দখিনের খবর ডেক্স ॥ জেলার আগৈলঝাড়া উপজেলায় করোনা মোকাবেলায় কর্মহীন দুঃস্থদের জন্য বরাদ্ধকৃত সরকারি চাল আত্মসাতে ব্যর্থ হয়ে স্ত্রীর মাধ্যমে ব্যক্তিগত সংগঠনের নাম করে ওই সংগঠনের সদস্যদের মধ্যে বিতরণের অভিযোগ উঠেছে বাকাল ইউপি চেয়ারম্যান বিপুল দাসের বিরুদ্ধে।
একাধিক সূত্রে জানা গেছে, করোনা মোকাবেলায় কর্মহীন দুঃস্থ পরিবারের মাঝে খাদ্য সহায়তার জন্য সরকারীভাবে চাল বরাদ্দ করা হয়। সরকারী বরাদ্দকৃত ১০ কেজি চালের সাথে স্থানীয় সংসদ সদস্য মন্ত্রী আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহর নিজস্ব অর্থায়নে সাবান, মাস্ক, আলু, ডাল খাদ্য সহায়তা হিসেবে বিতরণ অব্যাহত রেখেছে উপজেলা প্রশাসন। ওই খাদ্য সহায়তা থেকে উপজেলা প্রশাসন বাকাল ইউনিয়নের চেয়ারম্যানকে একশ’ প্যাকেট খাদ্য সহায়তা বিতরণের জন্য প্রদান করেন।
প্রশাসনের প্রদান করা খাদ্য সহায়তা থেকে কিছু দুঃস্থদের খাদ্য সহায়তা প্রদানের পরে অবশিষ্ট খাদ্য সহায়তা চেয়ারম্যান বিপুল দাস ফুল্লশ্রী এলাকায় তার বাড়ির প্রবেশ পথে সড়ক ও জনপথ বিভাগের জায়গা দখল করে নির্মান করা ঘরে রেখে দেন। রবিবার সকালে স্থানীয় সাংবাদিকরা সরকারী খাদ্য সহায়তা ইউনিয়ন পরিষদে না রেখে চেয়ারম্যানের নিজের জিম্মায় রেখে দেয়ার কারণ জানতে চাইলে চেয়ারম্যান কোন সদোত্তর দেননি।
দিনের আলোয় সরকারী খাদ্য সহায়তা সেখান থেকে সরাতে না পেরে রবিবার বিকেলে সু-চতুর চেয়ারম্যান তার তার স্ত্রী ঝুমা দাসকে দিয়ে তার প্রতিষ্ঠিত “প্রদ্বীপ্ত মহিলা উন্নয়ন সমবায় সমিতির”র নামে সরকারের ওই খাদ্য সহায়তা সমিতির সদস্যদের মধ্যে ত্রাণ হিসেবে বিতরণ করান।
সূত্রমতে, চেয়ারম্যানের স্ত্রী ঝুমা দাস ওই সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে নিযুক্ত আছেন। নিজের স্ত্রীকে দিয়ে সরকারী চাল বিতরণকে সাজানো নাটক বলে আখ্যায়িত করেছেন স্থানীয় সুশীল সমাজের নেতৃবৃন্দরা। চেয়ারম্যানের এ কৌশলের কারণে সরকারীভাবে বরাদ্দকৃত ত্রাণ থেকে বঞ্চিত হয়েছেন ওই ইউনিয়নের প্রকৃত দুঃস্থ পরিবারের সদস্যরা।
খাদ্য সহায়তার চাল বিতরণের সময় চেয়ারম্যান বিপুল দাস, সংগঠনের সভাপতি, সম্পাদক, কোষাধ্যক্ষ সীমা আক্তার, সাবেক শিক্ষিকা আভা রানী মুখার্জী, বাকাল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম পাইক, প্রেসক্লাবের আহবায়ক আজাদ রহমান, দি হাঙ্গার প্রজেক্টের উপজেলা সমন্বয়কারী সাইফুল ইসলাম লিটনসহ সাংবাদিকরা সেখানে উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে সরকারী জায়গা দখল করে তা নিজের জিম্মায় রাখতে উত্তোলন করা টিনের ঘরে সম্প্রতি “প্রদ্বীপ্ত মহিলা উন্নয়ন সমবায় সমিতির” নামে একটি সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে দেন চেয়ারম্যান বিপুল দাস। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই সংগঠনের একাধিক সদস্য ও স্থানীয়রা জানান, দু’মাস আগে উপজেলা মহিলা আওয়ামী লীগ থেকে শীতার্তদের মধ্যে কম্বল বিতরণ কালে “প্রদ্বীপ্ত মহিলা উন্নয়ন সমবায় সমিতির” সভাপতি দাবিদার সুমা কর নিজেই দুঃস্থ হিসেবে একাধিক ত্রাণের কম্বল গ্রহণ করেছিলেন। সচেতন মহলের প্রশ্ন ? দুই মাস আগে ত্রাণ গ্রহনকারী কিভাবে একটি সংগঠনের নামে সদস্যদের মাঝে ১০ কেজি করে চাল, ২ কেজি করে আলু, ১ কেজি করে পিয়াজ, ১ টি সাবান ও ১টি করে মাক্স বিতরণ করেন।
সদস্যরা জানান, তারা প্রতি মাসে ১শ টাকা করে দুই মাস চাঁদা প্রদান করলেও ত্রাণ বিতরনের মতো আর্থিক সামার্থ তাদের সংগঠনের নেই। সদস্যরা অভিযোগ করে বলেন, ত্রাণ বিতরনের জন্য তাদের কোন সভা আহবান বা রেজুলেশনও করা হয়নি। আকস্মিকভাবে রবিবার বিকেলে সমিতির উদ্যোগে ওই সমিতির ১৮ জন ও স্থানীয় ২ জনসহ মোট ২০ জনকে ১০ কেজি করে চাল, ২ কেজি করে আলু, ১ কেজি করে পিয়াজ, ১ করে টি সাবান ও ১টি করে মাক্স বিতরণ করা হয়।
করোনার মোকাবেলায় কর্মহীন লোকজনকে চেয়ারম্যান বিপুল দাস নিজ উদ্যোগে কোন প্রকার সহায়তা প্রদান না করলেও অদৃশ্য কারনে হঠাৎ করে তার স্ত্রীকে দিয়ে সরকারীভাবে বরাদ্দকৃত (আত্মসাত করার জন্য রাখা) এসব ত্রাণ বিতরণ করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে বাকাল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বিপুল দাসের ব্যবহৃত (০১৭৩৮-৪৪২৯২৭) নাম্বারে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তা বন্ধ থাকায় কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে উপজেলা চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রইচ সেরনিয়াবাত বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই, এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের সাথে আলোচনা করে বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হবে।
Leave a Reply