বরগুনা প্রতিনিধি ॥ বরগুনার আমতলীতে সেতু নির্মাণ না করেই এক কোটি ৪৭ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে স্থানীয় এক ইউপি চেয়ারম্যান ও এলজিইডির তিন প্রকৌশলীসহ ছয় জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। সোমবার (১৫ মার্চ) বিকালে বরগুনার বিশেষ জজ আদালতে মামলাটি দায়ের করেন অ্যাড. মো. মহাসীন। আদালতের বিচারক মো. হাসানুল ইসলাম মামলাটি গ্রহণ করে দুদকের বরগুনা ও পটুয়াখালীর সমন্বিত কার্যালয়ের উপ-পরিচালককে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ প্রদান করেন। একইসঙ্গে ঘটনায় কি ধরনের আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে তা আগামী ২৭ এপ্রিল আদালতকে জানানোর নির্দেশ দেওয়া হয়। বাস্তবে সেতু নির্মাণ না করে কাগজে-কলমে দুটি সেতুর নির্মাণ দেখিয়ে এক কোটি ৪৭ লাখ ১৯ হাজার ৯৫২ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে দায়ের করা এ মামলায় অভিযুক্ত করা হয়েছে, আমতলী উপজেলার চাওড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. বাদল খান, তার ছোট ভাই আলমাস খান, এলজিইডি বরগুনার সাবেক নির্বাহী প্রকৌশলী মো. নাজমুল হুদা, এলজিইডি আমতলী উপজেলার সাবেক প্রকৌশলী মো. আতিয়ার রহমান, সাবেক উপ-সহকারী প্রকৌশলী সাইফুল ইসলাম এবং সাবেক হিসাবরক্ষক আনসার আলী। এদের মধ্যে আতিয়ার রহমান বর্তমানে তহসিল অফিস নির্মাণ প্রকল্পে ঢাকায় চুক্তিভিত্তিক কর্মরত আছেন। আর সাইফুল ইসলাম আছেন বরগুনার বামনা উপজেলার প্রকৌশলী হিসেবে। এছাড়া হিসাবরক্ষক আনসার আলী কর্মরত আছেন এলজিইডির পটুয়াখালী জেলার সদর উপজেলায়। মামলা সূত্রে জানা গেছে, আমতলী উপজেলার হলুদিয়া ইউনিয়নে এলজিইডির অর্থায়নে এক কোটি ছয় লাখ ১০ হাজার ২১০ টাকা ব্যয়ে ৯১ মিটার (২৯৮.৪৮ ফুট) দৈর্ঘ্যের একটি লোহার সেতু নির্মাণের কাজ পান বাদল খান। এরপর এ সেতু নির্মাণের কার্যাদেশ দেখানো হয় ১ অক্টোবর ২০০৭ এবং কাজ সমাপ্তের তারিখ দেখানো হয় ১ অক্টোবর ২০০৮। এছাড়াও একই ইউনিয়নে এলজিইডির অর্থায়নে ৪১ লাখ ৯ হাজার ৭৪২ টাকা ব্যয়ে ২৫ মিটার (৮২ ফুট) দৈর্ঘ্যের একটি লোহার সেতু নির্মাণের কাজ পান বাদল খানের ভাই আলমাস খান। এরপর এ সেতুর নির্মাণের কার্যাদেশ দেখানো হয় ১ জানুয়ারি ২০০৯ এবং কাজ সমাপ্তের তারিখ দেখানো হয় ৩০ জুন ২০০৯। কিন্তু বাস্তবে এ সেতু দুটি নির্মাণ শুরুতো দূরের কথা, কোনও কাজ না করেই তৎকালীন এলজিইডি বরগুনার নির্বাহী প্রকৌশলী মো. নাজমুল হুদা, এলজিইডি আমতলী উপজেলার প্রকৌশলী মো. আতিয়ার রহমান, উপ-সহকারী প্রকৌশলী সাইফুল ইসলাম এবং হিসাবরক্ষক আনসার আলী সহায়তায় জালিয়াতির মাধ্যমে প্রকল্পের পুরো টাকা তুলে নেন। এ বিষয়ে মামলার বাদী অ্যাড. মো. মহাসীন বলেন, ঠিকাদার কাজে অনিয়ম করে সেটা ভিন্ন একটি বিষয়। কিন্তু একেবারে কাজ না করেই দুটো সেতুর টাকা আত্মসাতের বিষয়টি সহ্য করার মতো নয়। তিনি আরও বলেন, সেতুতো লুকিয়ে রাখা যায় না। তারা পুকুর চুরিকেও হার মানিয়েছে। তাই তাদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া প্রয়োজন। একজন সচেতন মানুষ হিসেবে তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির জন্য আমি মামলা দায়ের করেছি। এ বিষয়ে মামলার বাদী পক্ষের আইনজীবী মাহবুবুল বারী আসলাম বলেন, অভিযোগের স্বপক্ষে সব তথ্য উপাত্ত সংযোজন করে আমরা মামলাটি দায়ের করেছি। এরপর মামলাটি আমলে নিয়ে আদালত দুদকের বরগুনা ও পটুয়াখালীর সমন্বিত কার্যালয়ের উপ-পরিচালককে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন। মামলার অভিযোগের বিষয়ে তৎকালীন ঠিকাদার ও বর্তমান চেয়ারম্যার মো. বাদল খান ও তার ভাই আলমাস খানের মুঠোফোনে একাধিকবার কথা বলার চেষ্টা করেও তাদেরকে পাওয়া যায়নি। এছাড়াও সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাদের কাউকে পাওয়া যায়নি।
Leave a Reply