পিরোজপুর প্রতিনিধি ॥ এবার পিরোজপুরের ইন্দুরকানীতে ক্ষেতের বোরো ধান খাওয়ার অপরাধে প্রায় দেড় শতাধিক বাবুই পাখির ছানা হত্যা করা হয়েছে। শনিবার (১০ এপ্রিল) সন্ধ্যায় উপজেলার সদর ইউনিয়নের ভবানীপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। এর আগে গত শুক্রবার (০৯ এপ্রিল) ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলার ভৈরবপাশা ইউনিয়নে ক্ষেতের ধান খাওয়ায় অর্ধশতাধিক বাবুই পাখি পুড়িয়ে মারা হয়েছে। স্থানীয়রা জানান, ভবানীপুর গ্রামের একটি জমিতে বোরো ধান চাষ করেছেন হেমায়েত হোসেন মোল্লাসহ কয়েকজন কৃষক। গত কয়েক দিন ধরে সেই জমির বোরো ধান খাচ্ছে বিভিন্ন ধরনের পাখি। ওই জমির পাশেই দুটি তাল গাছে রয়েছে বাবুই পাখির প্রায় শতাধিক বাসা। পাখি ধান খাওয়ায় ক্ষিপ্ত হন ক্ষেতের মালিক হেমায়েত হোসেন মোল্লা। তারই নির্দেশে গত ২-৩ দিন ধরে ওই গাছে থাকা বাবুই পাখির বাসাগুলো ভেঙে এর ভেতর থাকা ছানাগুলো হত্যা করেন তার ছোট ভাই লুৎফর রহমান মোল্লা। শনিবার সন্ধ্যার আগে ওই জমির মালিক হোমায়েত হোসেন মোল্লার ছোট ভাই লুৎফর রহমান মোল্লার নেতৃত্বে সুভাসসহ তিনজন মিলে বড় একটি বাঁশ দিয়ে ওই তাল গাছে থাকা বাবুই পাখির বাসাগুলো ভেঙে মাটিতে ফেলে দেন। এ সময় ওই সব বাসায় থাকা বাবুই পাখির ছোট ছোট ছানাগুলোও মেরে ফেলেন তারা। এ ছাড়া কিছু ছানা মেরে পাশের খালে ফেলে দেন। স্থানীয় বাসিন্দা তৌসিফ আকবর জানান, সেখানে প্রায় দেড় শতাধিক বাবুই পাখির ছানা ছিল। ছানাগুলোর প্রায় সবই একেবারেই ছোট। সেখানে মাটিতে থাকা ২-৪টি ছানা জীবিত আছে। কাছে গেলে খাবারের জন্য মুখ হা করছে। এ ব্যাপারে সংরক্ষিত নারী ইউপি সদস্য নিগার সুলতানা বলেন, শুনেছি বাবুই পাখির বাসা ভেঙেছে। এতে কিছু ছানা নষ্ট হয়েছে। ওখানে আমি যাবো। উপজেলা যুবলীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক একরামুল শিকদার বলেন, ওই ক্ষেতের মালিক গত ২-৩ দিন ধরে বাবুই পাখির ছানা ও বাসা নষ্ট করছেন। এমন খবর শুনে শনিবার বিকেলে আমরা কয়েকজন সেখানে গিয়েছিলাম। গিয়ে দেখি ৩-৪ জন মিলে পাখির বাসাগুলো ভেঙে ফেলছে। বাসায় থাকা ছোট ছোট ছানাগুলো আগুন দিয়ে পুড়িয়ে ও পানিতে ফেলে হত্যা করছে। এমন ঘৃণ্য কাজ একজন মানুষ করতে পারে তা আমার ভাবতেই অবাক লাগে। ইন্দুরকানী উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা হরিস চন্দ্র বোস বলেন, এ ব্যাপারে কোনো অভিযোগ পাইনি। বাবুই পাখি একটি বিলুপ্ত প্রজাতির পাখি। প্রাকৃতিক বৈচিত্র রক্ষায় এর রক্ষণাবেক্ষণ আমাদের সকলেরই কর্তব্য। এদের হত্যা করা একটি অমানবিক কাজ। এদের হত্যাকারীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে। এ ব্যাপারে ক্ষেতের মালিক হেমায়েত হোসেন মোল্লা বলেন, আমার ৫০ বিঘা জমিতে বোরো ধান চাষ করা হয়েছে। পাখিরা জমির ধান নষ্ট করছে। আমি ওই সব পাখির ছানা হত্যা করিনি। আমার ছোট ভাই কিছু বাসা ভেঙেছে। আমি এ খবর শুনে তাকে গালমন্দ করেছি। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ আমার সুনাম ক্ষুণ্ন করতে এ বিষয়টি সাংবাদিকদের জানিয়েছে। এ বিষয়ে ইন্দুরকানী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হোসাইন মুহাম্মদ আল মুজাহিদ বলেন, আমি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। এ ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। ইন্দুরকানীর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হুমায়ূন কবির বলেন, এ ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
Leave a Reply