স্টাফ রিপোর্টার ॥ মহামারী করোনার কারণে বিগত একবছরেরও অধিক সময় ধরে স্কুল-কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকায় অনলাইন কোচিং-ই শিক্ষার্থীদের একমাত্র ভরসা হয়ে দাঁড়িয়েছে। কোচিং টিউটরদের কাছে অধিকাংশ শিক্ষার্থীরা কোচিংয়ে অনলাইন ক্লাস করে চলেছে পুরো লকডাউন জুড়ে। বর্তমান সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশের সুফল শহর পর্যায়ে শতভাগ বাস্তবায়ন হলেও একমাত্র বিভিন্ন মোবাইল কোম্পানীর নেটওয়ার্ক বিরম্বনার কারণে গ্রামাঞ্চলের শিক্ষার্থীসহ সকল পেশার মানুষ ডিজিটাল বাংলাদেশের সুফল থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। যেকারণে গ্রামে বসবাসরত শিক্ষার্থীদের নেটওয়ার্ক বিরম্বনার মধ্যেই অনেক কস্টে অনলাইনে কোচিং ক্লাশ করতে হচ্ছে। সূত্রমতে, করোনার কারণে সরকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা ও পরীক্ষার ব্যাপারে কবে কখন চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেবে এমন দোলাচলে সচেতন অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের শিক্ষা জীবনের ভবিষ্যত নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পরেছেন। একপর্যায়ে সবধরনের পরীক্ষা অনিশ্চিত জানার পরেও অভিভাবকরা তাদের সন্তানের ভবিষ্যত জীবনের কথা চিন্তা করে শুরু থেকে কোচিং টিউটরদের মাধ্যমে কোচিংয়ে অনলাইন ক্লাস করাচ্ছেন। কোচিং বা প্রাইভেট টিউটরের প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরে বরিশাল বিএম কলেজের ইংরেজী বিভাগের অনার্স প্রথমবর্ষের মেধাবী ছাত্রী জেসিকা আহম্মেদ জুঁই জানায়, করোনার কারণে কলেজ বন্ধ থাকায় বাড়িতে থেকে থেকে অনেকটা অলস সময় পার করছি। এতে অনেক সময় পড়াশুনার ওপর মন বসছিলোনা, তাই ক্লাশের অন্যান্য বান্ধবীদের সাথে যোগাযোগ করে একটি কোচিং সেন্টারের শিক্ষকের কাছে অনলাইন ক্লাস শুরু করেছি। ফলে পূর্বের ন্যায় এখন নিয়মিত পড়ার টেবিলে থাকতে হচ্ছে। জেসিকা আহম্মেদ জুঁই আরও জানায়, করোনা পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হলে যেকোন সময় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো খোলার পর পরই পরীক্ষা নেয়া হতে পারে, সেজন্যই তাদের বাড়িতে বসে অনলাইনে কোচিং করতে হচ্ছে। এজন্য কখনো ফেসবুক ম্যাসেঞ্জার গ্রুপে কিংবা জুম অ্যাপস্ ব্যবহার করে কোচিং শিক্ষক তাদের ক্লাস নিচ্ছেন। ক্লাসে অংশ নিতে সে তার বাবার মোবাইল ফোন ব্যবহার করছে। অনলাইনে কোচিং ক্লাশ করতে নেটওয়ার্ক বিরম্বনার কথা উল্লেখ করে জেসিকা আহম্মেদ জুঁই জানায়, তাদের গ্রামের বাড়ি গৌরনদী পৌর এলাকার গেরাকুল গ্রামে। দীর্ঘদিন থেকে ওই গ্রামে প্রতিটি মোবাইল কোম্পানীর চরম নেটওয়ার্ক বিরম্বনা রয়েছে। ফলে অনলাইনে ক্লাশ করার সময় তার চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। প্রতিটি গ্রামে মোবাইল কোম্পানীর নেটওয়ার্ক বিরম্বনা দূর করার মাধ্যমে ডিজিটাল বাংলাদেশের সুফল সর্বত্র পৌঁছে দিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে জোর দাবি করেছেন মেধাবী ছাত্রী জেসিকা আহম্মেদ জুঁই। এসএম মিজান নামের এক স্কুল ছাত্রীর পিতা বলেন, করোনার কারণে বিগত একটি বছর সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকলেও তাদের নিয়মিত স্কুলের বেতন দিয়ে যেতে হয়েছে। পরবর্তীতে স্কুলগুলোতে অনলাইন ক্লাস শুরু করার জন্য সরকারি নির্দেশ থাকলেও অধিকাংশ স্কুলের শিক্ষকরা একদিনের জন্যও অনলাইন ক্লাস করাননি। পাশাপাশি অ্যাসাইনম্যান্ট মূল্যায়নের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের দুর্বলতা চিহ্নিত করে নিরাময়ের ব্যবস্থা করা হলেও সেখানে সরকারের মহতি উদ্যোগকে ভুলে গিয়ে অধিকাংশ স্কুলের শিক্ষকরা বাণিজ্যে মেতে ওঠেন। স্কুল বন্ধ থাকার পরেও এসএসসি পরীক্ষার ফরমপূরণের নামে অতিসম্প্রতি অধিকাংশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা বকেয়া বেতন, সেশন চার্জ, অনলাইন খরচসহ বিভিন্ন খাত দেখিয়ে বাণিজ্য শুরু করেছিলেন। ইতোমধ্যে সরকারি নির্দেশে ফরমপূরণ স্থগিত করা হয়। এছাড়াও বেশ কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধানদের বিরুদ্ধে উপবৃত্তি দেয়ার প্রলোভন দেখিয়ে আবেদনকারী শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অর্থ উত্তোলনেরও অভিযোগ রয়েছে। অভিভাবক এসএম মিজানের অভিযোগ, অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের প্রধানগণ শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবনের কথা চিন্তা না করে তারা সবসময় অর্থ হাতিয়ে নেয়ার কাজে ব্যস্ত থাকেন। সরকারের মহতি উদ্যোগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে অনলাইন ক্লাস শুরু করার জন্য নির্দেশনা থাকলেও অধিকাংশ প্রতিষ্ঠান থেকে একদিনের জন্যও অনলাইনে ক্লাস নেয়া হয়নি। তাই বাধ্য হয়েই তারা (অভিভাবক) করোনার কারণে পিছিয়ে পরা সন্তানদের (শিক্ষার্থী) অধিকতর ভালো ফলাফলের জন্য সহায়ক শিক্ষক হিসেবে অনলাইনে কোচিং ক্লাস করাতে দিয়েছেন। তিনিও (মিজান) মোবাইল কোম্পানীর নেটওয়ার্ক বিরম্বনার কথা উল্লেখ করেন।
Leave a Reply