পটুয়াখালী প্রতিনিধি ॥ পটুয়াখালী সদর উপজেলার বড়বিঘাইতে জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) জালিয়াতির তথ্য পাওয়া গেছে। একই ব্যক্তি নাম পরিবর্তন করে ভোটার তালিকায় দু’বার ভোটার হয়েছেন। বাবার নামেও কিছুটা পরিবর্তন করেছেন। একইসাথে পরিবর্তন করা হয়েছে জন্ম তারিখ। ভিন্নতা দেখানো হয়েছে পেশার। তবে মায়ের নাম ও ঠিকানা ঠিকই আছে। বিষয়টি অনুসন্ধানে নির্বাচন অফিসে যোগাযোগ করা হলে এর সত্যতা মিলেছে। অভিযোগ খতিয়ে দেখতে নির্বাচন কমিশনের প্রধান কার্যালয়ে চিঠি পাঠিয়েছে স্থানীয় নির্বাচন অফিস। নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, সেনাবাহিনীতে চাকরি পেতে এই জালিয়াতি করা হয়েছে। এর সাথে নির্বাচন অফিসের কেউ জড়িত থাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। জালিয়াতির এ ঘটনাটি বড়বিঘাই ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডে। ২০১৮ সালের ভোটার তালিকায় জালিয়াতির মাধ্যমে একই ব্যক্তি দু’বার ভোটার হয়েছেন। বিষয়টি সম্প্রতি জানা গেছে। এ নিয়ে অনুসন্ধানে জালিয়াতির প্রমাণ মিলেছে। অভিযুক্ত ওই ব্যক্তির প্রকৃত নাম মো: হুমায়ুন কবির। তার বাবার নাম আবদুল ছত্তার চৌকিদার। মায়ের নাম মোসা: মিনারা বেগম। দু’ভাই ও দু’বোনের মধ্যে হুমায়ুন সবার বড়। তার ছোট ভাই ইরমান পটুয়াখালী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে অধ্যয়নরত। বড়বিঘাই ইউনিয়নের ডাকঘর সাইচাবুনিয়া, ৪ নম্বর ওয়ার্ডের ০১৬৫ নম্বর ভোটার এলাকার তালিকায় দেখা গেছে, হুমায়ুন কবির এক জায়গায় তার নাম মো: হুমায়ুন দেখিয়েছেন। ওই স্থানে বাবার নাম উল্লেখ করা হয় আ: ছত্তার, মায়ের নাম মোসা: মিনারা বেগম। পেশা দেখানো হয়েছে বেকার, জন্ম তারিখ ২০ মার্চ ১৯৮৯, ঠিকানা দক্ষিণ বিঘাই, পটুয়াখালী সদর। তালিকার ০০২ নম্বরে থাকা হুমায়ুনের ভোটার নম্বর ৭৮০১৬৫২২৬৫৩১। একই তালিকার ৬৩১ নম্বরে দেখা গেছে, হুমায়ুন নাম পরিবর্তন করে মো: সবুজ নামে আবারো ভোটার হয়েছেন। এখানে বাবার নাম আবদুল ছত্তার চৌকিদার, মা মোসা: মিনারা বেগম রেখে পেশা দেখিয়েছেন ছাত্র। জন্ম তারিখ দেখানো হয়েছে ১ ফেব্রুয়ারি ১৯৯৭, ভোটার নম্বর ৭৮০১৬৫০০০২৮৩। এবার ঠিকানা দেখানো হয়েছে, দক্ষিণ বিঘা, দক্ষিণ বিঘাই, পটুয়াখালী সদর, পটুয়াখালী। এখানে প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, বড়বিঘাই ইউনিয়নে দক্ষিণ বিঘা নামে কোনো এলাকা নেই। মূলত এলাকা দক্ষিণ বিঘাই। ধারণা করা হচ্ছে, প্রতারণার আশ্রয় নিতেই দক্ষিণ বিঘা উল্লেখ করা হয়েছে। তালিকার ৫৫৩ নম্বরে হুমায়ুনের বাবার ভোটার ভোটার নম্বর ৭৮০১৬৫০০০১০৬, নাম আ: ছত্তার চৌকিদার, বাবার নাম ওয়াজেদ চৌকিদার। ছত্তারের ঠিকানাতেও ‘দক্ষিণ বিঘা’ উল্লেখ আছে, যা সঠিক নয়। অনুসন্ধানে জানা