বিশেষ প্রতিনিধি ॥ বড় ভাই লিয়াকত আলীকে সোমবার (১৮ এপ্রিল) বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডে ভর্তি করেন বরগুনার আমতলী উপজেলার শামীম তালুকদার। বর্তমানে লিয়াকত আলী আইসিইউতে। শামীম তালুকদার জানিয়েছেন, প্রতি ২৪ ঘণ্টায় ভাইকে তিনটি মেরোপেনেম এবং একটি রেমডেসিভির ইনজেকশন দিতে হয়। কিন্তু হাসপাতাল থেকে ইনজেকশন দিচ্ছে না। ফার্মেসি থেকে কিনতে হয়। রেমডেসিভির ইনজেকশন সাড়ে চার থেকে সাড়ে পাঁচ হাজার টাকায় কিনতে হয়। পাশাপাশি মেরোপেনেম ইনজেকশন ১৩০০-১৫০০ টাকায় কিনতে হয়। শামীম বলেন, ইনজেকশনের দাম একেক দোকানে একেক রকম রাখা হয়। পাঁচ দিন ধরে একই ইনজেকশন একেক দামে কিনতে কিনতে আমার টাকা শেষ। শামীম তালুকদারের মতো আরও দুই রোগীর স্বজনের সঙ্গে কথা হয় প্রতিবেদকের। তারাও অভিযোগ করেন, হাসপাতাল থেকে মেরোপেনেম এবং রেমডেসিভির ইনজেকশন দিচ্ছে না। ফলে ফার্মেসি থেকে ইনজেকশন কিনতে হয়। চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, করোনা রোগীদের চিকিৎসায় অ্যান্টিভাইরাল ওষুধ রেমডেসিভির ও অ্যান্টিবায়োটিক মেরোপেনেম ইনজেকশন ব্যবহৃত হয়। চিকিৎসকরা বলছেন, দুটি ইনজেকশনের একটি দিনে তিনবার ও আরেকটি একবার রোগীকে প্রয়োগ করতে হয়। যতদিন রোগী সংক্রমণমুক্ত না হন ততদিন ইনজেকশন দিতে হয়। এক সপ্তাহ আগেও শের-ই-বাংলা মেডিকেলের করোনা ইউনিটে ভর্তি রোগীদের ইনজেকশন দুটি বিনামূল্যে দেওয়া হতো। কিন্তু বর্তমানে সরবারহ না থাকায় রোগীদের বাইরে থেকে কিনতে হয়। ইনজেকশন শেষ হয়ে যাওয়ায় দাম বাড়িয়ে দিয়েছে ফার্মেসিগুলো। এ নিয়ে ফার্মেসিতে সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে। এদিকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানে না কবে নাগাদ এসব ইনজেকশন আসবে। যদিও হাসপাতাল পরিচালক বলছেন, চাহিদাপত্র স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। দ্রুতই ইনজেকশন চলে আসবে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এক সপ্তাহ আগে করোনা চিকিৎসায় ব্যবহৃত ইনজেকশন দুটির সরবারহ বন্ধ হয়ে যায়। এরপর তারা বাইরে থেকে ইনজেকশন কিনতে বলছেন রোগীদের। ইনজেকশন শেষ হয়ে যাওয়ার খবর জানাজানি হলে হাসপাতালের সামনের ফার্মেসি ও নগরীর ফার্মেসিগুলোতে বাড়িয়ে দেওয়া হয় ইনজেকশনের দাম। হাসপাতালের সামনের ফার্মেসিগুলোতে দেখা যায়, ইনজেকশন দুটি ফার্মেসিগুলোতে সরবরাহ করছে ইনসেপ্টা ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড। কিন্তু হঠাৎ করোনা রোগী বেড়ে যাওয়ায় তারাও চাহিদামতো ইনজেকশন দিচ্ছে না। এ সুযোগে বেশি দামে বিক্রি করছে ফার্মেসিগুলো। অথচ রেমডেসিভির ইনজেকশন ফার্মেসিগুলোতে ১৮০০-২২০০ টাকায় সরবারহ করছে প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান। কিন্তু ফার্মেসিগুলো চার থেকে সাড়ে চার হাজার টাকায় বিক্রি করছে। শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালকের কার্যালয়ের তথ্য সংরক্ষক জে. খান স্বপন বলেন, শুক্রবার সকাল ১০টা পর্যন্ত হাসপাতালে ১২৫ জন রোগী চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এদের মধ্যে ৪৮ জন করোনা রোগী। ২৪ ঘণ্টায় আটজন ভর্তি হয়েছেন। মারা গেছেন ছয়জন। বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. বাসুদেব কুমার দাস বলেন, করোনা সংক্রমণের পর থেকে বিভাগে এখন পর্যন্ত ১৩ হাজার ৯৮৬ জন আক্রান্ত হয়েছেন। মৃত্যুবরণ করেছেন ২৪৪ জন। শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. সাইফুল ইসলাম বলেন, করোনার চিকিৎসায় ব্যবহৃত রেমডেসিভির ও মেরোপেনেম ইনজেকশন দুটি শেষ হয়ে গেছে। ওষুধ সরবরাহের জন্য চাহিদাপত্র পাঠানো হয়েছে। বর্তমানে আমাদের যে পরিমাণ চাহিদা রয়েছে; তার থেকেও বেশি চাহিদা দেওয়া হয়েছে। দ্রুত ওষুধ দেওয়ার জন্য নিয়মিত যোগাযোগ করছি আমরা। বরিশালের জেলা প্রশাসক (ডিসি) জসীম উদ্দীন হায়দার বলেন, করোনার চিকিৎসায় ব্যবহৃত ইনজেকশন শেষ হয়ে যাওয়ার বিষয়টি আমাকে জানানো হয়েছে। দ্রুত যাতে ওষুধ সরবরাহ করা হয় সে বিষয়ে তদারকি করছি। ফার্মেসিগুলো এ সুযোগে বাড়তি দাম রাখলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা নিয়মিত ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান চালান। অভিযোগ পাওয়ার পরপরই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
Leave a Reply