দখিনের খবর ডেস্ক ॥ নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায় বারবার আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ সংঘর্ষ, প্রাণহানি ও রক্তপাতের ঘটনায় চরম ক্ষুব্ধ আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি ওই ঘটনাগুলোয় জড়িত সব পক্ষের বিরুদ্ধেই কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন। তিনি গত শনিবার আওয়ামী লীগের সংসদীয় বোর্ড ও স্থানীয় সরকার জনপ্রতিনিধি মনোনয়ন বোর্ডের এক যৌথ সভায় একাধিকবার তাঁর কঠোর অবস্থানের বিষয়টি ব্যক্ত করেন। গণভবনে অনুষ্ঠিত সকাল থেকে সন্ধ্যা অবধি চলা ওই সভায় উপস্থিত একাধিক নেতা বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। বৈঠকে উপস্থিত একাধিক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, গতকালের যৌথ সভাটি লক্ষ্মীপুর-২ আসনের উপনির্বাচন এবং ১১টি পৌরসভা ও ৩৭১টি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী চূড়ান্ত করার জন্য হলেও বাছাইয়ের ফাঁকে বা বিরতির পরে নোয়াখালীতে আওয়ামী লীগের কোন্দলের বিষয়টি নিয়ে কথা বলেন শেখ হাসিনা। যৌথ সভায় উপস্থিত একটি সূত্র জানায়, বসুরহাট পৌরসভার মেয়র ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের ছোট ভাই আবদুল কাদের মির্জার সঙ্গে নোয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক একরামুল করিম চৌধুরী ও ফেনীর সংসদ সদস্য নিজাম হাজারীসহ আরো অনেকের প্রকাশ্যে বিবাদ ও রক্তপাতের ঘটনায় চরম ক্ষোভ জানান শেখ হাসিনা। ক্ষুব্ধ প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি এত কষ্ট করে মানুষের জন্য কাজ করি। আর এরা সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট করে। আমি কাউকেই ছাড় দেব না। যারা দায়ী সবাইকে এর জন্য মূল্য দিতে হবে।’ তিনি আরো বলেন, ‘যত অর্জন আমি করি এরা সব অর্জন ধূলিসাৎ করে দেয়। আমাদের পক্ষে ভোটার বাড়ছে। কিন্তু এই ভোটের ফলও ঘরে তুলতে পারি না এদের বিবাদের কারণে। আমাদের জনসমর্থন বাড়ছে, কিন্তু সেটার ফল আমরা কেন ঘরে তুলতে পারব না! এই সমস্ত লোকের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেব।’ জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর একজন সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, উনি (শেখ হাসিনা) নোয়াখালীর ঘটনায় খুবই ক্ষুব্ধ। দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার কথা উনি সভায় দুই-তিনবার বলেছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই নেতা আরো বলেন, প্রধানমন্ত্রী আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দল নিয়ে ভীষণ ক্ষুব্ধ। তিনি সারা দেশের দলীয় কোন্দলগুলো নিরসনেরও তাগিদ দিয়েছেন। প্রসংগত, গত দুই মাস ধরে নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায় বারবার আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটছে। সম্প্রতি ১৫ দিনের ব্যবধানে দু’জন নিহত এবং অনেকে গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। অভ্যন্তরীণ এই বিবাদের বিষয়টি প্রথম প্রকাশ্যে আনেন বসুরহাট পৌরসভার মেয়র আবদুল কাদের মির্জা। তিনি নোয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক একরামুল করিম চৌধুরী ও ফেনীর সংসদ সদস্য নিজাম হাজারী, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের স্ত্রীসহ বেশ কয়েকজন প্রভাবশালী নেতার বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তোলেন। এমন পরিস্থিতিতে কাদের মির্জা যাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলেন তাঁদের হয়ে মাঠে নামেন কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান বাদল। ফলে কাদের মির্জার অনুসারীদের সঙ্গে বাদলের অনুসারীদের দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। এ পরিপ্রেক্ষিতে দুই দিন আগে গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে আছেন বাদল। তবে কাদের মির্জার বিরুদ্ধে এখনো কোনো মামলা নেওয়া হয়নি। আওয়ামী লীগের সূত্রগুলো জানায়, গতকালের যৌথ সভায় লক্ষ্মীপুর-২ আসনে দলীয় মনোনয়ন নিয়েও আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী নেতাদের মধ্যে একাধিক মত দেখা যায়। শেষ পর্যন্ত মনোনয়ন পান লক্ষ্মীপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নুরউদ্দিন চৌধুরী নয়ন। যদিও তাঁর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে বলে বৈঠকে আলোচনা ওঠে। সূত্র মতে, আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা দল মনোনীত প্রার্থীদের পক্ষে কাজ করতে সব নেতাকর্মীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। সবাইকে ঐক্যবদ্ধ করে মাঠে নামাতে কেন্দ্রীয় নেতাদের প্রতি নির্দেশ দিয়েছেন। সভায় উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফর উল্যাহ, ড. আব্দুর রাজ্জাক, মুহম্মদ ফারুক খান, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আব্দুর রহমান প্রমুখ।
Leave a Reply