গেছে, হুমায়ুন ২০০৮ সালে পটুয়াখালী সদর উপজেলার মধ্য কেওয়াবুনিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষা দিয়ে একাধিক বিষয়ে অকৃতকার্য হন। এরপর তিনি নির্মাণ ঠিকাদার বাবা আবদুল ছত্তারের সাথে কাজে যোগ দেন। এর কয়েক বছর পর তিনি ফের কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীন মধ্য কেওয়াবুনিয়া কারিগরি ইনস্টিটিউটে ভর্তি হন। এবার তিনি নাম ও জন্ম তারিখ পরিবর্তন করেন। কিন্তু তিনি আগেই ভোটার হয়েছিলেন ও জাতীয় পরিচয়পত্র গ্রহণ করেছিলেন। ফলে নাম পরিবর্তন করে নতুন করে পাস করলেও জাতীয় পরিচয়পত্র ছাড়া ওই নামে চাকরি পাওয়ার সুযোগ নেই। তাই নতুন করে আবারো জালিয়াতির মাধ্যমে ভোটার হন তিনি। বিশ্বস্ত সূত্র বলছে, তার বাবা আবদুল ছত্তার ঢাকার ক্যান্টনমেন্ট এলাকায় দীর্ঘ দিন নির্মাণকাজের ঠিকাদারি করেছেন। এই সুবাদে অনেকের সাথে পরিচয় ও সম্পর্ক হয়। তিনি তখন ছেলেকে সেনাবাহিনীতে চাকরি দেয়ার স্বপ্ন দেখতেন। তাছাড়া আবদুল ছত্তারের নানা ও এক মামা সেনাবাহিনীতে এক সময় চকরি করতেন। তাই সাধারণ শাখা থেকে উত্তীর্ণ হতে না পাড়ায় ও বয়স বেড়ে যাওয়ায় জন্ম তারিখ পরিবর্তন করে কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছেলেকে ফের ভর্তি করান ছত্তার। পরে ছেলে হুমায়ুন এসএসসি ও এইচএসসি সমমানের পরীক্ষায় পাসও করেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সেনাবাহিনীতে চাকরি হয়নি। সূত্র বলছে, এবার এলাকায় একটি নতুন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অফিস সহকারী হিসেবে ছেলেকে চাকরির ব্যবস্থা করা হয়। একইসাথে হুমায়ুনকে নতুন করে সবুজ নামে ভোটার তালিকায় নাম তোলার ব্যবস্থা করা হয়। তবে ছবি ও আঙ্গুলের ছাপসহ একই ব্যক্তি, একই এলাকায় কিভাবে দু’বার ভোটার হয়েছেন- এ নিয়ে বিভিন্ন প্রশ্নের দেখা দিয়েছে। কেউ কেউ ধারণা করছেন, এর সাথে নির্বাচন অফিসের কেউ জড়িত থাকতে পাড়েন। ঘুষ বাণিজ্যের মাধ্যমে হয়তো নির্বাচন অফিসের কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে এমন জালিয়াতি করা হয়েছে। যদিও এমন অভিযোগ মানতে নারাজ পটুয়াখালী সদর উপজেলা নির্বাচন অফিসেরর বর্তমান কর্মকর্তা। অভিযোগটি খতিয়ে দেখতে গিয়ে এর সত্যতা পেয়ে উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা নিজেও হতবাক হয়েছেন। নির্বাচন অফিসের সার্ভারে একই ছবিতে হুমায়ুন দু’বার ভোটার হয়েছেন বলে প্রমাণ পাওয়া গেছে। বিষয়টি কিভাবে হলো, তা যাচাই বাছাইয়ের জন্য তাৎক্ষণিক ঢাকায় প্রধান নির্বাচন কার্যালয়ে পত্র দেয়ার কথা জানান উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা খালিদ বিন রউফ। তিনি বলেন, এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের সংশ্লিষ্ট বিভাগ তদন্ত করে দেখবে।
Leave a Reply