রাঙ্গাবালী প্রতিনিধি ॥ দেবদাস, গীতাঞ্জলি, হাজারো প্রশ্নের জবাব ও শেষের কবিতাসহ নানা রকমের বইয়ের মেলা। কি নেই সেখানে? আছে গল্প, উপন্যাস, কবিতার পাশাপাশি একাডেমিক হাজারও বই। মুজিববর্ষে পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলার বড়বাইশদিয়া ইউনিয়নের ফেলাবুনিয়া নামক একটি প্রত্যন্ত গ্রামে এমন একটি পাঠাগার প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। সেনাবাহিনীর লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. জাবেদ হোসেনের উদ্যোগে এ পাঠাগার গড়ে উঠেছে। এলাকায় দরিদ্র অসহায় শিক্ষার্থী, তরুণ, বয়স্কসহ বই প্রেমিদের আকৃষ্ট করতেই এ পাঠাগার প্রতিষ্ঠা করা হয় বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। জানা গেছে, গত ১৭ মার্চ আনুষ্ঠানিকভাবে দুই হাজারের অধিক বই নিয়ে যাত্রা শুরু করে পাঠাগারটি। স্থানীয় সমাজসেবক মরহুম হাফিজুর রহমানের নামানুসারে এই পাঠাগারের নামকরণ করা হয় ‘মরহুম হাফিজুর রহমান পাঠাগার’। সংশ্লিষ্টরা জানান, পাঠাগারে শতাধিক পাঠক নিয়মিত বই পড়ায় মনোনিবেশ করেছেন। শুধু বই পড়ার মধ্যে এখানকার কার্যক্রম সীমাবদ্ধ নয়। বিনোদনের জন্য রয়েছে হারমনিয়াম, তবলা, গিটারসহ নানাবিধ বাদ্যযন্ত্র, খেলাধুলার জন্য ফুটবল ও ক্রিকেট বল-ব্যাটসহ খেলনা সামগ্রী। সরেজমিনে দেখা গেছে, একটি টিনশেড ঘরে পাঠাগারের কার্যক্রম চলছে। সেখানে বইয়ে ধ্যানমগ্ন কয়েকজন পাঠক। যার যার পছন্দমত বই নিয়ে পড়ছেন তারা। এখানে বই পড়তে আসা মাহমুদ হাসান রাজিব বলেন, ‘অবসরে এখানে এসে বই পড়ি। এখানে প্রায় সবধরণের বই পাওয়া যায়। নদীপারের এই মনোরম পরিবেশে বই পড়া একটি আলাদা অনুভূতি। আমি অসংখ্য ধন্যবাদ এবং কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি তাদের প্রতি, যাদের অক্লান্ত পরিশ্রম ও ব্যতিক্রম উদ্যোগে এ পাঠাগারটি নির্মাণ হয়েছে। আশা করছি এমন ব্যতিক্রমী উদ্যোগ সমাজ বিনির্মাণে সহায়ক ভূমিকা রাখবে।’ পাঠাগারের অন্যতম সদস্য শান্ত মাহমুদ বলেন, ‘মুজিববর্ষের চেতনায় একটি মাদকমুক্ত এবং শিক্ষায় অগ্রসর সমাজ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ফেলাবুনিয়া গ্রামের ছাত্র ও তরুণ সমাজের চাহিদা বিবেচনায় একটি পাঠাগার ও সাংস্কৃতিক সংগঠন গড়ে তুলতে লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. জাবেদ হোসেন উদ্যোগী হন। তিনি ব্যক্তিগত প্রচেষ্টায় একটি পাঠাগার স্থাপন করেছেন। পাঠাগারে সাংস্কৃতিক চর্চার জন্য বাদ্যযন্ত্র এবং খেলনা সামগ্রীও রয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের ভালো ফলাফলের জন্য প্রয়োজনীয় বইয়ের চাহিদা মেটাবে এই পাঠাগার। পাশাপাশি সাংস্কৃতিক চর্চা ও খেলাধুলার মাধ্যমে তাদের মানসিক বিকাশ ঘটবে।’ পাঠাগারের প্রতিষ্ঠাতা লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. জাবেদ হোসেন বলেন, ‘এলাকার তরুণ মেধাবী শিক্ষার্থী, তরুণ ও বয়স্ক সব বয়সী লোকদের বই পড়তে উদ্বুদ্ধ করতে একটি পাঠাগার নির্মাণ করেছি। বই পড়তে অভ্যস্ত হলে মানুষের অপরাধ প্রবণতা কমে যায়। এখানে সব শ্রেণির একাডেমিক বইয়ের পাশাপাশি সাধারণ জ্ঞানের বই, ইসলামিক জীবনাদর্শসহ বিভিন্ন ধর্মের গ্রন্থ রয়েছে। তিনি আরো বলেন, ‘মুজিববর্ষ উদ্যাপনের লক্ষ্য নিয়েই আমাদের এই ক্ষুদ্র প্রয়াস। স্বাধীনতা যুদ্ধের ইতিহাস এবং জাতীর পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অবদানকে পরবর্তী প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে সংযোজন করা হয়েছে ১০১টি বই। এভাবেই আমরা নিবেদন করছি জাতির পিতার প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলী।’ আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে দুই হাজার বই দিয়ে শুরু করা হয়েছে। ধাপে ধাপে আরো বই সংগ্রহ করা হবে। আশা করি, সমাজের বৃত্তবানরা আরো ব্যতিক্রমী উদ্যোগ নিয়ে আর্থসামাজিক উন্নয়নে অগ্রণী ভূমিকা রাখবে।’
Leave a Reply