কলাপাড়া প্রতিনিধি ॥ পটুয়াখালীর কলাপাড়ার কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতে বালুর ভাস্কর্যে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে বাঙালীর মুক্তি সংগ্রামের ইতিহাস। ৫২’র ভাষা আন্দোলন, বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ, বাঙালি জাতির ওপর পাকিস্তানি হানাদারদের বর্বরতার নানা চিত্র। রাজশাহী ও খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের শিক্ষার্থীরা গত আটদিন ধরে এ ভাস্কর্য নির্মান করেছে। পটুয়াখালী জেলা পুলিশ বঙ্গবন্ধুৃর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষ্যে এ ব্যতিক্রমী এ ভাস্কর্য নির্মানের উদ্যোগ নেয়। যা দেখতে কুয়াকাটায় ভ্রমনে আসা পর্যটকরা সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত ভীড় করছে। আগামীকাল ১৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন উপলক্ষ্যে এ ভাস্কর্য জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করা হবে। তবে সৈকতের কোল ঘেষে এ ভাস্কর্য নির্মান করায় সাগরের জোয়ারের যেকোন সময় প্লাবিত হয়ে ভাস্কর্যটি নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা করছেন কুয়াকাটার পর্যটন সংশ্লিষ্টরা। পর্যটনকেন্দ্র কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতে সারা বছরই দেশী-বিদেশী পর্যটকদের পদচারনায় মুখর থাকে। সৈকতে দাঁড়িয়ে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের দৃশ্য উপভোগ ছাড়াও পর্যটকরা ঘুরে বেড়ায় সৈকতের মনোরম পর্যটন স্পট গুলোতে। এখানে ভ্রমনে আসা পর্যটকদের ভিন্ন বিনোদনের জন্য মুজিব জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে কুয়াকাটা সৈকতে প্রথমবারের মতো দর্শনীয় বালুর এ শিল্পকর্ম তৈরির উদ্যোগ নেয় পটুয়াখালী জেলা পুলিশ। বালুর ভাস্কর্যে বাংলাদেশের মানচিত্রের ঠিক মাঝখানে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি। ভাস্কর্যের শুরুতে স্থান পায় মহান ভাষা আন্দোলনের নানা চিত্র। এ ছাড়া ছয় দফা, নির্বাচন, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ, বাঙালি জাতির ওপর পাকিস্তানি হানাদারদের বর্বরতার এবং মুক্তিযুদ্ধের বিজয় উল্লাসের চিত্র ফুটে উঠেছে। ভাস্কর্যের গায়ে অ আ ক খ থেকে শুরু করে লেখা, ‘আমার সোনার বাংলা’ ‘রক্ত দিয়ে নাম লিখেছি’, ‘মাতৃভাষা বাংলা চাই’ এমন নানা শ্লোগান। রাতের আঁধারে এ ভাস্কর্য দেখার জন্য করা হয়েছে আলোর ব্যবস্থা। কুয়াকাটায় ভ্রমনে এসে এ ভাস্কর্য দেখে খুশি সপ্তম শ্রেণির তন্বি ও নবম শ্রেণির আদ্রিকা। তারা জানায়, পাঠ্য বইয়ে এতোদিন তারা মুক্তিযুদ্ধ,ভাষা আন্দোলনে বীর সেনানীদের আত্মত্যাগের কথা পড়েছেন। বালুর ভাস্কর্যে এ দৃশ্য ফুটিয়ে তোলায় তারা খুমি। একই সাথে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিটি ছিলো সকল ভাস্কর্যের মাঝে। যাতে বোঝানো হয়েছে বাঙালী মুক্তি সংগ্রামের সকল ক্ষেত্রেই বঙ্গবন্ধু ছিলো কেন্দ্রবিন্দুতে। পর্যটক রিগান কবির জাানান, এ ভাস্কর্যে বাঙালী জাতির আন্দোলনের রুপরেখা ভাষা আন্দোলন থেকে মহান মুুিক্তযুদ্ধে বিজয়ের কথা ফুটে উঠেছে। বঙ্গবন্ধু ও বাঙালীর সংগ্রামের ইতিহাস ফুটিয়ে তোলা হয়েছে নিপুন কারুকাজে। যেখানে বঙ্গবন্ধুর জেলজীবন থেকে শুরু করে ৭মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণও তুলে ধরা হয়েছে। কুয়াকাটা ট্যুরিষ্ট অপারেটর টোয়াকের সভাপতি রুমান ইমতিয়াজ তুষার বলেন, কুয়াকাটা সৈকতে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যসহ মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতার বিভিন্ন চিত্র তুলে ধরায় জেলা পুলিশের এ উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন কুয়াকাটার পর্যটন ব্যবসায়ীরা। সৈকতে নির্মিত এ ভাস্কর্যটি কুয়াকাটায় স্থায়ীভাবে কোথাও নির্মিত হলে মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধুর ত্যাগের গল্প জানতে ও শিখতে পারবে পর্যটকসহ নতুন প্রজন্মের শিক্ষার্থীরা। কুয়াকাটায় বাসিন্দারা বলেন, অসাধারণ একটি ভাস্কর্য দশদিন প্রদর্শনীর পর যেন নষ্ট না হয় সেদিকে খেয়াল রেখে ভাস্কর্যটি একটি নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিয়ে প্রতিদিনই কুয়াকাটায় ভ্রমনে আনা পর্যটকরা এ ভাস্কর্যং দেখতে পারবে। জানতে পারবে বাঙালীর ভাষা আন্দোলন থেকে মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিবৃত্ত। যেখানে প্রতিটি ক্ষেতেই অবদান রয়েছে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর। ভাস্কর্য নির্মাণে ব্যস্ত সময় পার করা রাজশাহী বিশ্বকিদ্যালয়ের চারুকলার শিক্ষার্থী অনুপম ধর বলেন, চারুকলার ছয় শিক্ষার্থী গত ৯ মার্চ থেকে সৈকতে বালুচরে ভাস্কর্য নির্মাণ করছেন। ৪০ ফুট দৈর্ঘ্য এবং ১০ ফুট প্রস্থের এ ভাস্তর্যে বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন স্মরণে আমাদের ভাষা আন্দোলন থেকে মুক্তিযুদ্ধের বিজয় উল্লাস সবই ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করেছেন। এ ভাস্কর্যে চোখ বুলালেই আমাদের সংগ্রামের ইতিহাস সকলের চোখে পড়বে। তারা চেষ্টা করেছেন এক ফ্রেমে গোটা বাংলাদেশকে তুলে ধরতে। ভাস্কর্য নির্মানের বিষয়ে পটুয়াখালীর পুলিশ সুপার মোহাম্মদ শহিদুল্লাহ(পিপিএম)বলেন, কুয়াকাটা সৈকতে ভাস্কর্য নির্মানের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে মুজিব জন্মশতবর্ষ, স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী, বাংলাদেশ স্বল্প উন্নয়ন দেশ থেকে উন্নয়শীল দেশে রূপান্তরের চূড়ান্ত সুপারিশপ্রাপ্তি ও স্বাধীনতা দিবস উদ্যাপন। মুজিব জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে ১৭ মার্চ বিকালে আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হবে এই ভাস্কর্যের। ভাস্কর্যের প্রদর্শনী চলবে ২৬ মার্চ পর্যন্ত।
Leave a Reply