মো: লুৎফুল হাসান রানা, কলাপাড়া প্রতিনিধি ॥ অত্যাধুনিক ডিজিটালের এ যুগেও একটি কাঁচা রাস্তার জন্য হাজারো মানুষ প্রতি বছর বর্ষাকাল এলেই চরম দুর্ভোগে পড়ে দীর্ঘদিন ধরে চলছে এ অবস্থা। মহিপুর সদর ইউনিয়নের মহিপুর বাজার হতে ভায়া কাটাভারানী বেবিবাঁধ সড়ক দিয়ে ও ডাবলুগঞ্জ ইউনিয়নের মনসাতলী এবং পার্শ্ববর্তী ধুলাস¦ার ইউনিয়নে তারিকাটাÑঅনন্তপাড়া ব্রীজ পর্যন্ত প্রায় ২৫কি.মি. সড়ক চলাচলের সম্পূর্ন অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। গুরুত্বপূর্ণ এ সড়কটি দীর্ঘদিন ধরে বেহাল দশায় থাকায় প্রায় ২০টি গ্রামের মানুষের দৈনন্দিন চলাচলে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। কাঁচা রাস্তা গুলো এখন ওই সব গ্রামবাসীর জন্য গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। চলাচলে পোহাতে হচ্ছে চরম দূর্ভোগ পথচারীদের থমকে পড়েছে হাজারো মানুষের জীবন যাত্রা। বর্ষা মৌসুমে রাস্তা গুলো পানি-কাঁদায় একাকার হয়ে যায়। এমন দুরবস্থার জন্য অতিরিক্ত কাঁদা আর পানির কারনে কোন যানবাহন তো দুরের কথা জুতা পায়ে হাটতে অসম্ভব ব্যাপার। মনে হয় যেন রাস্তা নয় চাষের জন্য প্রস্তুত কোন জমি। বিকল্প কোন ব্যবস্থা না থাকায় হাঁটু সমান কাদাঁ মাড়িয়ে চলাচল করত ওই সব গ্রামের হাজারো মানুষের। হাতে জুতা পানি-কাঁদা মাখা শরীরে চলে শিক্ষার্থীসহ হাজার হাজার লোকজন। এসব গ্রামের মানুষের স্বপ্ন দেখে যে মৃত্যুর আগে হয়ত গ্রামে ঢোকার একটা ভাল রাস্তা দেখে যেতে পারবে। কিন্তু সেই স্বপ্ন কি স্বপ্নই থেকে যাবে, নাকি বাস্তবে পরিণত হবে, এমন শঙ্কা নিয়েই দিনাতিপাত করছে এখানকার বাসিন্দারা। বছরের পর বছর ধরে এ গ্রামের মানুষ এ ভোগান্তি নিয়েই অবহেলিত জনপদে বসবাস করছে। স্বাধীনতার ৫০ বছর মুজিব বর্ষ পালিত হলেও শুধু মহিপুর সদর ইউনিয়নের মহিপুর বাজার হতে ভায়া কাটাভারানী বেবিবাঁধ সড়ক দিয়ে ও ডাবলুগঞ্জ ইউনিয়নের মনসাতলী এবং পার্শ্ববর্তী ধুলাসার ইউনিয়নে তারিকাটাÑঅনন্তপাড়া ব্রীজ পর্যন্ত প্রায় ২৫কি.মি. গ্রামে উন্নয়নের কোন ছোঁয়া লাগেনি। শুধু এই গ্রামগুলো অবহেলিত। এ গ্রামে হাজার হাজার লোকের বাস। রাস্তা পাশে রয়েছে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মাধ্যমিক বিদ্যালয়, দাখিল মাদ্রাসা , হাফিজী মাদ্রসা , কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থী। বর্ষা মৌসুমে গ্রাম থেকে বের হতে হলে জমির আইলের ওপর দিয়ে হাঁটা পথ। কারও মৃত্যু হলে খাটিয়ায় করে লাশ কবরস্থানে নেয়ার উপায় থাকে না। এছাড়া শিক্ষার্থীরাও ঠিকমতো স্কুল-কলেজ- যেতে পারে না। গ্রামের কেউ মৃত্যুবরণ করলে তার লাশ খাটিয়ায় করে কবরস্থানে নিয়ে যাওয়াই দুষ্কর হয়ে পড়ে। আর বর্ষার দিনে তো গ্রাম থেকে বের হওয়ায় দায় হয়ে পড়ে। গ্রামের কেউ অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে