মো: লুৎফুল হাসান রানা, কলাপাড়া প্রতিনিধি ॥ উপকূলবর্তী এলাকায় লবনাক্ত জমিতে লবণাক্ত সহিষ্ণু নতুন জাতের গম উদ্ভাবন করেছেন গবেষকরা। কলাপাড়ার নীলগঞ্জ ইউনিয়নের হাজিপুর গ্রামের সোনাতলা নদীর পাড়ে লবনাক্ত জমিতে গম চাষে সফলতা পেয়েছেন। এর ফলে এলাকার হাজার হাজার একর পতিত জমি চাষাবাদের আওতায় আসবে। উৎপাদন বাড়বে খাদ্য শস্যের। খাদ্য ঘাটতির সাগর পাড়ের এলাকা পরিনত হবে খাদ্য উদ্বৃত্ত এলাকা হিসেবে। দীর্ঘ চার বছর লবনাক্ত জমিতে গবেষনার পরে এমনটাই জানিয়েছেন গবেষনায় সংশ্লিষ্টরা। বাংলাদেশ গম ও ভূট্টা গবেষনা ইনস্টিটিউট এর সাইন্টিফিক অফিসার ড. এম, মুস্তফা খান জানান, এ অঞ্চলে শুধু লবণাক্তাই সমস্য নয়। সেচযোগ্য পানিরও সমস্যা রয়েছে। মূলত: এই দুই সমস্যার করানে এই অঞ্চলে এক লক্ষ হেক্টরেরও বেশি জমি শুস্ক মৌসুমে অনাবাদী থাকে। এসব জমিকে আবাদ যোগ্য করার লক্ষে অস্ট্রেলিয়ার এসিআইএআর এবং বাংলাদেশের কেজি এফ এর অর্থায়নে ইউনিভার্সিট অব ও ওয়ের্স্টান অস্ট্রেলিয়া, সিএস আইআরও,বাংলাদেশে কৃষি গবেষনা ইনস্টিটিউট, বাংলাদেশ গম ও ভূট্ট গবেষনা ইনস্টিটিউট, বাংলাদেশ কৃষি বিশ^বিদ্যারয়, এগ্রেরিয়ান রিসার্চ ফাউন্ডেশন যৌথ প্রকল্পের আওতায় ২০১৭ সাল থেকে গবেষনার কাজ শুরু করেন। তিনি আরো বলেন, তারা এই প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলের জন্য লবণাক্ততা ও প্রতিকূলতা সহিষ্ণু গম ও ডাল জাতীয় ফসলের জাত ও প্রযুক্তি উদ্ভাবন করা। এই প্রকল্পের আওতায় বাংলাদেশ গম ও ভূট্টা গবেষনা ইনস্টিটিউট এবং অস্ট্রেলিয়ার সিএসআইআরও যৌথভাবে গম ফসলের জাত এবং প্রযুক্তি উদ্ভাবনে গত চার বছর ধরে কাজ করছেন। প্রকল্পের আওতায় নপ্রথম দুই বছরের গবেষনা থেকে বাংলাদেশ গম ও ভূট্টা গবেষনা ইনস্টিটিউট কতৃক উদ্ভাবিত দুইটি অগ্রবর্তী লাইন বিএডাব্লিউ-১১৪৭ ও বিএডাব্লিউ-১২৯০ কে লবণাক্ততা সহিষ্ণু জেনোটাইপ হিসেবে সনাক্ত করা হয়েছে। এই দুইটি লবণাক্ত সহিষ্ণু জাতের সাথে বারিগম ২৫ ও ব্লাস্ট রোগ প্রতিরোধী জিংক সমৃদ্ধ জাত বারিগম ৩৩ দক্ষিনাঞ্চলের তিনটি জেলা পটুয়াখালী,খুলনা ও সাতক্ষীরায় প্রদর্শনী করা হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় ২০১৯-২০২০ মৌসুমে বিএডাব্লিউ জেনোটাইপটি জাতীয় বীজ বোর্ড কতৃক লবণাক্ত সহিষ্ণু জাত হিসেবে অবমুক্তির জন্য মূল্যায়ন করা হয়েছে। এরমধ্যেই কলাপাড়ার নীলগঞ্জ ইউনিয়নের হাজিপুর গ্রামের সোনাতলা নদীর পাড়ে লবনাক্ত জমিতে গম চাষ মাঠ প্রদর্শনী সরজমিনে পরিদর্শন করেছেন বাংলাদেশ গম ও ভূট্টা গবেষনা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড.মো.এছরাইল হোসেন,ইউনিভার্সিটি অব ওয়ের্স্টান অষ্ট্রেলিয়ার ডেপুটি প্রজেক্ট লিডার ড. এম. জি নিয়োগী, বাংলাদেশ গম ও ভূট্টা গবেষনা ইনস্টিটিউটের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড.গোলাম ফারুক, বাংলাদেশ গম ও ভূট্টা গবেষনা ইনস্টিটিউটের বেজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড.মো.মোস্তফা খান ও কলাপাড়া উপজেলা কৃষি অফিসার আবদুল মান্নান। এ সময় স্থানীয় কৃষকরা উপস্থিত ছিলেন। হাজিপুর গ্রামের গম চাষী কালাম খান বলেন, তিনি এবছর সাড়ে সাত বিঘা পরিত্যক্ত জমিতে গম চাষ করেন। ধান চাষ করতে যে পরিমান খরচ হয় গম চাষে খরচ হয় তার অর্ধেক। তার এ গম চাষ দেখে একই গ্রামের আবুল বাশার ফরাজী দুই বিঘা জমিতে গম চাষ করেন। এছাড়া গিয়াস উদ্দিন হাওলাদার, রহিম ভূইয়াসহ আরও অনেক কৃষক তাদের পরিত্যক্ত জমিতে গম চাষ করেছেন। ইউনিভার্সিটি অব ওয়ের্স্টান অষ্ট্রেলিয়ার ডেপুটি প্রজেক্ট লিডার ড. এম. জি নিয়োগী বলেন,উপকূলীয় অঞ্চলের পতিত জমিতে গম চাষাবাদ করলে গম আমদানীর ওপর নির্ভরতা কমবে। লবণাক্ততা সহিষ্ণু গমের জাত ব্যবহার কওে উপকূলীয় অঞ্চলের বিস্তীর্ন পতিত জমিতে আমন ধানের পর একই জমিতে শুস্ক মৌসুমে গম আবাদ করে কৃষকরা লাভবান হবে এবং দেশ হবে দারিদ্রমুক্ত।
Leave a Reply