স্টাফ রিপোর্টার ॥ বজায়গা সংকুলান না হওয়ায় বরিশাল সদর (জেনারেল) হাসপাতালের ডায়রিয়া ওয়ার্ডের সামনের খালি জায়গায় প্যান্ডেল করা হয়েছে। আর সেই প্যান্ডেলের নিচে ৯টি বেড দিয়ে অতিরিক্ত রোগীদের রেখে চিকিৎসাসেবা দেওয়া হচ্ছে। বৃহস্পতিবার (১৫ এপ্রিল) দুপুরে হাসপাতালের ডায়রিয়া ওয়ার্ড ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে। তবে প্যান্ডেলও জায়গা সংকুলান না হওয়ায় সরাসরি মাটিতে প্লাস্টিকের মাদুর পেতে রোগীরা থাকতে বাধ্য হচ্ছেন। বরিশাল সদর (জেনারেল) হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, গত কয়েকদিন ধরে ডায়রিয়া ওয়ার্ডে যে পরিমানে রোগী এসেছেন তাতে জায়গা সংকুলান হচ্ছে না। ফলে ডায়রিয়া রোগীদের বারান্দাসহ ওয়ার্ডের সামনের খোলা জায়গাতেও রাখতে হয়েছে। ওয়ার্ডের সামনের খালি জায়গায় যাতে রোগীদের খোলা আকাশের নিচে প্রখর রোদের মধ্যে থাকতে না হয়, সেজন্য সেখানে বাঁশ ও সাদা রংয়ের কাপড় দিয়ে প্যান্ডেল করে দেওয়া হয়েছে। তার ওপরে ত্রিপল দেওয়া হয়েছে, যাতে বৃষ্টিতেও কোনো সমস্যা না হয় রোগীদের। তবে রোগী ও তাদের স্বজনরা জানান, পুরো ডায়রিয়া ওয়ার্ড অপরিষ্কার। এখানে এসে নতুন করে ডায়রিয়াসহ অন্য রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে। সেসঙ্গে রোগী ভর্তির সময় মাত্র একটি স্যালাইন সরকারিভাবে দেওয়া হলেও বাকিগুলো কিনে আনতে হচ্ছে। রোগীরা ঠিকমতো সেবা না পাওয়ার পাশাপাশি ঠিকমতো ওষুধ ও স্যালাইন না পাওয়ার অভিযোগ তুলেছেন। ওষুধ সামগ্রী বাইরে থেকে কিনে আনতে হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন রোগীর স্বজনরা। মিজান নামে এক রোগীর স্বজন বলেন, ওয়ার্ডের ভেতরের মেঝেতে রোগীদের কারণে হাঁটা যাচ্ছে না, তার ওপর ভীষণ অপরিষ্কার। তাই তার রোগী নিয়ে ওয়ার্ডের সামনের মাঠে প্যান্ডেলের নিচে এসেছেন। এখানে বেড পেলেও স্যালাইন ঝোলানোর স্ট্যান্ড পাননি, গাছের ডাল দিয়ে স্ট্যান্ড বানিয়ে নিয়েছেন। তার দেখাদেখি পাশের রোগীরাও সেভাবে স্যালাইন স্ট্যান্ড বানিয়ে নিয়েছেন। হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টার আগ পর্যন্ত এ হাসপাতালের ডায়রিয়া ওয়ার্ডে ৫৪ জন রোগী চিকিৎসাধীন। এ নিয়ে গত ২ সপ্তাহে এ হাসপাতালের ডায়রিয়া ওয়ার্ড থেকে প্রায় ৮’শ রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন। জেনারেল হাসপাতালের ডায়রিয়া ওয়ার্ডের ইনচার্জ সিনিয়র স্টাফ নার্স আয়শা আক্তার জানান, সরকারিভাবে যে ওষুধ এবং স্যালাইন বরাদ্দ আছে সেগুলো রোগীদের যথাসাধ্য দেওয়া হচ্ছে। আর রোগীদের চাপ থাকলেও লোকবল সংকট নিয়েই ওয়ার্ড পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার চেষ্টা সবসময় চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে। বরিশাল সদর (জেনারেল) হাসপাতালের আরপি ডা. মলয় কৃষ্ণ বড়াল জানান, জেনারেল হাসপাতালে মাত্র ৪ শয্যার ডায়রিয়া ওয়ার্ড। এরমধ্যে পুরুষ ওয়ার্ডে দু’টি শয্যা এবং দু’টি শয্যা মহিলা ওয়ার্ডে। তবে এখানে ১০টি করে মহিলা ও পুরুষ ওয়ার্ডের মধ্যে মোট ২৪টি শয্যার ব্যবস্থা করা হয়েছিলো। কিন্তু সম্প্রতি যে হারে রোগী বাড়ছে তাতে চিকিৎসা কার্যক্রম পরিচালনাসহ সবকিছুতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। এ অবস্থায় প্যান্ডেল করে হাসপাতালের ডায়রিয়া ওয়ার্ডের সামনে আরও ৯টি শয্যা বসানো হয়েছে। এদিকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বিভাগীয় পরিচালকের কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক ডা. শ্যামল কৃষ্ণ মণ্ডল জানান, চলতি মাসের শুরু থেকে করোনার পাশাপাশি বরিশালে ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। এ পর্যন্ত বিভাগের ৬ জেলায় মোট ২১ হাজার ৫’শ রোগী ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা নিয়েছেন। মূলত সব জেলায় আক্রান্তের সংখ্যাই বেশি, তবে বরগুনায় আরও বেশি। এখানকার লোকজন গরমের এ সময়টাতে বাসি অর্থাৎ পান্তা ভাত খাচ্ছেন আর নদীর পানি সঠিকভাবে পরিশোধন না করেই পান করছেন। এ কারণেও অনেকে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছেন। তিনি সবাইকে নিরাপদ খাবার খাওয়ার ও পানি পানের পরামর্শ দেন।
Leave a Reply