দ্রুত হাসপাতালে নেয়া সম্ভব হয় না। স্থানীয়রা দ্রুত রাস্তাটি পাঁকা করনে এলজিইড এবং স্থানীয় সংসদ সদস্যে ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের দৃষ্টি আকর্ষন করেছেন। দীর্ঘদিনের এ ভোগান্তি নিরসনে এলাকাবাসী দাবী জানিয়ে সমস্যার সমাধানে উদাসীন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এমন দাবী ভূক্তোভোগী মানুষের। প্রতি বছর বর্ষাকাল এলেই এ দুর্ভোগ চরম আকার ধারন করে। ভোটের সময় অনেক জনপ্রতিনিধিরা এলাকার দু:খ দুর্দশা লাঘবে সড়ক নির্মানে প্রতিশ্রতি দিলেও কখনোই সেই প্রতিশ্রতি বাস্তবায়ন নেই। দীর্ঘদিন ধরে এলাকাবাসী একটি রাস্তার জন্য বিভিন্ন মহলের কাছে আবেদন করলেও কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মহিপুর বাজার হতে কাটাভারানি বেবিবাঁধ সড়ক দিয়ে মহিপুর, বিপিনপুর, সেরাজপুর, লতিফপুর, নিজশিববাড়িয়া, ডাবলুগঞ্জ ইউনিয়নের রসুলপুর, মেহেরপুর, কাটাভারানি,কাজিকান্দা, সুরডগি, বরকুতিয়া, খাপড়াভাঙ্গা, মনসাতলী ,পার্শ্ববর্তী ধুলাসার ইউনিয়নে তারিকাটা ,নয়াকাটা, নয়াকাটা দিওর, বেীলতলী, বেীলতলীপাড়া, মুসলিমপাড়া, বেতকাটা, বেতকাটাপাড়া, খোচাউপাড়া. সোনাপাড়া, পক্ষিয়াপাড়া, অনন্তপাড়াসহ গ্রামের মানুষ মহিপুর থানা সদরে যাতায়াত করে থাকে। সড়কটির বিভিন্ন অংশে মাটি ক্ষয়ে সৃষ্টি হয়েছে অসংখ্য খানাখন্দের। এ সড়কের মহিপুর বাজার হতে প্রায় ২কি.মি. ইট সলিং রাস্তা ছিল। বর্তমানে তার চিহ্ন পর্যন্ত নেই। এই রাস্তা দিয়ে ওই তিন ইউনিয়নের মানুষ নবগঠিত মহিপুর থানার সাথে যে কোনো কেস মামলা ও কৃষি ব্যাংকের লোন এবং সাপ্তাহিক বাজার করার জন্য মহিপুরের সাথে যোগাযোগ করতে হয়। এছাড়া পুলিশ প্রশাসন যোগাযোগ খারাফের কারনে যে কোনো মামলার আসামি ও গ্রামে চুরি চিনতায়ের হলে সঠিক ভাবে দায়িত্ব পালন করতে পারেন না। বর্ষাকালে সামান্য বৃষ্টিতে কাদামাটিতে একাকার হয়ে সম্পূর্ন চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ে। তিনটি ইউনিয়নের ২০টি গ্রামের ছ্ত্রা ছাত্রীদের পড়াশুনার জন্য ওই রাস্তা দিয়ে মহিপুর কোÑঅপারেটিভ মাধ্যমিক বিদ্যালয়, মহিপুর মুক্তিযোদ্ধা ডিগ্রি কলেজ,বিপিনপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মনসাতলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়,তারিকাটা দাখিল মাদ্রাসা, ধুলাসার আলহাজ্ব জালাল উদ্দিন ডিগ্রি কলেজ, বৌলতলী সৈয়দপুর(নয়াকাটা)সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, নয়াকাটা এবতেদায়ী মাদ্রাসা, অনন্তপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, চরচাপলী ইসলামীয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয় যেতে হয় একই রাস্তা দিয়ে। ৩ টি ইউনিয়নের মানুষ একেবারেই অবহেলিত। জনপ্রতিনিধিরা বিভিন্ন সময়ে জনগুরুত্বপূর্ন রাস্তাটি