মাহমুদ হাসান লিটন, লালমোহন ॥ ভোলার লালমোহন উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মাসুম বিল্লাহর বিরুদ্ধে সীমাহীন অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ তুলে সংবাদ সম্মেলন করেছেন অফিস সহকারী সাগর চন্দ্র দে। বৃহস্পতিবার লালমোহন প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেন তিনি। এসময় লিখিত বক্তব্যে সাগর চন্দ্র দে বলেন, লালমোহন জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলের অফিস সহকারী হিসেবে সুনামের সাথে দীর্ঘদিন চাকুরি করেছেন তিনি। প্রায় ৩মাস আগে দাপ্তরিক নিয়ামানুযায়ী মঠবাড়িয়া উপজেলায় বদলী হয় তার। বৃহস্পতিবার (১১ মার্চ) বরিশালের একটি পত্রিকায় “লালমোহনে জনস্বাস্থ্যের অফিস সহায়ক সাগরের বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগে” শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হয়। ওই সংবাদটিতে সাগরের কোন বক্তব্য নেয়া হয়নি। তবে লালমোহন জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মাসুম বিল্লাহর বক্তব্য নেয়া হয়েছে। ওই বক্তব্যে মাসুম বিল্লাহ বলেছেন, অফিস সহায়ক সাগরের বিরুদ্ধে অনিয়ম-দুর্নীতি, ঘুষগ্রহণসহ বিস্তর অভিযোগের প্রেক্ষিতে এ উপজেলা থেকে মঠবাড়িয়া উপজেলায় বদলী করা হয়েছে। এমন অভিযোগ ভিত্তিহীণ উদ্দেশ্য প্রণোদিত অভিহিত করে সাগর বলেন, আমি তার অধিনস্ত থাকায় আমাকে দিয়ে নলকূপের গ্রাহকদের কাছ থেকে পরিমানের অতিরিক্ত চাঁদা উত্তোলন করিয়েছেন মাসুম বিল্লাহ। এসব বিয়য়ে আমি নারাজ থাকায় তিনি আমার উপর ক্ষিপ্ত হয়ে এ উপজেলা থেকে বদলী করিয়েছেন। পাশাপাশি নিজের অপকর্ম ঢাকতে মাসুম বিল্লাহ আমার বিরুদ্ধে লেগেছেন। ২০১৯/২০ অর্থ বছরে “সমগ্র বাংলাদেশে নিরাপদ পানি সরবরাহ প্রকল্পে”র আওতায় ২৩৪ টি গভীর নলকূপ বরাদ্দ হয়। ওইসব গ্রাহকের কাছ থেকে সহায়ক চাঁদা বাবদ ৭ হাজারের স্থলে ৮ হাজার টাকা করে নিয়েছেন। অগ্রাধিকার মূলক গ্রামীণ পানি সরবরাহ প্রকল্পের আওতায় ধলীগৌরনগর ২নংওয়ার্ড ভেদুরিয়া গ্রামের পারুল মেম্বার নলকূপ পেয়েছেন (যারজিও কোড-২০১৯১০১০৪০৯৫৪২১০২০৮০৯৪) তিনি ওটা তার দেবর জসিম উদ্দিন কে দিয়েছেন। জসিম উদ্দিনের নামেও একটি নলকূপ বরাদ্দ হয়েছে যার জিও কোডনং (২০১৯১০১০৪০৯৫৪২১০০২৮৩১৭)। কিন্তু নলকূপ দুজনের মধ্যে শুধু জসিম উদ্দিন পেয়েছেন, আরেকটি নলকূপ ভোলায় তাঁর শশুর বাড়িতে বসিয়েছেন। যাসম্পূর্ণ অনিয়ম। নলকূপ গ্রাহকদের জন্য লিস্টকৃত তালিকায় অনেক ক্ষেত্রে ২বার বা একাধিক নাম থাকলে তা ওই নলকূপগুলো অন্যত্র বিক্রি করার জন্য আমাদের কে বাধ্য করেন এবং মূল্যও নির্ধারণ করে দিতেন তিনি। তাকে সরকারিভাবে হোন্ডা দেয়া হয়েছে টিভিএস মেট্রো। ওই হোন্ডা ভোলায় তার ভাই ব্যবহার করছে। তবে মেরামত ও তেল খরচ দিচ্ছে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল। যা রীতিমত অনিয়ম। গ্রামীণ স্যানিটেশন প্রকল্প (৩য়পর্যায়) মাধ্যমে রায়চাঁদ চৌমুহনী বাজারে একটি কমিউনিটি টয়লেট নির্মাণ করা হয়। ওখানেই পানি সরবরাহের জন্য একটি গভীর নলকুপ বরাদ্দ ছিল। কিন্তু ওখানে নতুন নলকুপ না বসিয়ে স্থানীয় মসজিদের পুরাতন কল মেরামত করে ওখান থেকে লাইন টেনে সংযোগ দেয়া হয়েছে। আর নতুন নলকুপের নগদ টাকা ঠিকাদারের কাছ থেকে উত্তোলণ করে ঠিকাদারকে বিল দিয়েছেন তিনি। বিভিন্ন প্রকল্পের আওতায় স্থাপনকৃত নলকুপের পাটাতন নির্মাণের টাকা ঠিকাদারের কাছ থেকে অগ্রিম রেখে দিয়ে আমাদের কে ওই নলকুপের পাটাতনের কাজ করতে বাধ্য করতেন। এছাড়াও ভূয়া বিল ভাউচারে বিভিন্ন সময়ে সরকারের অর্থ লুটসহ সীমাহীন অনিয়ম দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েন মাসুম বিল্লাহ। তার অনিয়ম ও দুর্নীতির সাথে একাত্মতা প্রকাশে অনীহা থাকায় ক্ষিপ্ত হয়ে সাগরকে অন্যত্র বদলী করিয়েছেন। তবে সেটা দাপ্তরিক ভাবে শাস্তিমূলক বদলী ছিলনা বলেও জানান সাগর। মাসুদ বিল্লাহর বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগে বিভিন্ন সময়ে জাতীয় ও আঞ্চলিক পত্রিকাসহ অনলাইনেও একাধিকবার সংবাদ প্রকাশ করা হয়েছে। এখন সে নিজের অপকর্ম, অনিয়ম দূর্নীতি ঢাকতেই অফিস সহকারীর কাঁধে দোষ তুলে দিতে চাইছেন বলেও অভিযোগ করেন সাগর। এসময় মাসুম বিল্লাহর বিরুদ্ধে অভিযোগগুলো খতিয়ে দেখতে সাংবাদিকদের প্রতিও অনুরোধ করেন অফিস সহকারী সাগর চন্দ্র দে। এ ব্যাপারে উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী মাসুম বিল্লাহ বলেন, আমার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ আনা হয়েছে তা সবই মিথ্যা। তিনি অভিযোগকারীকে রিজেন্টের সাহেদের সাথে তুলনা করে বলেন, সাগর চন্দ্র দে যা করছে তা সাহেদকে হার মানিয়েছে। যার সুর্দিষ্ট প্রমাণ আছে।
Leave a Reply