সোমবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৫, ০৩:২১ অপরাহ্ন

প্রধান পৃষ্ঠপোষকঃ মোহাম্মদ রফিকুল আমীন
উপদেষ্টা সম্পাদকঃ জহির উদ্দিন স্বপন
সম্পাদক মণ্ডলীর সভাপতিঃ এস. সরফুদ্দিন আহমেদ সান্টু
প্রধান সম্পাদকঃ লায়ন এস দিদার সরদার
সম্পাদকঃ কাজী মোঃ জাহাঙ্গীর
যুগ্ম সম্পাদকঃ মাসুদ রানা পলাশ
সহকারী সম্পাদকঃ লায়ন এসএম জুলফিকার
সংবাদ শিরোনাম :
কোন অন্যায়কে প্রশ্রয় দেননি বলেই বেগম জিয়া ‘একজন আপোষহীন নেত্রী’-আবু নাসের মো: রহমাতুল্লাহ আন্তর্জাতিক সাংবাদিক আইনি প্রতিকার ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে এক জাঁকজমকপূর্ণ ইফতার দোয়া মাহফিল রাজনৈতিক ও সামাজিক কর্মকান্ডে প্রশংসিত বরিশাল উত্তর জেলা নারী নেত্রী বাহাদুর সাজেদা বরিশালে সাংগঠনিক সফরে আসছেন জাতীয় নাগরিক কমিটির কেন্দ্রীয় যুগ্ম সদস্য সচিব ডা: মাহমুদা মিতু দুই দিনের সফরে আজ বরিশাল আসছেন অতিথি গ্রুপ অব কোম্পানির এমডি লায়ন সাইফুল ইসলাম সোহেল  পিরোজপুর ভান্ডারিয়ার যুব মহিলা লীগ নেত্রী জুথি গ্রেফতার গৌরনদীতে তিন দফা দাবি আদায়ে ছাত্রদলের বিক্ষোভ মিছিল উপজেলা প্রশাসনকে ১৫ দিনের আল্টিমেটাম গ্রেনেড হামলার মামলা থেকে তারেক রহমানসহ বিএনপি নেতারা খালাস পাওয়ায় গৌরনদীতে আনন্দ মিছিল বরিশালের বাকেরগঞ্জসহ চারটি থানা এবং উপজেলায় নাগরিক কমিটি গঠন   আওয়ামী লীগ ও শেখ হাসিনা বিহীন বাংলাদেশ শান্তিতে থাকবে, এটা অনেকেরই ভালো লাগেনা-এম. জহির উদ্দিন স্বপন
করোনার ধাক্কায় কর্মসংস্থানে বিপর্যয়ে বেড়েই চলেছে দরিদ্র মানুষের সংখ্যা

