স্টাফ রিপোর্টার ॥ নলছিটি উপজেলার সরমহল গ্রামের একটি বাগান থেকে গত (২৩ এপ্রিল) শুক্রবার সকালে এক স্কুলছাত্রীকে (১৫) অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করে স্থানীয় লোকজন। পরে এই কিশোরীর জ্ঞান ফিরলে সে জানায়, ওই গ্রামের আল আমিন খান (২৬) রাতে তাকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে ধর্ষণ করে সেখানে ফেলে যান। পরে স্থানীয়দের চাপের মুখে আল আমিনের সঙ্গে কিশোরীটির বিয়ে হয়েছে। স্থানীয়রা জানায়, অভিযুক্ত আল আমিন খান সরমহল গ্রামের কৃষক রশিদ খানের ছেলে। পেশায় ভাড়ায় মোটরসাইকেলচালক আল আমিন দশম শ্রেণির ওই ছাত্রীকে প্রেমের প্রস্তাব দিয়ে আসছিলেন। এতে রাজি হয়নি কিশোরীটি। গত বৃহস্পতিবার গভীর রাতে আল আমিন তাঁর দুই মামাতো ভাইকে নিয়ে মেয়েটির বাড়িতে যান। কৌশলে দরজা খুলে কিশোরীকে তুলে নিয়ে সরমহলের জোড়াকালভার্ট এলাকায় নিয়ে ধর্ষণ করেন আল আমিন। মেয়েটি জ্ঞান হারালে রাস্তার পাশে বাগানে তাকে ফেলে চলে যান তিনি। গতকাল সকালে তাকে অজ্ঞান অবস্থায় দেখতে পেয়ে উদ্ধার করে বাড়িতে নিয়ে যায় স্থানীয়রা। পরে জ্ঞান ফিরলে সে পরিবারের কাছে ঘটনা জানায়। বিষয়টি এলাকায়ও জানাজানি হয়। ঘটনা ধামাচাপা দিতে আল আমিন ও তাঁর লোকজন মেয়েটির পরিবারকে চাপ দেন। আল আমিনের পরিবার স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের মাধ্যমে বিষয়টি নিষ্পত্তির জন্য তদবির শুরু করে। নানা চাপের মুখে মেয়েটির পরিবার ধর্ষণের ঘটনা পুলিশকে জানায়নি। দুপুর ১২টার দিকে আল আমিনের বাড়িতে মেয়েপক্ষের লোকজন নিয়ে বৈঠক করেন স্থানীয় নারী ইউপি সদস্যের স্বামী টিপু হাওলাদার, সরমহলের সোহেল ফরাজী, রোকন, সোহেল, দেলোয়ার হোসেনসহ কয়েকজন। এক পর্যায়ে ধর্ষণ ঘটনার জন্য উপস্থিত সবার কাছে ক্ষমা চেয়ে কিশোরীটিকে বিয়ে করতে রাজি হন আল আমিন। পরে উভয় পরিবারের সম্মতিতে স্থানীয় কাজি ডেকে দুই লাখ টাকা দেনমোহরে বিয়ে পড়ানো হয়। মেয়ের নামে ৫ শতাংশ জমি দলিল করে দিতে আল আমিন লিখিত চুক্তিও করেন। মেয়েটির বিয়ের বয়স না হওয়ায় রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলেও বিয়ের তারিখ দেখাননি কাজি মো. জহিরুল ইসলাম। বিয়ে পড়ানোর একটি ছবি সংবাদকর্মীদের কাছে আছে। বৈঠকে উপস্থিত এক যুবক বলেন, ছেলে-মেয়ের পরিবারের লোকজনের উপস্থিতিতেই বিয়ে হয়েছে। কাজি নিকাহ রেজিস্ট্রারে উভয় পক্ষের সাক্ষীদের সই নেন। আল আমিনও স্বাক্ষর করেন। বিয়ে পড়িয়ে দোয়া-মোনাজাত করেন কাজি। সরমহল গ্রামের টিপু হাওলাদার বলেন, ‘মেয়ের বিয়ের বয়স হতে চার মাস বাকি আছে। বয়স হয়ে গেলে রেজিস্ট্রেশনে তারিখ দেওয়া হবে।’ বিয়ের কাজি মো. জহিরুল ইসলাম বলেন, ‘মৌখিকভাবে কথাবার্তা হয়েছে। এখনো বিয়ে পড়ানো হয়নি, কারণ মেয়ের বয়স হয়নি। বয়স সম্পন্ন হলে বিয়ে রেজিস্ট্রেশন করা হবে।’ নলছিটি থানার ওসি আলী আহম্মেদ বলেন, ‘এ ধরনের কোনো ঘটনা আমার জানা নেই। ধর্ষণ বা বিয়ের বিষয়ে আমাদের কাছে কেউ অভিযোগ করেনি।’
Leave a Reply