নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে দ্বিতীয় দফায় লকডাউনের প্রথম দিনে বরিশালে তেমন কোন প্রভাব পড়েনি। যে যার মত অবাধে রাস্তায় চলাফেরা করছে। কেউ আবার কেনাকাটায় ব্যস্ত সময় পার করছেন। প্রশাসন কঠোর অবস্থানে থাকলেও নিষেধাজ্ঞার আওতায় থাকা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো অনেকে খুলে বসে আছে। কেউ দোকানের পুরো সার্টার, কেউ আবার অর্ধেক সার্টার খুলে দেদারসে বিক্রি করছে। ফলে নগরীতে ক্রেতা ও পথচারীদের সমাগম ছিলো চোখে পড়ার মতো। এদের মধ্যে কারো মুখে মাস্ক, কারো থুতনির নিচে মাস্ক, আবার কারো মুখে মাস্ক নেই। গণপরিবহন ও যাত্রীবাহী নৌযান চলাচল বন্ধ থাকলেও সড়কগুলোতে রিকশা, অটোরিকশা, সিএনজি, মাহিন্দ্রা অন্যান্য দিনের মতো স্বাভাবিকভাবে চলাচল করছে। সোমবার (৫ এপ্রিল) সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত সরেজমিনে দেখা গেছে, বরিশাল নগরীর ব্যস্ততম সদর রোডে মানুষের সমাগম, পোর্ট রোডে স্বাস্থ্যবিধি না মেনেই চলছে কেনাবেচা, বাজার রোড এলাকায় প্রায় দোকানই খোলা রয়েছে। তবে সদর রোডসহ অন্যান্য রোডের শপিংমল, মার্কেট, লকডাউনের নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়া ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। আবার মোবাইল কোর্ট অভিযানের টের পেলেই মুহূর্তের মধ্যে রাস্তা ও দোকানপাট ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে। ফলে বরিশাল নগরীতে ঢিলেঢালা ভাবে চলছে সরকার ঘোষিত লকডাউন। ইদ্রিস হাওলাদার নামে রিকশা চালক জানান, নামে লকডাউন, কামে নাই। সব মানুষ রাস্তায় নামছে বলেই রিকশা নিয়ে নামছি। রিকশা না চালাইলে খামু কি? রেদোয়ান নামে এক পথচারী জানান, বাসায় ভালো লাগছে না। তাই একটু চা খেতে বের হলাম। সব মানুষই তো বাইরে, আমি একা ঘরে থাকলে কি লাভ? মিথুন সাহা নামে এক স্থানীয় সাংবাদিক জানান, লকডাউনের সংবাদ সংগ্রহে রাস্তায় নেমে দেখি লকডাউনের কোন প্রভাব নেই। যে যার মতো করে কেনাকাটা করছে। অপ্রয়োজনে ঘোরাঘুরি ও আড্ডা দিচ্ছে চায়ের দোকানগুলোতে। সবচেয়ে বেশি লোকসমাগম নগরীর পোর্ট রোডে। সেখানে স্বাস্থ্যবিধি মানার কোন বালাই নেই। ঢিলেঢালা লকডাউন কার্যকর করতে প্রশাসনকে আরও কঠোর ভূমিকা পালন করতে হবে বলেও জানান তিনি। বরিশাল মেট্রোপলিটন (ট্রাফিক) পুলিশের উপ-কমিশনার জাকির হোসেন মজুমদার জানান, সরকারি নির্দেশনায় আন্তজেলা পরিবহন বন্ধ রাখার বিষয়ে উল্লেখ করা থাকলেও ক্ষুদ্র পরিবহন চলাচলে নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে উল্লেখ নেই। তাই সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা স্বাভাবিক রাখতে নগরীর মধ্যে এসব পরিবহন চলাচল করছে। বরিশালের জেলা প্রশাসক জসিম উদ্দিন হায়দার জানান, সরকার ঘোষিত একসপ্তাহের লকডাউন বরিশালে বাস্তবায়ন করার জন্য কঠোর অবস্থায় রয়েছে প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালনে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে মহানগর ও উপজেলা শহরগুলোতে করা হচ্ছে নিয়মিত মোবাইল কোর্ট অভিযান। সকল মানুষদের সচেতনতার পাশাপাশি স্বাস্থ্যবিধি না মানা ও মাস্ক না পরায় তাদেরকে জেল-জরিমানা করা অব্যাহত রয়েছে। অভিযানের সময় পথচারীদের যাদের মাস্ক নেই তাদেরকে প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাস্ক বিতরণ করছে নিবার্হী ম্যাজিস্ট্রেটরা। তিনি আরও বলেন, সরকারি নির্দেশনা মেনে লকডাউন কার্যকর ও স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালনে প্রশাসনের পাশাপাশি জনপ্রতিনিধি ও জনসাধারণের আরও এগিয়ে আসার আহ্বান জানান। বরিশাল নগর পুলিশ কমিশনার মো. শাহাবুদ্দিন খান জানান, দেশ করোনামুক্ত রাখতে সরকারের ঘোষিত লকডাউন সঠিকভাবে মানতে কঠোর অবস্থানে রয়েছে নগর পুলিশ। তাই সচেতনতা বাড়াতে জনতাকে উদ্বুদ্ধ করতে সোমবার মোটরসাইকেল শোভাযাত্রা করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, স্বাস্থ্যবিধি না মানলে এবং অপ্রয়োজনীয়ভাবে রাস্তায় চলাফেরা করলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
Leave a Reply