দখিনের খবর ডেক্স ॥ করোনা ভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিতে হাট-বাজারগুলোকে মাঠ বা খোলা জায়গায় নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রোববার (১২ এপ্রিল) সকালে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে করোনা ভাইরাস (কোভিড-১৯) পরিস্থিতি নিয়ে বরিশাল ও খুলনা বিভাগের জেলাগুলোর কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে এ নির্দেশনা দেন তিনি।
সামাজিক দূরত্বে নিশ্চিতে হাট-বাজারগুলোকে মাঠ, বড় রাস্তা বা খোলা কোনো জায়গায় নেওয়ার পরামর্শ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাজারেও সেই দূরত্ব বজায় রাখা। যেখানে হাট হয়, হাটগুলো সম্পূর্ণ বন্ধ না রেখে কোনো বড় মাঠ থেকে সুনির্দিষ্ট জায়গা চিহ্নিত করে দূরত্ব বজায় রেখে রেখে হাটে পণ্য বিক্রির ব্যবস্থা করা। পরিকল্পিতভাবে এটা করলে মানুষের মধ্যে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত হবে এবং সংক্রমণ ছড়াবে কম। ‘মাঠ বা খোলা জায়গায় দূরত্বটা বজায় রেখে যার যার পণ্য নিয়ে বসবে। সবাই সেখান থেকে কিনে নিয়ে চলে যাবে। কোনো ভিড় যেন না হয়। সে বিষয়ে আপনারা বিশেষভাবে দৃষ্টি দেবেন।’
কৃষি পরিবহন ও কৃষকদের ফসল তুলতে যাওয়ার ক্ষেত্রে তাদের সহযোগিতা করতে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে জানান শেখ হাসিনা। করোনা সংক্রমণ রোধে সবাইকে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, নিজেদের রক্ষাটা নিজেকেই উদ্যোগ নিয়ে করতে হবে। সে ব্যাপারে সবাইকে আরও উদ্যোগ নিতে হবে। মানুষের সঙ্গে মানুষে সংস্পর্শ যত কমানো যায় সেটাই ভালো।’ করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হলে কষ্টকর পরিস্থিতির কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, এই ভাইরাসে আক্রান্ত হলে মানুষ সুস্থ হয় এটা ঠিক। এখানে মৃতের হার পারসেনটিজ অনুযায়ী কম থাকলেও এটা মানুষকে ভোগায়, মানুষকে কষ্ট দেয়।
‘বিশেষ করে বয়স্ক, হার্টের অসুখ আছে, কিডনির অসুখ আছে, ডায়াবেটিসসহ বিভিন্ন রোগ আছে তাদের জন্য খুব মারাত্মক ভাইরাসটি।’ দেশের মানুষকে করোনা ভাইরাস থেকে বাঁচাতে সবকিছু বন্ধ করা হয়েছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, এই একটা ভাইরাসের কারণে সারা বিশ্ব স্থবির। স্বাভাবিক জীবন-যাপন সম্পূর্ণ স্থবির, সারা বিশ্বের মানুষ কিন্তু ঘরে বন্দি। আমরাও এই ভাইরাস থেকে দেশবাসীকে বাঁচানোর জন্য সব কর্মসূচি বন্ধ করে দিয়েছি। ‘সবাইকে অনুরোধ করছি আপনারা যার যার নিজের ঘরে থাকুন। আপনার ছেলে-মেয়ে বাচ্চাদের নিয়ে ঘরে থাকুন। কারো সঙ্গে মেশার দরকার নেই।
করোনা পরিস্থিতিতে সবার কষ্টকর জীবন প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জানি এর জন্য কষ্ট হচ্ছে সবার। কষ্ট লাঘবে সাধ্যমতো চেষ্টা করে যাচ্ছি। ইতোমধ্যে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে ২৩টি গাইড লাইন প্রস্তুত করেছে। এগুলো স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে দেওয়া আছে। এছাড়া বিভিন্ন বিষয়ে গণমাধ্যমে আমরা অনবরত প্রচার করে যাচ্ছি যেসব বিষয়ে প্রচার করে যাচ্ছি। সেসব বিষয়ে নজর দেবেন, মেনে চলবেন।
সবাইকে মাস্ক পরার পরামর্শ দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, প্রত্যেকে মুখে মাস্ক ব্যবহার করবেন। এটা ছড়ায় হাঁচি-কাশির মাধ্যমে। মাস্ক ব্যবহার করলে নিজেকে অনেকটা সুরক্ষিত রাখতে পারবেন। হাত না ধুয়ে চোখে মুখে হাত লাগাবেন না। হাঁচি-কাশি এলে কাপড়, রুমাল, টিস্যু ব্যবহার করেন অথবা আপনি কনুই দিয়ে হাঁচি-কাশি দেন।
করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে নিজ নিজ এলাকা সুরক্ষিত রাখতে সবাইকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রত্যেকে যার যার এলাকা সুরক্ষিত করেন। হঠাৎ করে বাইরে থেকে কাউকে যেতে দেবেন না। কারণ আমরা দেখতে পাচ্ছি আমাদের এখানে একটা জেলা থেকে এখন অন্য জেলায় ছড়িয়ে পড়ছে। অন্তত এ কয়েকটা দিন আপনারা আপনার নিজের এলাকাকে সুরক্ষিত করেন। ‘কেউ এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় অকারণে ছুটোছুটি করবেন না। কেউ শ্বশুরবাড়ি বেড়াতে যাবেন, পরে গেলেও পারেন। কেউ বাড়িতে যাবেন, পরে গেলেও পারেন। এগুলো অন্তত বন্ধ রাখেন এখন আপাতত। বন্ধ রেখে অন্তত আমরা এই অবস্থা থেকে কিন্তু উত্তোরণ ঘটাতে পারি সেজন্য সবাই সহযোগিতা করুন।’ নববর্ষের সব অনুষ্ঠান বন্ধ থাকবে বলে আবারো জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, নববর্ষে বাইরে কোনো প্রোগ্রাম করা যাবে না। ঘরে বসে রেডিও-টেলিভিশনে অনুষ্ঠান হবে বা স্যোশাল মিডিয়ায় উদযাপন করা যাবে। কিন্তু কোনো জনসমাগম করা যাবে না। জনসমাগম করলে এই ভাইরাস সংক্রমণ ছড়িয়ে যাবে। সব অনুষ্ঠান বন্ধ থাকবে। গণভবনে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম, প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া। ভিডিও কনফারেন্স সঞ্চালনা করেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস।
Leave a Reply