স্টাফ রিপোর্টার ॥ বরিশাল নদীবন্দরে করোনায় কর্মহীন ও অসহায় মানুষের পাশে খাবার নিয়ে আবারও দাঁড়িয়েছেন বরিশালের গণমাধ্যমকর্মীরা। গত বছর করোনায় লকডাউন শুরু হলে বরিশালের গণমাধ্যমকর্মীরা নদীবন্দরে থাকা দুই শতাধিক ছিন্নমূল শিশু ও অসহায়দের খাবারের ব্যবস্থা করেছিল। এবার আবারও লকডাউন শুরু হলে একই কাজ শুরু করে তারা। মঙ্গলবার (২০ এপ্রিল) দিনগত রাতে বরিশাল নদী বন্দরে এই কর্মসূচির ভার্চ্যুয়ালি উদ্বোধন করেন বরিশাল সিটি করপোরেশনের মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ। গত বছর ২৮ মার্চ এই কর্মসূচি নিয়ে প্রথম মাঠে নামেন তখনকার বরিশাল প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান সহসভাপতি এসএম জাকির হোসেন। এক পর্যায়ে বরিশালের সব গণমাধ্যমকর্মীরা এই কর্মসূচির সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করেন। লকডাউন যতদিন চলেছে ততদিন গণমাধ্যমকর্মীদের এই ‘উদ্যোগ’ অব্যাহত ছিল। নিজ নিজ গণমাধ্যমের বাইরে অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে প্রতিদিন দুই শতাধিক ছিন্নমূল শিশু ও অসহায়দের খাবারের ব্যবস্থা করেছিল বরিশালের গণমাধ্যমকর্মীরা। পরবর্তী সময় কর্মসূচিতে সহযোগী হন বরিশাল সিটি করপোরেশন, বরিশালের জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসনসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। এবছর পুনরায় লকডাউন শুরু হলে গণমাধ্যমকর্মীরা তাদের ‘উদ্যোগ’ নিয়ে মাঠে নামার প্রস্তুতি নেয়। সেই প্রস্তুতির অংশ হিসেবে বরিশাল সিটি করপোরেশনের মেয়র সাদিক আবদুল্লাহকে জানানো হয়। তিনি বিষয়টি শুনে সাধুবাদ জানান। এরপরই মঙ্গলবার রাতে আনুষ্ঠানিকভাবে মেয়র ওই কর্মসূচির সূচনা করে দেন। বরিশালের সবগণমাধ্যম সংগঠনের কর্মীরা একজোট হয়ে ওই দায়িত্ব পালন করছেন। করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত এই খাবার সরবরাহ অব্যাহত থাকবে বলেও জানিয়েছেন তারা। কর্মসূচি উদ্বোধন করতে গিয়ে মেয়র সাদিক আবদুল্লাহ বলেন, গণমাধ্যমকর্মীদের এটা একটা ব্যতিক্রমী উদ্যোগ। কর্মহীন এবং অসহায় মানুষের পাশে তারা খাবার নিয়ে সহযোগী হয়েছেন। তাদের এই উদ্যোগ অব্যাহত থাকুক। আমরা সবাই মিলে উদ্যোগ নিলে যেকোনো কঠিন কাজও সহজ হয়ে যাবে। আমরা সবাই মিলে করোনার এই মহামারি মোকাবিলা করবো। তিনি করোনার সময় এই সাময়িক সমস্যায় সকলকে সহানুভূতিশীল হয়ে কাজ করারও আহ্বান জানান। এই কর্মসূচির মূল উদ্যোক্তা শহীদ আবদুর রব সেরনিয়াবাত বরিশাল প্রেসক্লাবের সহসভাপতি এসএম জাকির হোসেন বলেন, গণমাধ্যমকর্মীরা সব দুর্যোগে মানুষের পাশে দাঁড়ায়। গত বছর প্রায় দেড় মাসেরও বেশি সময় ধরে খাদ্য সহায়তা নিয়ে ছিন্নমূল শিশু ও অসহায়দের পাশে থেকে কাজ করেছে। আমরা বরিশাল নদী বন্দরে থাকা ছিন্নমূল শিশু ও অসহায়দের জন্য রাতের খাবার ব্যবস্থা করার চেষ্টা করছি। এর কারণ হচ্ছে নৌবন্দরে থাকা এই ছিন্নমূল শিশুরা ঢাকা-বরিশাল নৌপথের লঞ্চগুলো এবং হোটেলে অবশিষ্ট খাবার খেয়ে রাত পার করতো। বর্তমানে করোনার কারণে হোটেল ও লঞ্চ সার্ভিস বন্ধ থাকায় তাদের খাবার সংকট দেখা দেয়। এসব মানুষের এক বেলা খাবার ব্যবস্থা করার ইচ্ছা থেকেই বরিশালের গণমাধ্যমকর্মীরা এবছরও কাজ শুরু করে। এই কাজে বরিশাল সিটি করপোরেশনের মেয়র সেরনিয়াবত সাদিক আবদুল্লাহ সহযোগী হয়ে পাশে আছেন। আমরা গত বছরের মত সব প্রশাসনের সহযোগিতা কামনা করছি। একইসঙ্গে সমাজের বিত্তবানরাও এই কর্মসূচির সঙ্গে যোগ দিতে পারেন। গণমাধ্যমকর্মীরা আহ্বান জানাচ্ছেন, তাদের দেওয়া প্রতিদিন রাতে খাবার সরবরাহ কর্মসূচির বাইরে যদি কোনো ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠান খাবার সরবরাহ করতে চান, তাহলে যেন তারা একটু আগে গণমাধ্যমকর্মীদের অবহিত করেন। তাহলে ওইদিন আর গণমাধ্যমকর্মীরা খাবার সরবরাহ করবে না। একই সময় একাধিক ব্যক্তি প্রতিষ্ঠান খাবার সরবরাহ করলে অপচয় হওয়ার আশঙ্কা দেখা দেবে। আসুন সবাই সহযোগী হয়ে কর্মহীন অসহায়দের পাশে দাঁড়াই।
Leave a Reply