॥ ২২৬তম বর্ষে এসে অনুমতির অপেক্ষায় রয়েছে সূর্যপূজা উপলক্ষে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম উৎসব ঐতিহ্যবাহী সূর্যমণি মেলা। বুধবার (৩ মার্চ) সরেজমিনে বানারীপাড়া উপজেলার আহমদাবাদ (বেতাল) গ্রামের ঐতিহাসিক সূর্যমণি মেলার মাঠে গিয়ে দেখা যায়, মেলা আয়োজনের সবটুকু প্রায় শেষ পর্যায়ে। দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে এসেছে অনেক ধরনের দোকানীরা। এসেছে বগুড়া জেলা থেকে সর্ববৃহৎ ও ব্যয়বহুল সার্কাস “দি কাঞ্চন”, এসেছে পুতুল নাচ, নাগরদোলা, নৌকায় দোল, এছাড়াও রয়েছে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি লালন করে আবহমানকাল থেকে মঞ্চ নাটক করা যাত্রাপালার আয়োজন। যার উল্লেখযোগ্য পালার মধ্যে রয়েছে, দস্যু রানী ফুলন দেবী, শাশুড়িও একদিন বধু ছিলো, তোমাকে পাবো বলে, হারিয়ে ফেলেছ মানবতা, নিজাম খুনি অতঃপর আউলিয়া, বিচার পাবে থানায় গেলে উল্লেখযোগ্য। তবে মেলার মাঠ ঘুরে মলিনমুখ দেখা গেলো সূর্মমণি মন্দিরের পূরোহিত কৃষ্ণকান্ত ভট্টাচার্য ও আগত পুজারী এবং দর্শনার্থীদের। এছাড়াও যারা দেশের বিভিন্ন স্থানের মেলার মাঠে দোকান দিয়ে সংসার পরিচালনা করেন কথা হয় তাদের সাথেও। তারা জানান, গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য বহন করে ২২৬তম বছরে এসে সূর্যমণি মেলার অনুমতি পেতে এতো দেরি গ্রামীণ লোক সংস্কৃতির ওপরে অনেকটা প্রভাব ফেলেছে। দখিনের একমাত্র বিনোদন এই সূর্যমণি মেলাকে ঘিরে বরিশাল, গোপালগঞ্জ, খুলনা ও যশোরসহ কয়েকটি জেলার মানুষের মিলনমেলা বসে। উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো এই মেলাকে ঘিরে বরিশালের সব উপজেলা বিশেষ করে বানারীপাড়ার প্রতিটি ঘরে ঘরে দূরের স্বজনদের আগমন ঘটে। দলে দলে মেলার দর্শনার্থী হন তারা। সকলেরই প্রত্যাশা দু’একদিনের মধ্যেই ঐতিহাসিক সূর্যমণি মেলার অনুমতি পাওয়া যাবে। উল্লেখ্য, আজ থেকে ২২৫ বছর আগে গঙ্গু সরকারের পরিবারের নিজস্ব চাষীরা জমিতে চাষ করতে গেলে তাদের লাঙ্গলের ফলা আটকে যায় (বর্তমানে মেলার মাঠে যেখানে সূর্যদেবের মন্দির রয়েছে সেখানে) পরে অনেক চেষ্টা করেও যখন লাঙ্গলের ফলা চাষীরা চালাতে পারছিল না তখন গঙ্গু সরকারের পরিবারে খবর দিলে তারা এসে ওই জায়গা খুঁড়তে বলে। পরে ওই স্থানে ৪ ফুট উচ্চতা ও ২ ফুট প্রশস্ত কষ্টি পাথরের সূর্যাকৃতির একটি মূর্তি পায়। দিনটি ছিলো মাঘী পূর্ণিমার সপ্তমী শুক্লা তিথি। ওই রাতেই গঙ্গু সরকারের মা স্বপ্নে দেখেন মন্দির প্রতিষ্ঠা করে সূর্যদেবের পূজা দেওয়ার। সেই থেকে ওই স্থানে পূজার দিন থেকে মেলারও আয়োজন করেন সরকার পরিবার। যার নাম করণ করা হয় “সূর্যমণি মেলা”। তারপর সরকার পরিবারের কয়েক পুরুষ পূজা মেলার আয়োজন করেন। পরে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় সরকার পরিবারের তৎকালীন বংশধররা ভারতে চলে যাবার সময় স্থানীয় ভট্টাচার্য পরিবারকে সূর্যদেবের পূজা ও মেলা আয়োজনের অনুরোধ করেন। পাশাপাশি স্থানীয় চেরাগ আলী মোল্লার পূর্বপুরুষদের সরকার পরিবারের সমস্ত সম্পত্তি নামমাত্র মূল্যে লিখে দেন। তবে দেশ ছেড়ে যাবার সময় সরকার পরিবার বেতাল গ্রামের সনাতন ধর্মাবলম্বীদের পাশে থাকার অনুরোধ জানান সম্ভ্রান্ত মোল্লা পরিবারকে। সেই থেকেই মোল্লা পরিবার কেবল বেতাল গ্রামের নয়, উপজেলার সংখ্যালঘুদের পাশে থেকে আসছেন আর সূর্যদেবের পূজা ও “সূর্যমণি মেলা” আয়োজনে কমিটিতে না থেকেও সকল ধরনের সহযোগিতা করে আসছে। যদিও এর কারণে অনেক হামলা-মামলার শিকার হয়েছে এই মোল্লা পরিবারটি।
Leave a Reply