বিশেষ প্রতিনিধি ॥ সরকারের বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা অভিযান চালিয়ে আসামি কিংবা মাদক ব্যবসায়ীদের আটক করলেও মাঠপর্যায়ে জেলা ডিবির নাম ব্যবহার করার একাধিক অভিযোগ পাওয়া গেছে। এতে করে চরম বিপাকে পরেছেন জেলা ডিবি পুলিশের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও অফিসাররা। জেলা ডিবির দায়িত্বশীল একটি সূত্র থেকে দাবি করে বলা হয়েছে, যারা অভিযান পরিচালনা করছেন মাঠপর্যায়ে তাদের পরিচয় দিলে সমস্যা কোথায়। তা না করে প্রতারনার আশ্রয় নিয়ে সরাসরি জেলা ডিবি পুলিশের নাম ব্যবহার করা হচ্ছে। এতে করে ভবিষ্যতে কোন অভিযুক্তরা গুম হলে তার দায়ভার ডিবি পুলিশের ওপর পরার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। সূত্রটি আরও জানিয়েছেন, বিষয়টি গুরুত্বের সাথে আমলে নিয়ে ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অবহিত করা হয়েছে। সূত্রমতে, শুক্রবার দুপুরে ক্রেতা সেজে বিপুল পরিমান ইয়াবাসহ জেলার গৌরনদী পৌরসভার ৯নং ওয়ার্ডের কাসেমাবাদ মহল্লার হাইমার্কেট এলাকা থেকে ডিবি পরিচয়ে এক মাদক ডিলার ও অপর এক বিক্রেতাকে আটক করা হয়েছে। আটককৃতরা হলো-গেরাকুল বৌদ্ধপাড়ার বাসিন্দা মৃত সোনামদ্দিন সরদারের পুত্র ইয়াবা ডিলার হারুন সরদার ওরফে হারবাল হারুন এবং বিক্রেতা পূর্ব কাসেমাবাদ মহল্লার নুরউদ্দিন সরদারের পুত্র শাহিন সরদার ওরফে বগা শাহিন। সূত্রে আরও জানা গেছে, আটকের খবর পেয়ে ওইদিন দুপুরে ইয়াবা ডিলার হারুন সরদারের স্ত্রী তার (হারুন) সাথে ৩০ সেকেন্ড মোবাইল ফোনে কথা বলেন। ওইসময় হারুন তাকে জানিয়েছে, সে বরিশাল ডিবি অফিসে রয়েছে। এরপর থেকে তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোন বন্ধ রয়েছে। অথচ শুক্রবার রাত বারোটা পর্যন্ত জেলা ডিবি পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়-ওইদিন তাদের কোন টিম গৌরনদীতে অভিযান পরিচালনা করেননি। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ইয়াবা ডিলার হারুন সরদারের আটক হওয়ার খবর ছড়িয়ে পরলে তার ৮/১০জন সহযোগিরা নিজেদের আড়াল করতে বিভিন্নজনের কাছে ধর্ণা দিচ্ছেন। অনেকেই আবার গ্রেফতার আতঙ্কে আত্মগোপন করেছেন। সূত্রমতে, এরপূর্বেও মাহিলাড়া ইউনিয়নের বেজহার গ্রামের এক ইউপি সদস্যর বসত ঘরে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে তল্লাশী চালানো হয়। সেসময়ও জেলা ডিবি পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিলো, তাদের কোন টিম গৌরনদীতে নেই। অপরদিকে গত ২৮ এপ্রিল সন্ধ্যায় আগৈলঝাড়া উপজেলার সোমাইরপাড় এলাকা থেকে অপু অধিকারী নামের এক মাদক বিক্রেতাকে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে আটক করা হয়। গত পাঁচদিনেও অপু অধিকারীকে সংশ্লিষ্ট থানায় সোর্পদ করেননি কোন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। সেক্ষেত্রেও জেলা ডিবি পুলিশের দায়িত্বশীল সূত্রের দাবি, তাদের কোন টিম ওইদিন আগৈলঝাড়ায় অভিযান পরিচালনা কিংবা কাউকে আটক করেননি। এনিয়ে সচেতন বরিশালবাসীর মধ্যে আজানা আতঙ্ক বিরাজ করছে। পুরো বিষয়টি নিয়ে জেলা ডিবি পুলিশের দায়িত্বশীল এক অফিসার শুক্রবার রাতে তার নিজের ফেসবুক আইডিতে একটি পোস্ট করেছেন। এতে তিনি উল্লেখ করেছেন “গৌরনদী, উজিরপুর ও আগৈলঝাড়া থানা এলাকায় বিভিন্ন সংস্থা অভিযান করার সময় বরিশাল ডিবি পরিচয় প্রদান করছে, যা প্রতারনার সামিল। স্থানীয় লোকজন অভিযান করার সময় দয়া করে ছবি তুলে রাখুন।” এ ব্যাপারে সচেতন নাগরিক কমিটির জেলা শাখার সভাপতি প্রফেসর শাহ সাজেদা বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পরিচয়ে যেকোন অভিযানের সময় সাধারণ জনগনকে কোন প্রকারেই ছবি তুলতে দেয়া হয়না কিংবা ছবি তোলার সাহস দেখানো এতো সহজ কথা নয়। তিনি আরও বলেন, আমরা চাচ্ছি সকল অপরাধীদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়া হোক। তবে প্রকৃতভাবে যারা বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য পরিচয় দিয়ে এসব অভিযান পরিচালনা করছেন, আদৌ কি তারা সরকারি কোন সংস্থার লোক। নাকি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য পরিচয়ে কোন প্রতারকরা এসব অভিযান পরিচালনা করছে। যদি সরকারি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য হন তাহলে তাদের নিজেদের পরিচয় দেয়া দোষের কিছু নয়। অন্য বাহিনীর সদস্যদের ওপর দায় চাঁপিয়ে দেয়ার বিষয়টি সম্পূর্ণ রজস্যজনক। বিষয়টি রাষ্ট্রের দায়িত্বশীল গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর জরুরী ভিত্তিতে তদন্ত করে দেখা উচিত। নতুবা সু-শৃঙ্খল আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সুনাম নিয়ে ভবিষ্যতে নানা প্রশ্ন দেখা দেয়ার আশঙ্কা রয়েছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
Leave a Reply