দখিনের খবর ডেস্ক ॥ স্বাধীনতা শব্দটি আপেক্ষিক, কিন্তু এর গভীরতা এবং ভাবাবেগ সুতীব্র। আর সে স্বাধীনতা যদি অর্জিত হয় লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে, তাহলে সে অর্জনের সার্থকতাই জাতিকে করে তোলে আত্মনির্ভরশীল, দেশপ্রেমিক এবং দেশের স্বার্থে নিবেদিতকর্মী। বাঙালী জাতির ইতিহাসে অন্যতম শ্রেষ্ঠ অর্জন বাংলাদেশের স্বাধীনতা। আর এ স্বাধীনতার বীজ বপিত হয় বহু আগে থেকেই। ধীরে ধীরে আন্দোলনের জন্য মাঠ পর্যায় থেকে সংগঠিত হতে থাকে বাংলার জনগণ। কেন্দ্র থেকে স্কুল পর্যায় পর্যন্ত মুক্তি সংগ্রামের জন্য কমিটি গঠন করা হয়। তিলে তিলে স্বাধীনতার জন্য প্রস্তুত হতে থাকে বাংলার জনগণ। তারই প্রেক্ষিতে ১৯৬২ সাল থেকে ছাত্রলীগের সিরাজুল আলম খান, আব্দুর রাজ্জাক এবং কাজী আরিফ আহমেদের নেতৃত্বে স্বাধীনতার জন্য গোপনে কাজ করত একটি গ্রুপ। স্বাধীন বাংলা নিউক্লিয়াস নামে সংগঠনটি তাদের তৎপরতা দেশব্যাপী চালাতে থাকে। পরবর্তীতে এ সংগঠনটি বাংলাদেশ লিবারেশন ফ্রণ্ট বা মুজিব বাহিনী নামে মুক্তিযুদ্ধে প্রত্যক্ষভাবে ভূমিকা রাখে। এছাড়াও, এলাকাভিত্তিক বহু সংগঠন তৈরি হয় মুক্তিসংগ্রামের জন্য, পরবর্তীতে উক্ত গ্রুপগুলো সক্রিয় মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিল। তারপরেও বিশেষভাবে বললে স্বীকার করতেই হবে, মার্চ মাসেই অর্জিত হয় বাঙালী জাতির স্বাধীনতার সোপান। মার্চের প্রতিটি উত্তাল দিন বাঙালী জাতিকে যুগিয়েছে সাহস, করেছে আবেগী, দেশমাতাকে মুক্ত করার অনুপ্রেরণায় আপামর জনসাধারণের সে কি প্রচেষ্টা; সর্বস্ব বিলিয়ে দিয়ে দেশকে স্বাধীন করেছে। ১৯৭০ সালের নবেম্বর-ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিতব্য নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। কিন্তু তৎকালীন সামরিক গোষ্ঠী নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে টালবাহানা শুরু করে দেয়। সেই অবস্থা দেখেই বাঙালীরা নিজেদের জোটবদ্ধ করতে থাকে স্বাধীনতার জন্য। অবস্থা বেগতিক দেখে পাকিস্তান সরকার ১৯৭১ সালের ৩ মার্চ ঢাকায় জাতীয় পরিষদের অধিবেশনের জন্য তারিখ নির্ধারিত করে। কিন্তু গোপনে ষড়যন্ত্রের জাল বিছাতে থাকে প্রেসিডেণ্ট ইয়াহিয়া এবং জুলফিকার আলী ভুট্টো। যার বদৌলতে পূর্বঘোষণা ছাড়াই পহেলা মার্চ জাতীয় পরিষদের অধিবেশন বাতিল করা হয়। এই ঘোষণায় পূর্ব বাংলায় বিক্ষোভের সূত্রপাত হয়। ঢাকা পরিণত হয় বিক্ষোভের নগরীতে। বঙ্গবন্ধু ৫ দিন হরতাল এবং অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দেন। সারাদেশ কার্যত অচল হয়ে পড়ে। সামরিক সরকার কার্ফু জারি করে পরিস্থিতি ভয়াবহ করে তুলতে তৎপরতা চালায়। কিন্তু আপামর জনসাধারণের আন্দোলনের মুখে সরকারের গৃহীত পদক্ষেপ মুখ থুবড়ে পড়ে এবং সকল অপকর্মের নিশান ভণ্ডুল হয়ে যায়। ২ মার্চ থেকে ৭ মার্চ পর্যন্ত ইতিহাসের বাঁকে বাঁকে বহুল ঘটনা আমাদের স্বাধীনতা প্রাপ্তিতে স্মরণীয় হয়ে আছে। ২ মার্চ হরতাল চলাকালে কলা ভবনের সামনে মানচিত্র খচিত স্বাধীন বাংলার পতাকা উত্তোলিত হয়। ৩ মার্চ স্বাধীনতার ইশতেহার পাঠ করা হয় পল্টন ময়দানে। এবং ঐ দিনই জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন করা হয় সমবেত কণ্ঠে। মার্চের ৪ তারিখ সকাল ৬টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত হরতাল পালিত হয়। সারাদেশে সরকারী পুলিশ বাহিনীর সঙ্গে সাধারণ জনগণের ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষে বহু মানুষ হতাহত হয়, চট্টগ্রামে ২দিনে ১২০ জন নিহত এবং ৩৩৫ জন আহত হয়। খুলনায় সেনাবাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে ২২ জন আহত এবং ৬ জন নিহত হয়। এ রকমভাবে দেশের সব প্রান্তেই মুক্তিকামী জনগণের সঙ্গে সরকারী বাহিনীর সংঘর্ষের কারণেই দেশব্যাপী জনগণ মুক্তির স্বাদ নিতেই বঙ্গবন্ধু আহূত হরতালকে সর্বাত্মকভাবে পালন করেছিলেন।
Leave a Reply