চরফ্যাসন প্রতিনিধি ॥ চরফ্যাসন থানার সিসিটিভি ক্যামেরা বন্ধ করে মহিলা আসামী শেলিনা বেগমকে থানার পরিত্যক্ত কক্ষে নিয়ে চোখবেঁধে লাঠি দিয়ে মারধর করা হয়েছে। প্রবাসী নুরে আলম ও তার স্ত্রী শেলিনা বেগমকে চরফ্যাসন থানার একটি মারধরের মামলায় গ্রেফতারের পর মঙ্গলবার চরফ্যাসন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে সোপর্দ করার আগে সকাল ৮টায় এমন অপকর্ম করেছেন উপ-পরিদর্শক ও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ছিদ্দিকুর রহমান। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে চরফ্যাসন সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত থেকে জামিনে মুক্তি পেয়ে আদালত চত্বরে সংবাদকর্মীদের কাছে জোরপূর্বক স্বীকারোক্তি আদায়ের জন্য তার ওপর শারীরিক নির্যাতনের এমন অভিযোগ করেন শেলিনা বেগম। শেলিনা বেগম অভিযোগ করেন, একটি মারামারি মামলায় সোমবার রাতে চরফ্যাসন থানা পুলিশ শেলিনা বেগম এবং তার সৌদিপ্রবাসী স্বামী নূরে আলমকে জনতাবাজার এলাকা থেকে গ্রেফতার করে। প্রতিপক্ষের হামলায় আহত স্বামীকে নিয়ে চরফ্যাসন হাসপাতালে আসার পথে পুলিশ তাদের গ্রেফতার করেন বলে শেলিনা বেগম জানান। রাতভর চরফ্যাসন থানায় আটক রাখার পর মঙ্গলবার সকালে নিয়মিত মামলা করে তাদের গ্রেফতার দেখানো হয়। ওই মামলায় সকালে আদালতে সোপর্দ করার আগে মিথ্যা স্বীকারোক্তি আদায়ের জন্য শেলিনা বেগমকে থানার একটি পরিত্যক্ত কক্ষে নিয়ে চোখবেঁধে মারধর করা হয়। ওই নারী আরো অভিযোগ করেন, আদালত থেকে জামিনে মুক্তি পাওয়ার পর এসআই সিদ্দিক তার সাথে থাকা নগদ টাকা ১৮ হাজার ৫শ’ টাকা ও একটি মোবাইল, ব্যাংকের এটিএম কার্ডটি ছিনিয়ে নেন। মোবাইটি ফেরৎ দিলেও তার টাকা ও এটিএম কার্ডটি ফিরিয়ে দেননি তিনি। স্থানীয় সূত্রে জানাযায়, নুরে আলম -শেলিনা দম্পতির বাড়ি ওমরপুর ইউনিয়নের আলীগাও গ্রামের ২নং ওয়ার্ডে। বাড়ির পাশের ১ শ ৬০ শতাংশ( এক কানি) জমি কয়েক বছর ধরে একসনা লগ্নী নিয়ে চাষাবাদ করছিলেন শেলিনা বেগম। এবছর এই জমি বাগিয়ে নেন প্রতিবেশী হারুন। শেলিনার স্বামী ২০ দিন আগে প্রবাস থেকে দেশে আসেন। সোমবার সন্ধ্যায় স্থানীয় জনতা বাজারে প্রবাসী নুরে আলমের সাথে হারুনের দেখা হয়। সেখানে চাষের জমিটি ছিনিয়ে নেয়ার কারণ জানতে চাইলে হারুন তার দলবল নিয়ে নূরে আলমকে মারধর করেন। খবর পেয়ে শেলিনা বেগম স্বামী নুরে আলমকে উদ্ধার করে চরফ্যাসন হাসপাতালে আনার চেষ্টা করেন। এসময় স্থানীয় ইউপি সদস্য জ্টোন মেম্বার, আওয়ামীলীগ নেতা ইসমাইল, হারুন, মাসুদ, আনোয়ার সিকদার, তাদের আটক করে জোরপূর্বক সাদা কাগজে স্বাক্ষর নিয়ে সমঝোতা করে দেয়ার কথা বলে শালিশি অচল নামায় স্বাক্ষর নেন। সোমবার রাত ১০ টার দিকে আহত স্বামী নুরে আলমকে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালের উদ্দেশ্যে রওনা হলে হারুনের নেতৃত্বে কথিত সালিশদাররা তাদের গতিরোধ করে এবং মারধর শুরু করেন। এসময় শেলিনা বেগমও প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। দু’পক্ষের মধ্যে দা-লাঠি নিয়ে তুমুল সংঘর্ষ বাঁধে। এতে নুরে আলম শেলিনা, প্রতিপক্ষ হারুন, কথিত সালিশদার মাসুদ ও মহিউদ্দিন আহত হন। হারুনের অবস্থা গুরুতর। তাকে বরিশাল শের ই বাংলা মেডিকেলে ভর্তি করা হয়েছে। আহত মহিউদ্দিন ও মাসুদকে চরফ্যাসন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ঘটনার পরপর ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ প্রবাসী নুরে আলম ও স্ত্রী শেলিনা বেগমকে আটক করে। প্রবাসী ও তার স্ত্রী এবং শাহাবুদ্দিন নামের একজনকেসহ তিন জনকে আসামী করে রাতেই চরফ্যাসন থানায় মামলা করেন আহত হারুনের ভাই জাফর বেপারী। ওই মামলায় গতকাল মঙ্গলবার সকালে আদালতে সোপর্দ করার আগে পুলিশের কথিত মতে স্বীকারোক্তি দেয়ার জন্য মহিলা আসামী শেলিনা বেগমকে থানার পরিত্যক্ত কক্ষে চোখবেঁধে মারধর করেন তদন্ত কর্মকর্তা উপ-পার্রিদর্শক ছিদ্দিকুর রহমান। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা উপ-পার্রিদর্শক ছিদ্দিকুর রহমান, এসব অভিযোগ প্রসঙে অস্বীকার করেন। এর বেশি আর কোন বক্তব্য দিতে রাজি হননি। চরফ্যাসন থানার ওসি মনির হোসেন মিয়া জানান, ওই আসামী নারীর অভিযোগে আমাদের কিছুই যায় আসেনা। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা হিসেবে এসআই সিদ্দিকুর রহমানের কান্ড সবই ঠিক আছে।
Leave a Reply