তৌহিদ হোসেন উজ্জ্বল, বাউফল ॥ বেড়েছে তরমুজের আবাদ। সম্ভাবনাও সৃষ্টি হয়েছে বাম্পার ফলনের। ইতিমধ্যে ফুল-ফলে মাঠ সবুজে ছেয়ে ফল বড় হতে শুরু করছে গাছে গাছে। আর মাত্র সপ্তাহ খানেক পড়েই কৃষক বাজাতে তুলতে শুরু করবে পটুয়াখালীর বাউফলের চরের সু-স্বাদ রাঙা তরমুজ। উপজেলা কৃষি অফিস ও স্থানীয় কৃষকরা জানায়, বিভিন্ন রবি ফসলের সঙ্গে চলতি মৌসুমে ৫০হেক্টরে ক্ষীরা, ১৬০হেক্টরে বাঙ্গি ও ৯শ’ ৫০হেক্টরে তরমুজের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারিত হয়েছে। তবে লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়েছে এই তরমুজে। আগেরবার করোনার লকডাউনে পরিবহন ও বিপনন সমস্যায় লাভের মুখ দেখেননি চরকচ্ছবিয়া, চরওয়াডেল, রায়সাহেবের চর, চরঈশান, মমিনপুর চর, বাসুদেবপাশা, চরশৌলাসহ বিভিন্ন চরের তরমুজ চাষিরা। বাকি সময় আবহাওয়া অনুকুলে থাকলে এবার তরমুজের বাম্পার ফলনের আশা চাষিদের। তেঁতুলিয়ার বুক চিরে জেগে ওঠা চরকচ্ছবিয়ায় ১৫ একর জমি লীজ নিয়ে সামান্য ক্ষীরা ও শসাসহ সিনজেনটার ড্রাগন জাতের তরমুজের চাষ করেছেন দীর্ঘ ১৬-১৭ বছরের অভিজ্ঞ চাষি পাশের গলাচিপা উপজেলার চরকাজলের বাবুল খান। অতিজোয়ার, লবন পানির হানা আর একই জমিতে বারবার কীটনাশক ও সার-ওষুধ ব্যাবহারের কারণে নিজ এলাকায় আগেরমতো এখন আর তরমুজের ভাল ফলন মেলে না উল্লেখ করে তিনি জানান, তরমুজ চাষের বিভিন্ন বিষয়ে পরামর্শ নিচ্ছেন পাশের চাষিরা। তার ক্ষেতে ১৫ হাজারের মতো মাদায় রয়েছে তরমুজ গাছ। আগেরবার করোনার লকডাউনে পরিবহন ও বিপননে বড় ধরণের ধকল গেছে চাষিদের। এবারে বৃষ্টিপাত মোটেই না থাকায় লতাপোকার মতো এক নতুন এক ধরণের কিড়া পোকাড় আক্রমন দেখা যাচ্ছে। দিনের বেলায় অসংখ্য পোকা একই সঙ্গে ফলের নীচে আশ্রয় নিতে দেখা যায়। ফলের চামড়া খেয়ে ক্ষতি করছে। আবার মাঝে-মধ্যে হঠাৎ করে দু’একটি গাছ মড়ে যাওয়ার দৃশ্য ধরা পড়ছে। তবে বাকি সময় অতিজোয়ার কিংবা শীলা-বৃষ্টির মতো বৈরী আবহাওয়া না হলে ও আড়তে দাম ভাল পেলে তরমুজে লাভবান হবেন চাষিরা। একই চরের তরমুজ চাষি বাকলা তাঁতেরকাঠি গ্রামের ফিরোজ চৌধুরী জানান, অন্যান্য এলাকার তুলনায় মিষ্টি ও স্বাদে বাউফলের চরের রাঙা তরমুজের সুনাম রয়েছে। আগেরবারের ধকল কাটিয়ে উঠতে স্থানীয় কালাইয়া বানিজ্যবন্দরের হারুন-অর-রশিদ নামে সিনজেনটার একজন ডিলালের কাছ থেকে ড্রাগন জাতের বীজ সংগ্রহ করে সামন্য টমেটো, ক্ষীরা ও বাঙ্গীসহ ৭ একর জমিতে তরমুজ চাষ করেছেন। টমেটো ও ক্ষীরা শেষে ইতোমধ্যে বাঙ্গি তুলতে শুরু করেছেন তিনি। ফল বেড়ে ওঠায় সপ্তাখানের মধ্যেই তরমুজ কাটা শুরু হবে তার ক্ষেতের। তিনি আরো জানান, ড্রাগন জাতের ১০০ গ্রামের প্যাকেট বীজ আগেরবার ২ হাজার ২শ’ ৩০ টাকায় পাওয়া গেলেও এবারের মূল্য কিছুটা বেশি পড়েছে। বীজ সংগ্রহে আগের মতো সিন্ডিকেটের কারসাজি না থাকলেও সার-ওসুধের দাম বেড়েছে। বিভিন্ন চরে এবার তরমুজের চাষ বেড়েছে উল্লেখ করে এরা জানান, বস্তা প্রতি (৫০ কেজি) ৮শ’ ৫০ টাকা মুল্যে ইউরিয়া সার পাওয়া গেলেও ড্যাব সার কিনতে হচ্ছে ১ হাজার ৫শ’ টাকায়। ড্যাব সারের দাম আগের তুলনায় বস্তাপ্রতি প্রায় সাড়ে ৩শ’ টাকা বেড়েছে। আগের চেয়ে দাম বেড়েছে টিএসপি, দস্তা, জিপসাম, এমওপিসহ এসিআইয়ের বিরি ফায়ার, সিনজেনটার এমিস্টার টপ, গ্রোজিন, ক্যারাটে, ম্যাগমা, রেডিমেট গোল্ড, ক্রুজার, থিউবিট, ভর্টিমেঘ ও স্কোরের মতো কীটনাশকের। জলবায়ু পরিবর্তণের কারণে দিন দিন কৃষিতে বিপদ-আপদ বাড়ছে উল্লেখ করে ফিরোজ চৌধুরী বলেন, ‘এবছর বৃষ্টিপাত মোটেই না থাকায় সেচের খরচ পড়েছে বেশি। এছাড়া কিড়া পোকাড় মতো ফলের নীচে নতুন একধরণের পোড়ার অক্রমনও দেখা গেছে। সপ্তাহখানেক পড়েই তরমুজ কাটা শুরু হবে। তবে আর কোন বিপদ-আপদ না হলে এবার লাভের নাগাল পাবেন চাষিরা।’ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. মনিরুজ্জামান জানান, ‘লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে এবছর তরমুজের আবাদ বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলের নীচে আশ্রয় নেওয়া ক্রিড়া পোকার মতো নতুন এক ধরণের পোকার কথা জানা গেছে এবং বিষয়টি নিয়ে উর্ধ্বতন বিষেশজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলা হচ্ছে। নিয়মিত মাঠে ছুটে গিয়ে কৃষকদের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। বাঙ্গি, ক্ষীরা ও তরমুজের বাম্পার ফলন পাবেন চাষিরা।’
Leave a Reply