স্বরূপকাঠি প্রতিনিধি ॥ স্বরূপকাঠি (নেছারাবাদ) উপজেলার সড়কগুলোর বেহাল দশা। প্রায় ৩৫ কিলোমিটার রাস্তার সিংহভাগজুড়েই খানাখন্দে ভরা। রাস্তায় গাড়ি চলে হেলেদুলে। পিচ ও খোয়া উঠে বিভিন্ন জায়গায় সৃষ্টি হয়েছে বড় বড় গর্ত। রাস্তা দিয়ে প্রতিনিয়তই আসা-যাওয়া করছে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা, মোটরসাইকেলসহ ছোট-বড় দুই হাজারেরও বেশি যানবাহন। এদিকে উপজেলার বেশ কিছু সড়ক ভেঙে পড়েছে পাশের নদীতে। এতে দুর্ভোগ পোহাচ্ছে স্থানীয় লাখো মানুষ। প্রকল্প পাস করে শিগগিরই দরপত্রের মাধ্যমে ভাঙা সড়কগুলোর কাজ ধরবে সরকার, এমনটাই প্রত্যাশা ভুক্তভোগী জনগণের। আর প্রশাসন বলছে দ্রুতই সড়কের সমস্যা সমাধান করা হবে। স্বরূপকাঠি শহর থেকে বলদীয়া ইউনিয়ন হয়ে নাজিরপুর উপজেলা সড়ক ১৫ কিলোমিটার আবার স্বরূপকাঠি থেকে পিরোজপুরের কলাখালী খেয়াঘাট পর্যন্ত প্রায় ২০ কিলোমিটার সড়ক। মোট ৩৫ কিমি রাস্তার সিংহভাগজুড়েই খানাখন্দে ভরা। রাস্তার পিচ ও খোয়া উঠে জায়গায় জায়গায় সৃষ্টি হয়েছে বড় বড় গর্ত। এতে গাড়ি চলছে ঝুঁকি নিয়ে। স্বরূপকাঠির এই অঞ্চলে রয়েছে ক্রিকেট ব্যাট, ম্যাট তৈরির কারখানা, পাপস, দেশের গাছ বেচাকেনার সব থেকে বড় হাট, বিসিক শিল্প নগরীসহ বিভিন্ন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান। কিন্তু এখানে আসা ব্যবসায়ীদের সবচেয়ে মাথাব্যথার কারণ ভাঙাচোরা এসব সড়ক। আবার এসব সড়ক দিয়ে যাতায়াত করতে রাজি হন না যানবাহনচালকরা। তাই ব্যবসায়ীরা বেশি টাকা খরচ করে যানবাহন ভাড়া নিয়ে আসেন। জানা যায়, সড়ক দুটি দিয়ে প্রতিনিয়তই চলাচল করে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা, মোটরসাইকেল, মিনি ট্রাকসহ ছোট-বড় দুই হাজারেরও বেশি যানবাহন। অনেকটা ঝুঁকি নিয়ে সড়ক দুটিতে চলছে এসব যান। আট বছর ধরে সড়কগুলো সংস্কার না হওয়ায় প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা। গাড়িচালক ও যাত্রীদের সর্বদা আতঙ্কে থাকতে হয়। সরেজমিনে দুর্ভোগ পোহানো যাত্রী ও চালকদের সঙ্গে কথা হয়। অটোচালক গাজী আবুল কালাম বলেন, এই সড়ক দিয়ে আমাদের গাড়ি চালাইতে অনেক সমস্যা হয়। বাচ্চাদের স্কুলে যাইতে সমস্যা হয়। গাড়িরও অনেক ক্ষতি হয়। সব দিক মিলিয়ে আমাদের অনেক সমস্যা। কেউ রাস্তা ঠিক করার কোনো উদ্যোগ নিতাছে না। কালভার্টও নেই, সেটাও হয় না অনেক দিন পর্যন্ত। অটোচালক সুমন শেখ বলেন, গাড়ি চালাতে অনেক সমস্যা হয়। অনেক কষ্ট করে যেতে হয়। এই রাস্তা নিয়ে আপনারা মিডিয়ায় তুলে ধরেন। দেখেন প্রধানমন্ত্রীকে বলে আমাদের একটা ভালো রাস্তা দেওয়া যায় কি না। এমন রাস্তা বাংলাদেশে আর কোথাও নেই মনে হয়। এটাই প্রথম হবে। স্থানীয় যাত্রী রুহুল আমিন তার শিশু মেয়েকে নিয়ে কোথাও যাচ্ছেন। আক্ষেপ করে বাচ্চাকে দেখিয়ে বলেন, এই বাচ্চা নিয়ে যাচ্ছি এই সড়ক দিয়ে। কী যে আতঙ্কের মধ্যে আছি, আমিই জানি। যেকোনো সময় একটা দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে। স্থানীয় বাসিন্দা আবদুর রহমান খান বলেন, ভাই আমরা খুব দুঃখিত, খুব লজ্জিত। আমাদের মন্ত্রী, এমপি, চেয়ারম্যান স্বীকার করে, দেখে যায়, মেপে যায়, কিন্তু রাস্তা আর হয় না। আমাদের পোলাপান স্কুলে যাইতে পারে না। বর্ষায় কাদা অইলে গাড়ি উল্ডি দিয়া খালে পইরা যায়। সমাজসেবক গিয়াস উদ্দিন কাজী জানান, অটো বা রিকশা চলার সময় ছেলেমেয়েদের পড়ে যাওয়ার দশা হয়। এখান থেকে বলদিয়াসহ বিভিন্ন ইউনিয়নের অনেক লোক চলাফেরা করেন। সবার জন্যই এটা ঝুঁকিপূর্ণ। যেকোনো সময় এই রাস্তায় ঘটতে পারে একটি বড় ধরনের দুর্ঘটনা। আমরা মনে হয় কোনো দুর্ঘটনা না ঘটলে এই রাস্তা আর সংস্কার হবেই না। স্থানীয় শিক্ষার্থী আরিফ হোসেন জানায়, এসব রাস্তার কারণে আমরা স্কুলে যেতে সমস্যা হয়। যানবাহনে চলাচল করতে ভয় লাগে। আমাদের এখানে রাজারকাঠী মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও বলদিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয় আছে। সবাই ঝুঁকি নিয়ে আসা-যাওয়া করে। পিরোজপুর জেলার স্বরূপকাঠি (নেছারাবাদ) উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মোশারেফ হোসেন বলেন, বিষয়টি আমরাও দেখেছি। এই উপজেলার সঙ্গে ১ নম্বর বলদিয়া ইউনিয়নের যে সংযোগ সড়ক রয়েছে, সেটি খুব বেহাল অবস্থায় রয়েছে। ইউএনও বলেন, স্থানীয় সংসদ সদস্য মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম স্যারের উদ্যোগে একটি রাস্তার প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। আমরা আশা করছি রাস্তাটি যদি হয়ে যায়, তাহলে বলদিয়া ইউনিয়নের সঙ্গে সোহাগদল, সুটিয়াকাঠী এবং সর্বোপরী নেছারাবাদ উপজেলার সঙ্গে একটা ভালো সংযোগ হবে। এটা শিগগিরই হয়ে যাবে।
Leave a Reply