নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ আজ মহান মে দিবস। শ্রমজীবী মানুষের অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে গৌরবময় ইতিহাস সৃষ্টির দিন। এ বছর মে দিবস যখন এসেছে, তখন মহামারী করোনা ভাইরাসের কারণে সারা বিশ্বে ১৬০ কোটি শ্রমিক কর্মহীন। দীর্ঘ বঞ্চনা ও শোষণ থেকে মুক্তি পেতে ১৮৮৬ সালের ১ মে যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহরে বুকের রক্ত ঝরিয়েছিলেন শ্রমিকরা। যার মধ্য দিয়ে দৈনিক কাজের সময় ৮ ঘণ্টা প্রতিষ্ঠিত হয়। সেই থেকে প্রতি বছর মে মাসের ১ তারিখে বিশ^ব্যাপী পালিত হয়ে আসছে দিবসটি। দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন। আজ সরকারি ছুটির দিন। তবে করোনা পরিস্থিতিতে দেশব্যাপী লকডাউন ও বিধিনিষেধের কারণে দিবসটির সব কর্মসূচি বাতিল করা হয়েছে। গতকাল শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা জানানো হয়। বিশ্বের কোটি কোটি শ্রমজীবী মানুষ কাজ হারিয়ে বেকার হয়ে পড়েছেন। মহামারী-সৃষ্ট অর্থনৈতিক মন্দায় বিশ্বের ১৬০ কোটি খেটে মানুষ কাজ হারানোর ঝুঁকিতে আছে বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও)। বাংলাদেশেও করোনাভাইরাস-সৃষ্ট দুর্যোগে কাজ হারিয়েছেন কোটি কোটি মানুষ। তাদের মধ্যে অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে নিয়োজিত প্রায় ৫ কোটি শ্রমিকের অবস্থা শোচনীয় রূপ ধারণ করেছে। মে দিবসের ইতিহাস থেকে জানা যায়, শিল্পবিপ্লব-পরবর্তী সময়ে ইউরোপ-আমেরিকার কারখানাগুলোতে নিজেদের ইচ্ছেমতো শ্রমিকদের কাজ করাতেন মালিকরা। এমনকি তাদের ন্যায়সংগত শ্রমের মূল্যও দেওয়া হতো না। এসবের প্রতিবাদে আন্দোলনে নামে শ্রমিকদের বিভিন্ন সংগঠন। ৮ ঘণ্টা কাজের দাবিতে ১৮৮৬ সালের ১ মে যুক্তরাষ্ট্রের সব শিল্পাঞ্চলে ধর্মঘটের ডাক দেন শ্রমিকরা। এতে সাড়া দিয়ে শিকাগো শহরের হে মার্কেটে জড়ো হন লাখো শ্রমিক। শ্রমিক বিক্ষোভের একপর্যায়ে পুলিশ গুলি চালালে ১০ জন শ্রমিক প্রাণ হারান। হে মার্কেটের ওই শ্রমিক বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে সারা বিশ্বে। তীব্র আন্দোলনের মুখে শ্রমিকদের দৈনিক ৮ ঘণ্টা কাজের দাবি মেনে নিতে বাধ্য হয় যুক্তরাষ্ট্র সরকার। পরে ১৮৮৯ সালের ১৪ জুলাই প্যারিসে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক শ্রমিক সম্মেলনে শিকাগোর রক্তঝরা অর্জনকে স্বীকৃতি দিয়ে ওই ঘটনার স্মারক হিসেবে ১ মে ‘আন্তর্জাতিক শ্রমিক সংহতি দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়। ১৮৯০ সাল থেকে প্রতি বছর দিবসটি বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ‘মে দিবস’ হিসেবে পালন করতে শুরু করে। শ্রম মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তিতে শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মন্নুজান সুফিয়ান শ্রমিকদের শুভেচ্ছা জানান। তিনি বলেন, বৈশ্বিক এ মহামারীর মধ্যে দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা মোতাবেক মালিকরা প্রয়োজনে কারখানা খোলা রাখবেন। তবে অবশ্যই কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালন করতে হবে। এ ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট দপ্তর, সংস্থা যেমন শিল্পপুলিশ, কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সঙ্গে সমন্বয় করে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন শ্রম প্রতিমন্ত্রী।
Leave a Reply