করোনার ধাক্কায় কর্মসংস্থানে বিপর্যয়ে বেড়েই চলেছে দরিদ্র মানুষের সংখ্যা

দখিনের খবর ডেস্ক ॥ করোনা মহামারীর আঘাতে দেশে নতুন করে দরিদ্র হওয়ার মানুষের সংখ্যা ক্রমাগত বেড়ে চলেছে। ইতিমধ্যে ওই সংখ্যা প্রায় আড়াই কোটিতে পৌঁছেছে। করোনা মহামারির প্রকোপ যদি না কমে তাহলে কর্মসংস্থান তৈরি করা চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) ২০১৬-১৭ সালের জরিপ অনুযায়ী দেশে মোট শ্রমশক্তি ৬ কোটি ৮ লাখ। তার মধ্যে প্রাতিষ্ঠানিক খাতে (শ্রম আইনের সুবিধা পাওয়া) কর্মরত জনশক্তি মাত্র ১৪ দশমিক ৯ শতাংশ। আর সবচেয়ে বড় অংশ ৮৫ দশমিক ১ শতাংশ অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে কর্মরত। তাদের মধ্যে কমপক্ষে ৫ কোটি দিনমজুর। যাদের শ্রম আইন-২০০৬ প্রদত্ত নিয়োগপত্র, কর্মঘণ্টা, ঝুঁকিভাতা, চিকিৎসাভাতা, বাড়িভাড়াসহ বেশিরভাগ অধিকারই নিশ্চিত নয়। কাজের ওপর নির্ভর করে তাদের জীবিকার নিশ্চয়তা। করোনা ভাইরাস ওসব মানুষের জীবিকায় ভয়াবহ প্রভাব ফেলেছে। গত বছর করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ শুরুর আগে বাংলাদেশে দারিদ্র্যের হার ছিল ২০ শতাংশ। তবে করোনা শুরুর কিছুদিনের মধ্যে ওই সংখ্যা ৪২ শতাংশে গিয়ে ঠেকে বলে জানিয়েছে বেসরকারী গবেষণা সংস্থা সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিং (সানেম)। সংস্থাটির জরিপ অনুযায়ী ৪২ শতাংশ মানুষ এখন দরিদ্র। অর্থাৎ শুধু করোনার কারণেই বাংলাদেশ প্রায় ২০ বছর আগের অবস্থানে ফিরে গেছে। এরই মধ্যে এসেছে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ। সম্প্রতি বেসরকারী গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) ও শ্রমবিষয়ক সংগঠন বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজ (বিলস) প্রকাশিত এক জরিপ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের দেড় কোটি মানুষ বেকার হয়ে পড়েছে। আর লকডাউন দীর্ঘায়িত হলে তারা চরম খাদ্য সঙ্কটে পড়বে। সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, করোনা প্রাদুর্ভাবে গতবারের অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে দেশে খেটে খাওয়া সাধারণ শ্রেণির মানুষজনই সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়ে। বাংলাদেশের অর্থনীতির অন্যতম বড় শক্তি প্রবাসী আয়। করোনার প্রথম ধাক্কায় প্রবাসী আয় না কমলেও মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন দেশে শ্রমিক যাওয়া ব্যাপকভাবে কমে গেছে। ফলে মাসওয়ারি ভিত্তিতে প্রবাসী আয় কমতে শুরু করেছে। করোনার দ্বিতীয় ধাক্কায় পরিস্থিতি আরো বেগতিক হতে পারে। রামরুর এক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ২০২০ সালের নভেম্বর মাস পর্যন্ত আগের বছরের তুলনায় প্রবাসে শ্রমিক যাওয়া ৭১ শতাংশ কমে গেছে। প্রবাসী আয়ে তার প্রভাবও পড়েছে। আর গত সেপ্টেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত ধারাবাহিকভাবে আগের মাসের তুলনায় প্রবাসী আয় কমেছে। ূত্র জানায়, করোনার ধাক্কায় দেশে নতুন করে আড়াই কোটি মানুষ দরিদ্র হয়েছে। সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সাস্প্রতিক এক গবেষণায় বলা হয়েছে, করোনা মহামারীর প্রভাবে প্রায় দেড় কোটি লোক নতুন করে দরিদ্র হয়েছে। তাছাড়া মহামারীতে ১ কোটি ৪৪ লাখ কর্মী কাজ হারিয়েছেন বলে অর্থনীতিবিদ ড. আবুল বারকাতের এক গবেষণায় তুলে ধরা হয়েছে। বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজ (বিলস) এক পর্যবেক্ষণে আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেছে, চলমান করোনায় নতুন করে কর্মহীন হয়ে পড়বে প্রায় চার কোটি মানুষ। তবে দেশে দারিদ্র্যের হার বাড়লেও কোটিপতির সংখ্যাও ১০ হাজারের মতো বেড়েছে বলে বাংলাদেশ ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে তথ্য উঠে এসেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মতে, গত বছর শেষে কোটিপতি ব্যাংক হিসাবের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৯৩ হাজার ৮৯০টি। তাছাড়া বেসরকারী গবেষণা প্রতিষ্ঠান পাওয়ার এ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টার (পিপিআরসি) ও ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গবর্ন্যান্স এ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (বিআইজিডি) এক যৌথ সমীক্ষায় করোনার প্রভাবে নতুন করে আড়াই কোটি মানুষ দরিদ্র হয়েছে বলে তথ্য উঠে এসেছে। কোভিডের আঘাত সব জায়গায় একইভাবে অনুভূত হয়নি। শহরের তুলনায় গ্রামে তার প্রভাব কমই দেখা গেছে। যে কারণে শহরের বস্তিবাসীর জীবন গ্রামের শ্রমজীবীদের তুলনায় অনেক বেশি অরক্ষিত। তাছাড়া ভাড়া বাড়িতে থাকা অধিকাংশ শহুরে দরিদ্রের জন্য এটি নির্মম বাস্তবতা। আশ্চর্যজনকভাবে সবার সঞ্চয় কমেছে। অরক্ষিত