নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ আটকের পর হাতে ইয়াবা দিয়ে মারুফ সিকদার (২০) নামের এক যুবককে নির্যাতনের ঘটনায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের পরিদর্শক আবদুল মালেক তালুকদারকে বরিশাল থেকে প্রত্যাহার (ক্লোজড) করা হয়েছে। গত বুধবার মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মোহাম্মদ আহসানুল জব্বারের পক্ষে উপ-পরিচালক (প্রশাসন) মোহাম্মদ মামুন স্বাক্ষরিত এক আদেশে তাকে বরিশাল থেকে সরিয়ে ঢাকার প্রধান কার্যালয় সংযুক্ত করা হয়। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে এ-সংক্রান্ত আদেশটি মাদক অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়। আদেশে বলা হয়েছে, আগামী ১৪ মার্চের মধ্যে ঢাকা প্রধান কার্যালয়ের উপ-পরিচালকের (প্রশাসন) কাছে তাকে রিপোর্ট করতে হবে। বরিশালে তার স্থলে পরিদর্শক মো. মোস্তফা জামান কাজ করবেন। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের স্টাফ কর্মকর্তা ও সহকারী পরিচালক মেহেদী হাসান বলেন, এক যুবককে নির্যাতনের বিষয়টি বিভিন্ন মাধ্যমে জানতে পেরে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মোহাম্মদ আহসানুল জব্বার তাৎক্ষণিকভাবে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের বরিশালের বিভাগীয় প্রধান অতিরিক্ত পরিচালক পরিতোষ কুমার কুন্ডুর কাছে প্রতিবেদন চান। ওই প্রতিবেদনের ভিত্তিতে চাকরি শৃঙ্খলাবিধি ভঙ্গের অভিযোগে পরিদর্শক আবদুল মালেক তালুকদারকে বরিশাল থেকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। আরও তদন্ত করে তার বিরুদ্ধে পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে। সম্প্রতি ওই যুবককে নির্যাতনের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। ভিডিওতে দেখা যায়, বরিশাল মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের পরিদর্শক আবদুল মালেক তালুকদারের অফিস কক্ষে হ্যান্ডকাফ পরিহিত এক যুবকের হাতে পাঁচ পিস ইয়াবা দিয়ে স্বীকারোক্তি আদায়ের চেষ্টা করা হচ্ছে। মাদকের কথা স্বীকার না করায় তাকে লাঠি দিয়ে মারধর করেন পরিদর্শক মালেক। এ সময় নির্যাতিত যুবক পানি পান করতে চাইলেও পানি না দিয়ে তাকে অশ্রাব্য ভাষায় গালাগাল করা হয়। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ভুক্তভোগী যুবক মারুফ বরিশাল নগরীর কাউনিয়া বিসিক রোডের বেগের বাড়ির এলাকার বাদশা সিকদারের ছেলে। গত ২২ সেপ্টেম্বর রাত ৮টার দিকে পরিদর্শক আবদুল মালেকের নেতৃত্বে মারুফকে নগরীর কাউনিয়া বিসিক রোড থেকে আটক করা হয়। পরে মারুফের কাছ থেকে পাঁচ পিস ইয়াবা উদ্ধার দেখিয়ে ওই রাতেই নগরীর কাউনিয়া থানায় একটি মামলা করেন পরিদর্শক আবদুল মালেক। মারুফের স্বজনরা জানান, ২২ সেপ্টেম্বর রাতে মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর থেকে ফোন দিয়ে জানানো হয় মারুফকে ইয়াবাসহ আটক করা হয়েছে। এরপর পরিবারের সদস্যদের যোগাযোগ করতে বলা হয়। পরে মারুফের বিরুদ্ধে মাদক মামলা দিয়ে কাউনিয়া থানা পুলিশের কাছে সোপর্দ করা হয়। ওই মামলায় ১৭ দিন কারাগারে ছিলেন মারুফ। পরে জামিনে থেকে মুক্ত হলেও পরবর্তীতে হয়রানির আশঙ্কায় নির্যাতনের বিষয়টি গোপন রাখেন মারুফ ও তার পরিবারের সদস্যরা। তবে বরিশাল মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের পরিদর্শক আবদুল মালেক তালুকদারের দাবি, মারুফ সিকদার কাউনিয়া এলাকার একজন চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী। তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলা রয়েছে। তাকে ইয়াবা দিয়ে ফাঁসানোর অভিযোগ সত্য নয়। তিনি আরও জানান, তার শরীর তল্লাশি করে ইয়াবা পাওয়া গিয়েছিল। তার সঙ্গে মাদক কেনাবেচায় অন্য কেউ জড়িত রয়েছে কি-না তা জানতে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছিল। তবে নির্যাতন করা হয়নি। বরিশাল থেকে প্রত্যাহারের আদেশের বিষয় জানতে চাইলে মালেক তালুকদার বলেন, এ ধরনের কোনো আদেশ এখনো পাইনি। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের বরিশালের বিভাগীয় প্রধান অতিরিক্ত পরিচালক পরিতোষ কুমার কুন্ডু জানান, পরিদর্শক আবদুল মালেক তালুকদারের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের প্রতিবেদন প্রধান কার্যালয় থেকে চাওয়া হয়েছিল। প্রতিবেদন পাঠানো হয়েছে। এরপর জানতে পেরেছি পরিদর্শক আবদুল মালেককে ঢাকা কার্যালয়ে বদলি করা হয়েছে।
Leave a Reply