নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ আচমকা বয়ে যাওয়া মাত্রারিক্ত গরম বাতাসে বরিশালের উজিরপুরের সাতলা, জল্লা ও শোলক ইউপির অন্তত ৬’শ হেক্টর জমির বোরো (হাইব্রিড) ধান পুরোপুরি নষ্টের উপক্রম দেখা দিয়েছে। এতে কমপক্ষে দেড় হাজারোধিক কৃষক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন। ধূলিসাৎ হয়ে গেছে তাদের স্বপ্ন। উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, গত রোববার (৪ এপ্রিল) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা ও রাত ১২টায় দুই দফায় হঠাৎ অধিক তাপমাত্রার গরম বাতাস বয়ে যায়। এতে উপজেলার সাতলা ইউনিয়নের নয়াকান্দি, শিবপুর, পশ্চিম সাতলা, আলামদি; জল্লা ইউপির বাহেরঘাট, বামরাইল ইউপির ধামসর ও শোলক ইউপির শোলক গ্রামসহ বিভিন্ন এলাকার কমপক্ষে ৬’শ হেক্টর জমির বোরো (হাইব্রিড) ধানের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। অনেক স্থানে ধানের ক্ষেত পুড়েও গেছে। যার ফলে ওইসব এলাকার কমপক্ষে ১ হাজার ৮ কৃষক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন। অনেক কৃষক নি:স্ব হয়ে পড়েছেন। উপজেলার সাতলা ইউনিয়নের আলামদি গ্রামের কৃষক মো. মহসিন হাওলাদার (৪৫) জানিয়েছেন, এ বছর তিনি প্রায় ২ একর জমিতে ধানের আবাদ করেছিলেন। আশা করছিলেন এবার অনেক বেশি ও ভালো ধান পাবেন। কিন্তু রোববার শুরু হওয়া প্রচণ্ড ঝড়ের প্রথম দফায় সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে এবং রাত ১২টার দিকে দ্বিতীয় দফায় অনেক গরম বাতাস বয়ে যায়। আর মাত্র ৫ থেকে ৬ মিনিটের ওই বাতাসে তার প্রায় দেড় একর জমির আবাদি ধানের শীষ পুড়ে গেছে। কৃষক মহসিন আরও জানান, তিনি তার ৪৫ বছর বয়সে এমন আবহাওয়ার বাতাস আর কখনও দেখেননি। ওই গরম বাতাসে শুধু ধান নষ্ট হয়নি, বাতাস যেসব স্থান দিয়ে বয়ে গেছে সেখানকার অন্যান্য গাছপালার পাতা পর্যন্ত পুড়ে গেছে। একই কথা জানিয়েছেন পশ্চিম সাতলা গ্রামের ক্ষতিগ্রস্থ কৃষক বসন্ত সমদ্দার, আল-আমিন বিশ্বাস, মনির হাওলাদার এবং শিবপুর গ্রামের সুকলাল বাড়ৈ ও সাইফুল ইসলাম বলেন, একদিকে করোনার কারণে পরিবার নিয়ে খুব অসহায় জীবনযাপন চলছে, তার মধ্যে ফসলের এই ক্ষতি ‘মরার ওপর খাঁড়ার ঘা’ ছাড়া কিছুই না। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. তৌহিদ জানান, অতিরিক্ত তাপমাত্রার ওই গরম বাতাসে ক্ষতিগ্রস্থ এলাকার ধানের ক্ষেতগুলো গত মঙ্গলবার তিনিসহ বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের বরিশাল আঞ্চলিক কার্যালয়ের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. আবু সাইদ, মীর মো. মনিরুজ্জামান, বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ঐশ্বিক দেবনাথ ও উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা প্রশান্ত হাওলাদারসহ সংশ্লিষ্ট এলাকার উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তারা পরিদর্শন করেছেন। ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে তিনি জানান, যেসব ধানক্ষেতের মধ্য দিয়ে বাতাস বয়ে গেছে সে জায়গার ধানের ফুলের রেণু বা শীষ পুড়ে গেছে। যার ফলে পরাগায়ন না হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে। আবার অনেক জমির ধানের শীষ গাড়ো হয়ে আংশিক ক্ষতিগ্রস্তও হয়েছে। প্রাকৃতিক এ দুর্যোগে যেসব কৃষকের ক্ষতি হয়েছে তাদের বিষয়ে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবগত করা হয়েছে বলেও নিশ্চিত করেন সরকারি এই কর্মকর্তা।
Leave a Reply