অদরিদ্র এবং দরিদ্র নয় এমন শ্রেণির মানুষের সঞ্চয়ের পরিমাণ কোভিড-পূর্ববর্তী অবস্থার চেয়ে নিচে নেমে গেছে। একই সঙ্গে সব শ্রেণিতেই ঋণ গ্রহণের পরিমাণ দ্বিগুণ হয়েছে। ফলে দেখা গেছে, জরিপে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে চরম দারিদ্র্যের হার সামগ্রিকভাবে ৪ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। সম্প্রতি করোনায় কর্মহীন জনগোষ্ঠী নিয়ে গবেষণা করেছেন অর্থনীতিবিদ ড. আবুল বারকাত। তার গবেষণায় দেখানো হয় দেশে কৃষি, শিল্প ও সেবা খাতে ৬ কোটি ৮২ লাখ ৮ হাজার মানুষ কর্মে নিয়োজিত ছিল। শুধু লকডাউনের কারণে কর্মহীন হয়েছে ৩ কোটি ৫৯ লাখ ৭৩ হাজার ২৭১ জন। অর্থাৎ মোট কর্মগোষ্ঠীর ৫৯ শতাংশ মানুষই কর্মহীন হয়ে পড়েছে। তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি সেবা খাতে বেকার হয়েছে। আর কাজ হারানো মানুষের মধ্যে ৪০ শতাংশ সামনে কোন কাজ ফিরে পাবে না। তাছাড়া করোনার প্রভাবে আগামীতে কর্মসংস্থানের প্যাটার্নও পাল্টে যাবে। যেখানে প্রযুক্তিনির্ভর দক্ষতাভিত্তিক কর্মসংস্থানের গুরুত্ব বাড়বে। সূত্র আরো জানায়, করোনার কারণে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে আছে দেশের অতিক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প খাত। বিবিএস’র হিসাবে ওসব খাতেই দেশের ৩৫ শতাংশ কর্মসংস্থান হয়। করোনার দ্বিতীয় ধাক্কায় ওই খাতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। প্রথম ধাক্কায় অনেকেই লোকসানে পড়েছে। এখন কিছুটা ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছিল কিন্তু দ্বিতীয় ধাক্কায় তারা আর দাঁড়াতে পারছে না। গত বছরের মার্চ থেকে আঘাত হানা করোনা ভাইরাসের প্রভাবে দেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড থমকে যায়, লন্ডভন্ড হয়ে যায় অনেক অর্জন। এ বছর আবারো মার্চের শেষ দিক থেকে এদেশে করোনা প্রচণ্ডভাবে আঘাত হেনেছে। অর্থনীতি যখন ঘুরতে শুরু করেছিল ঠিক তখনই করোনার দ্বিতীয় ঢেউ নতুন করে শঙ্কা জাগাচ্ছে। কারণ আসন্ন রমজান ও ঈদকে কেন্দ্র করে ব্যবসায়ীরা অর্থনীতি চাঙা হওয়ার প্রত্যাশা করেছিল। সরকার ভ্যাকসিন কার্যক্রম শুরু করার পর করোনা নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে অর্থনীতিতে চাঞ্চল্য ফিরে আশার প্রত্যাশা করা হয়েছিল। কিন্তু এখন প্রতিদিনই করোনার আঘাত তীব্রতর হচ্ছে। করোনার দ্বিতীয় ধাক্কায় অনেক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানই আর উঠে দাঁড়াতে পারবে না। বিশ্বব্যাংকের মতো সংস্থা ইতিমধ্যে আভাস দিয়েছে, নতুন এই ধাক্কা বাংলাদেশের অর্থনীতিতে অনিশ্চয়তা তৈরি করছে। গত জুন মাসের পর অর্থনীতি যে ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছিল তা বাধাগ্রস্ত হবে। এদিকে বিদ্যমান পরিস্থিতি প্রসঙ্গে অর্থনীতিবিদদের মতে, করোনার প্রভাব দীর্ঘদিন হওয়ায় গরিব মানুষের অবস্থা খুবই খারাপ হয়ে পড়েছে। অনেকে বেকার হয়ে নতুন করে কাজে ফিরতে পারছে না। এরই মধ্যে আরও বড় আকারে ধাক্কা দিয়েছে করোনার প্রভাব। করোনায় কৃষি খাতে কাজ হারিয়েছে ১ কোটি ১৪ লাখ মানুষ। তার মধ্যে প্রায় ৪৬ লাখ মানুষ পুনরায় কাজে ফিরতে পারেনি। শিল্প খাতে প্রায় ৯৩ লাখ শ্রমিক কর্মহীন হয়ে পড়েছে। তার ৩৭ লাখ শ্রমিকের তাদের কাজ হারানোর শিল্পে ফেরার সুযোগ বন্ধ হয়ে গেছে। পাশাপাশি সেবা খাতে ১ কোটি ৫৩ লাখ কর্মী চাকরি হারিয়েছে। এদের মধ্যে ৬১ লাখ মানুষ বেকার হয়ে পড়েছে। নতুন করে আগের কাজে ফিরতে পারেনি। কাজে ফিরতে না পারা ওসব মানুষ দরিদ্রতার শিকার হচ্ছে। বেঁচে থাকার তাগিদে অনেকে ঋণগ্রস্ত হচ্ছে। অন্যদিকে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজ (বিলস) এক পর্যবেক্ষণে আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেছে, চলমান করোনায় নতুন করে কর্মহীন হয়ে পড়বে প্রায় ৪ কোটি মানুষ। তৈরি পোশাক, রেস্তরাঁ ও শিল্পকারখানা চালু রাখার সুযোগ থাকলেও নির্মাণ, পরিবহন, পোলট্রিসহ অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে নিয়োজিত অসংখ্য মানুষের জীবিকা পড়ছে সঙ্কটে। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের হিসাবে সারাদেশে পরিবহন শ্রমিকের সংখ্যা প্রায় ৪০ লাখ। কঠোর লকডাউনে সব ধরনের গণপরিবহন বন্ধ। ফলে এরই মধ্যে কাজ হারিয়ে বেকার হয়েছে ওই খাতের কয়েক লাখ কর্মী। পরিবহন সংশ্লিষ্টরা বলছে, এ খাতের শ্রমিকরা সবাই দিনভিত্তিক মজুরি পায়। লকডাউনের কারণে কাজ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ভয়াবহ আর্থিক সঙ্কটে পড়েছে তারা।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..



Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *




© All rights reserved © 2017-2024 Dokhinerkhobor.Com
Desing & Developed BY ThemesBazar.Com