স্টাফ রিপোর্টার ॥ কোভিড-১৯ অর্থাৎ করোনাতে আক্রান্ত কিংবা উপসর্গ থাকা রোগীদের নমুনা পরীক্ষা করানোটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। নমুনা রোগীর শরীর থেকে সংগ্রহ করে আরটি পিসিআর ল্যাবে পাঠানো হয়। সেখান থেকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে প্রাপ্ত ফলাফলেই নির্ধারণ হয় পজেটিভ বা নেগেটিভ। অর্থাৎ একজন রোগী করোনায় আক্রান্ত কিনা সেটি এ পরীক্ষার রিপোর্টেই বলে দেয়। আক্রান্ত হলে শুরু হয়ে যায় চিকিৎসা। তবে এই নমুনার কাজটি যারা করেন তাদের অনেকটা সতর্ক হয়ে বিশেষ কৌশলে করতে হয়। কারণ নমুনাটা রোগীর খুব কাছে গিয়ে নাকের ভেতরে বিশেষ ধরনের কাঠি প্রবেশ করিয়ে নমুনা নিতে হয়। এক্ষেত্রে আক্রান্ত যেকোনো রোগী থেকে নমুনা সংগ্রহকারী মুহূর্তেই করোনায় আক্রান্ত হতে পারেন। শুরুতে এসব কাজে অনীহার কথাই বেশিই শোনা গেছে। তবে আশ্চর্যের বিষয় হলো বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতালে যারা এ নমুনা সংগ্রহের কাজটি করছেন তারা সবাই স্বেচ্ছাশ্রমে এ কাজটি করছেন। শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে টেকনোলজিস্ট পদে লোক থাকলেও তারা গুরুত্বপূর্ণ বেশ কিছু জায়গায় নিয়োজিত থাকায় তাদের এখানে আনা সম্ভব হয়নি। শুরুতে বিভূতি ভূষণ নামে একজন নমুনা সংগ্রহের কাজ করলেও লোকবল সংকটে তাকে স্ব-স্থানে ফিরিয়ে নেওয়া হয়। এরপর শেবাচিম হাসপাতালে নমুনা সংগ্রহ কার্যক্রম মুখ থুবড়ে পরলে গত বছরের ৬ জুন থেকে ইনস্টিটিউট অব হেলথ টেকনোলজি বরিশালের ৫ জন সাবেক ছাত্র এগিয়ে আসেন। যদিও একমাস পরে নাইম রেজা নামের এক ছাত্র চলে গেলে ৪ জনে এ কাজকে স্বেচ্ছাশ্রমের মাধ্যমে এগিয়ে নিয়ে যান। এরপর গেল ১০ মাসের অধিক সময় ধরে একটানা ওই ৪ যুবকই শেবাচিম হাসপাতালে আসা রোগীদের নমুনা সংগ্রহ করে যাচ্ছেন। যারমধ্যে ভোলা জেলা সদরের মো. হোসেন, বরিশাল নগরের হরিনাফুলিয়ার শাকিল আহমেদ, পলাশপুরের প্রিন্স মুন্সী ও বানারীপাড়া উপজেলার মিরাজুল হক রয়েছেন। শাকিল আহমেদ জানান, সেই গত বছরের ৬ জুন থেকে একনাগারে তারা ৪ জন নমুনা সংগ্রহের কাজটি করে যাচ্ছেন। কাজ করতে করতেই তিনি ও মো. হোসেন করোনায় আক্রান্ত হন। চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়ে অল্প কিছুদিন পরেই আবারও তারা নমুনা সংগ্রহের কাজটি শুরু করেন। তিনি জানান, এ চারজন কখনো ছুটিতে অর্থাৎ অনুপস্থিতও থাকতে পারেন না। স্বেচ্ছাশ্রম দিয়ে যাত্রা শুরু করলেও এখন দায়বদ্ধতার জায়গা থেকে এখানেই জুড়ে রয়েছেন। আর এ কারণে মাসের পর মাস নিজেদের খরচেই বরিশালে থেকে শেবাচিম হাসপাতালে রোগীদের করোনার নমুনার সংগ্রহের কাজটি করে যেতে হচ্ছে। কিন্তু কেউ কোনো ধরণের খোঁজও নেন না। এ পর্যন্ত প্রায় ২০ হাজার মানুষের শরীর থেকে নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে জানিয়ে মো. হোসেন বলেন, এখানে একসময় নিয়োগপ্রাপ্ত টেকনোলজিস্টরা কাজ করলেও গত ১০ মাসের বেশি সময় ধরে আমরা ৪ জন স্বেচ্ছাশ্রম দিয়ে যাচ্ছি। তবে বলতে গেলে আমাদের কেউ খোঁজ নেন না। সম্প্রতি করোনার রোগীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় কাজের চাপও বেশি। বেশি নমুনা সংগ্রহের কাজে বেশি জনবলের প্রয়োজন হলেও, আমাদেরই দ্বিগুন পরিশ্রমে তা করতে হচ্ছে। তিনি বলেন, হাসপাতালের বিভিন্ন সেক্টরে এমন কিছু কাজ রয়েছে যেখানে টেকনোলজিস্টদের গুরুত্ব অনেক বেশি। কারণ তারা ছাড়া সেই কাজ অন্য কেই করতে পারেন না। গোটা দেশের হাসপাতালে টেকনোলজিস্টদের পদ খালি রয়েছে, সেগুলোতে নিয়োগ হওয়া প্রয়োজন। এতে পাশ করে বেকার বসে থাকা টেকনোলজিস্টদের যেমন কর্মসংস্থান হবে, তেমনি সরকারি হাসপাতালগুলোতে রোগীদের সেবার মান নিশ্চিত হবে। স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে দায়িত্ব পালন করা এ টেকনোলজিস্টদের বিষয়ে হাসপাতালের পরিচালক ডা. এইচ এম সাইফুল ইসলাম বলেন, আমরা চেষ্টা করছি তাদের জন্য কিছু একটা ব্যবস্থা করার। এছাড়া তাদের কাজের কৃতিত্বে একটি সনদ দেওয়ার চিন্তাভাবনাও রয়েছে, যেটি তারা পরবর্তী জীবনে চাকুরি থেকে শুরু করে যেকোনো কাজে ব্যবহার করতে পারবেন। এদিকে স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে দায়িত্ব পালন করা এ টেকনোলজিস্টেদের জন্য কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার কথা জানিয়েছেন বরিশালের জেলা প্রশাসক জসীম উদ্দীন হায়দার।
Leave a Reply