দখিনের খবর ডেস্ক ॥ বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার দণ্ড স্থগিত করে মুক্তির মেয়াদ আরও ছয় মাস বাড়ল। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এ সংক্রান্ত ফাইল অনুমোদনের পর সোমবার (১৫ মার্চ) স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগ থেকে মুক্তির মেয়াদ বাড়িয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। মুক্তির বর্ধিত মেয়াদে খালেদা জিয়া ঢাকার নিজ বাসায় থেকে চিকিৎসা গ্রহণ করবেন এবং এই সময়ে তিনি দেশের বাইরে যেতে পারবেন না বলে প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়েছে। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, সাজাপ্রাপ্ত কয়েদি খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়ে দাখিলকৃত আবেদন এবং আইন ও বিচার বিভাগের আইনগত মতামতের আলোকে ‘দ্য কোড অব ক্রিমিন্যাল প্রসিডিউর’ এর ধারা-৪০১(১) এ দেয়া ক্ষমতাবলে দুটি শর্তে (বাসায় থেকে চিকিৎসা ও বিদেশ না যাওয়া) তার (খালেদা জিয়ার) দণ্ডাদেশ ২৫ মার্চ থেকে ৬ মাসের জন্য স্থগিত করা হলো। এর আগে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. শহিদুজ্জামান খালেদা জিয়ার মুক্তির মেয়াদ বাড়ানোর কথা জানান। বেগম জিয়া এই সময়ে দেশের যেকোনো স্থানে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসা নিতে পারবেন জানিয়ে সিনিয়র সচিব বলেন, ‘তবে তিনি বিদেশে যেতে পারবেন না’। গত ২ মার্চ পরিবারের পক্ষ থেকে দেয়া বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার দণ্ড স্থগিতের মেয়াদ বাড়ানো, মওকুফ এবং শর্ত শিথিল করে বিদেশে পাঠানোর আবেদন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে জমা দেয়া হয়। এই আবেদনের বিষয়ে মতামত দিতে তা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। গত ৮ মার্চ খালেদা জিয়ার সাজা স্থগিত করে মুক্তির মেয়াদ আগের শর্তে আরও ছয় মাস বাড়ানোর বিষয়ে মতামত দেয় আইন মন্ত্রণালয়। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে আইন মন্ত্রণালয়ের মতামতসহ এ সংক্রান্ত সার-সংক্ষেপ প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয়। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেন বকশীবাজার আলিয়া মাদরাসা মাঠে স্থাপিত ঢাকার ৫ নম্বর বিশেষ আদালত। রায় ঘোষণার পর খালেদাকে পুরান ঢাকার নাজিমউদ্দিন রোডে অবস্থিত পুরোনো কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি রাখা হয়। এরপর ৩০ অক্টোবর এই মামলায় আপিলে তার আরও পাঁচ বছরের সাজা বাড়িয়ে ১০ বছর করেন হাইকোর্ট। একই বছরের ২৯ অক্টোবর জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় খালেদা জিয়াকে সাত বছরের সশ্রম কারাদণ্ডের আদেশ দেন একই আদালত। রায়ে সাত বছরের কারাদণ্ড ছাড়াও খালেদা জিয়াকে ১০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। জরিমানা অনাদায়ে আরও ছয় মাসের কারাদণ্ডের আদেশ দেন। পরে কারান্তরীণ অবস্থায়ই চিকিৎসার জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) নেয়া হয় খালেদা জিয়াকে। প্রয়োজনীয় পরীক্ষা শেষে তাকে আবারও কারাগারে পাঠানো হয়। এভাবে কয়েক দফায় তাকে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে এবং হাসপাতাল থেকে কারাগারে নেয়া হয়। মামলা দুটি ষড়যন্ত্রমূলক বলার পাশাপাশি বিএনপি নেতারা খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য মুক্তির দাবি জানিয়ে আসছিলেন। এক্ষেত্রে তারা আদালতেও আইনি লড়াই চালিয়ে যাচ্ছিলেন। কিন্তু বরাবরই বিফল হতে হয়েছে বিএনপির নেতৃত্বকে। এর মধ্যে বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা দিলে বিএনপি নেতারা খালেদার মুক্তির জোর দাবি তোলেন। পরিবারের পক্ষ থেকেও বেগম জিয়ার মুক্তির জন্য সরকারের কাছে আবেদন জানানো হয়। সেই প্রেক্ষাপটে নির্বাহী আদেশে দণ্ড স্থগিত করে কারাবন্দি খালেদা জিয়াকে সরকার শর্তসাপেক্ষে ছয় মাসের জন্য মুক্তি দেয়। প্রথম দফা মুক্তির মেয়াদ শেষ হয়ে এলে গত বছরের ২৫ আগস্ট বেগম জিয়ার পরিবারের পক্ষ থেকে স্থায়ী মুক্তি চেয়ে আবেদন করা হয়। এই পরিপ্রেক্ষিতে সরকার দ্বিতীয় দফায় গত ২৫ সেপ্টেম্বর থেকে ছয় মাসের জন্য তার মুক্তির মেয়াদ বাড়ায়।
Leave a Reply