পাকাকরণের কথা বললেও তা এখনো কার্যকর হয়নি। রাস্তাঘাট না থাকায় এ এলাকায় বর্তমান সরকারের আজো উন্নয়নের কোনো ছোঁয়া লাগেনি। ভোট এলে নেতারা রাস্তা নির্মানের স্বপ্ন দেখান। ভোট চলে গেলে তারা তা মনে রাখেন না। এ এলাকায় কোনো মাইক্রো বাস, ট্রাক, নছিমন Ñকরিমন, আটো রিকশা, আটো ভ্যান, পায়ে চালিত ভ্যান চলাচল করতে পারেনা। কৃষক তাদের উৎপাদিত ধান রাস্তা পাকা না হওয়ার বিক্রি করতে আসেন না। ফলে তাদের ধান কম দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। এরফলে তারা ফসলের ন্যায্যমুল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এ এলাকার সন্তান-সম্ভাবা মা, মুমূর্ষু রোগীদের হাসপাতালে নিতে পার হতে হয় চড়াই-উৎরাই। কখনো রাস্তার মধ্যেই বেগ হয়ে সন্তান হয় ও মারা যায় রোগী। স্থানীয়রা জানান, বন্যা নিয়ন্ত্রন বেবিবাধ এ সড়কের অধিকাংশ জায়গায় মাটি ক্ষয়ের ফলে বাধঁ হয়ে পড়েছে অপ্রশস্থ। এই রাস্তার কারনে ঝিমিয়ে পড়েছে এই অঞ্চলের অর্থনৈতিক চাকা। কারন একটি অঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থা যদি ভাল না হয় সেই অঞ্চলের মানুষদের জীবনমানে কোন গুরুত্ব নেই। এই এলাকার মানুষ স্বপ¦ দেখে যে কখনেই মৃত্যু আগে হয়তো গ্রামে রাস্তাটি পাঁকা দেখে যে পারবেন। কিন্তু সেই স্বপ¦ কি স্বপ¦ই থাকবেই নাকি বাস্তবে পরিনত হবে এমন শংকা নিয়েই দিনাপাত করছেন এখানকার বাসিন্দারা। নয়াকাটা গ্রামের সাবেক ইউপি সদস্য মো: নোয়াব আলী হাওলাদার জানান, এলাকার রাস্তাঘাট পাকা ও খাপড়াভাঙ্গা নদীতে ব্রিজ নির্মান না হওয়ায় আধুনিকতার ছোঁয়া লাগেনি এ এলাকায়। সড়ক এবং সেতু নির্মিত না হওয়ায় এ এলাকাগুলো অনেক পিছিয়ে রয়েছে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা জানান, বেরিবাধের স্লোপে বসবাসকারী মানুষ তাদের প্রয়োজনে বেরিবাঁধ থেকে মাটি কেটে নেয়ার ফলে এ দশায় পরিনত হয়েছে। এছাড়াও বেরিবাঁধ র্নির্মানের পর থেকে কোন সংস্কার কাজ না হওয়ায় চলাচলের উপযোগীতা হারানোসহ ঝুকিপূর্ন হয়ে পড়েছে এ বেরিবাঁধ সড়ক। বর্ষা হলে রাস্তাটি কাদা-পানিতে একাকার হয়ে যায়। সপ্তাহের একদিন বৃহসপতিবার একটি প্রাচীন বড়হাট এ হাট বসে মহীপুরে। দূরদূরন্ত থেকে কৃষিপন্য ও মালামাল মাথায় করে এলাকাবাসীকে মহিপুর হাটে যেতে হয়ও বিক্রি করতে হয়। ধুলাসার ও ডাবলুগজ্ঞ, মহিপুর ইউনিয় পরিষদের চেয়ারম্যান মো: আ: জলিল আকনও অধ্যক্ষ দেলওয়ার হোসেন, আলহাজ্ব মো: ফজলু গাজী জানান, ওই রাস্তাটি খুবই জনগুরুত্বপুর্ন ও মানুষের জনস্বার্থে রাস্তাটি পাকা করা উচিত। কলাপাড়া উপজেলা স্থানীয় সরকার ও প্রকৌশলী অধিদপ্তর (এলজিইডি) মো: মোহন আলী জানান, মাত্র কয়েক কিলোমিটার রাস্তাটি জনগনের জন্য খুবই প্রয়োজন এবং রাস্তা পাকা করার জন্য উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে।
Leave a Reply