মঠবাড়িয়া প্রতিবেদক ॥ পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ায় সাফা ডিগ্রী কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ হারুন অর রশীদের বিরুদ্ধে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। ৪ লক্ষ টাকার চেক জালিয়াতি মামলাসহ মোট ৪ টি মামলা বিচারাধীন রয়েছে। এর মধ্যে ২ টি আদালতে এবং অপর ২ টি মামলা দুদকের কাছে রয়েছে।
স্থানীয় এবং কলেজ সূত্রে জানা যায়, সাফা ডিগ্রী কলেজের অধ্যক্ষ হারুন অর রশীদের চাকুরীর মেয়াদ শেষ হওয়ার পর ০৩.০৪.২০১৯ তাং পর্যন্ত ১ বছর এক্সটেনশনে ছিলেন তিনি। এক্সটেনশনের মেয়াদ শেষ হওয়ার পূর্বেই তিনি আরও ১ বছর এক্সটেনশনে থাকার জন্য ভুয়া কাগজপত্র তৈরি করেন এবং এবং ঐ ভুয়া কাগজের বলে ০৭.০৪.২০১৯ তারিখে বৈশাখী ভাতার বিল কাগজে অবৈধভাবে স্বাক্ষর করে কলেজের সিনিয়র শিক্ষক বিনয় কৃষ্ণ বলের মাধ্যমে কলেজ গভর্নিং বডির সভাপতির নিকট অগ্রগামী করেন। কিন্তু এক্সটেনশনের মেয়াদ সভাপতির অবগত থাকায় উক্ত অধ্যক্ষের স্বাক্ষর অকার্যকর বলে বিল কাগজে সহি না দিয়ে ফেরত দেওয়ার পরও সাবেক অধ্যক্ষ হারুন অর রশীদ ভুয়া এক্সটেনশনের কাগজপত্র নিয়া এখনও চুক্তিভিত্তিক ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করার চেষ্টা চালিয়ে যাওয়ায় কলেজের সুনাম ক্ষুন্ন হওয়ার পাশাপাশি কলেজের সুষ্ঠু পরিবেশ বিঘিœত হচ্ছে।
এ ব্যাপারে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার শাহজাহান আলী শেখ জানান,”আমি যতটুকু জানি বিধিমালা অনুযায়ী অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হারুণ অর রশীদের দায়িত্বে থাকার কোন সুযোগ নেই। তারপরও তিনি স্বেচ্ছায় পদ ছাড়তে রাজি না হওয়ায় গত সপ্তাহে প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী, অভিভাবক এবং কিছু শিক্ষক-কর্মচারীরা তাঁকে তাঁর কার্যালয়ের ভিতরে রেখে তালা মেরে দেন। পরে থানা পুলিশ তাঁকে উদ্ধার করে।” বয়স ৬০ বছর পূর্ন হওয়ার পর বেসরকারী কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রতিষ্ঠান প্রধান/সহঃ প্রধান শিক্ষক-কর্মচারীকে কোন অবস্থাতেই পুনঃনিয়োগ বা চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেয়া যাবে না। বেসরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের (স্কুল ও কলেজ) জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালায় এ নিয়মের কথা বলা হয়েছে। নতুন এ নিয়ম যুক্ত করে গত বছরের ১২ জুন এ নীতিমালা জারি করে শিক্ষা মন্ত্রনালয়।
এমতাবস্হায় উক্ত পরিপত্র অনুযায়ী বেসরকারী স্কুল কলেজের প্রধান শিক্ষক/অধ্যক্ষের চাকুরীর মেয়াদ ৬০ বছর পূর্ন হলে, সহকারী প্রধান শিক্ষক অথবা সহকারী প্রধান শিক্ষক না থাকলে জ্যেষ্ঠতম শিক্ষকের নিকট প্রধান শিক্ষক বা অধ্যক্ষের দায়িত্ব হস্তান্তর করতে হবে। এর ব্যত্যয় হলে বিধি বহির্ভূত হিসেবে গণ্য হবে বলেও আদেশে উল্লেখ করা হয়েছে। তাই অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হারুন অর রশীদ বিধিমালা জেনেও তাঁর চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের মেয়াদ বাড়ানোর অপচেষ্টায় হতাশ হয়েছেন অনেকেই। একজন শিক্ষিত মানুষের এ ধরনের আচরণ শিক্ষাবান্ধব নয় বলেই মনে করেণ সবাই।
উল্লেখ্য যে, বর্তমান সাময়িক ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের নামও হারুন অর রশীদ ডাক নাম সালেহ উদ্দিন যিনি সংশ্লিষ্ট কলেজের বাংলা বিষয়ের প্রভাষক। তিনি জানান, অবসরপ্রাপ্ত হারুন অর রশীদ এই বছরেন ফেব্রুয়ারী মাসে আমাকে কলেজ প্যাডে লিখিতভাবে সাময়িক দায়িত্ব দিয়ে ৩ মাস কলেজে অনুপস্থিত থাকার পর ৩১.০৩.২০১৯ তারিখে কলেজে আসলে কলেজের হিসাব নিকাশ নিয়ে শিক্ষক-কর্মচারীদের সাথে বাক বিতন্ডার একপর্যায়ে অপ্রত্যাশিত ঘটনা ঘটায় তিনি শারীরিকভাবে কিছুটা লাঞ্ছিত হন। তিনি আরও জানান, কলেজ গভর্নিং বডির সভাপতি মহোদয়ের সাথে কথা হয়েছে। অল্পের মধ্যেই মিটিং এর মাধ্যমে জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে স্থায়ীভাবে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব দেয়া হবে।
সাফা ডিগ্রী কলেজের প্রভাষক এবং সাফা বঙ্গবন্ধু কলেজের গভর্নিং বডির সভাপতি শাকিল আহমেদ জানান,”সাবেক অধ্যক্ষ হারুন অর রশীদ ঈর্ষান্বিত হয়ে আমার বিরুদ্ধে এইচএসসি পরীক্ষা সংক্রান্ত যে অপপ্রচার চালাচ্ছে তা সম্পূর্ন বানোয়াট ও ভিত্তিহীন। আমরা ইতোমধ্যে কিছু পত্রিকায় এর প্রতিবাদ দিয়েছে।” তবে এ ব্যাপারে অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হারুন অর রশীদের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে সংযোগ কেটে দেন। এরপর বারবার কথা বলার চেষ্টা করা হলেও তিনি কল রিসিভ করেণনি।
Leave a Reply