আমতলী প্রতিনিধি ॥ দুই দপ্তরের ঠেলাঠেলিতে বরগুনার আমতলী ও তালতলী আঞ্চলিক সড়কের আড়পাঙ্গাশিয়া নদীর ওপর নির্মিত বেইলি ব্রিজ ও ১২ কিলোমিটার সড়কের সংস্কার কাজ বন্ধ রয়েছে। বেহাল সড়ক ও ঝুঁকিপূর্ণ বেইলি ব্রিজ দিয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ২ উপজেলার লক্ষাধিক মানুষ ও যানবাহন চলাচল করছে। এতে প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা। দ্রুত সড়ক ও বেইলি ব্রিজ সংস্কারের দাবি জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা। জানা গেছে, দুই উপজেলার সড়ক পথে যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম হলো তালতলী-তালতলী আঞ্চলিক এ সড়কটি। ৩৬ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য এই সড়কটির আড়পাঙ্গাশিয়া নদীর ওপর ১৯৮৫ সালে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগ একটি বেইলি ব্রিজ নির্মাণ করে। এই সড়ক ও ব্রিজটি পার হয়ে দুই উপজেলার লক্ষাধিক মানুষ চলাচল করে। দুই উপজেলার সেতুবন্ধন এই ব্রিজ দিয়ে প্রতিদিন ঢাকা ও তালতলীগামী পরিবহন বাস, যাত্রীবাহী লোকাল বাস, তালতলীতে নির্মাণাধীন আইসোটেক তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের মালামাল আনা নেওয়ার জন্য কাভার্ডভ্যান, পণ্যবাহী ট্রাক, প্রাইভেটকার, মাহেন্দ্র্র, ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা ও মোটরসাইকেলসহ অন্যান্য যানবাহন চলাচল করে। এরই মধ্যে বেহাল সড়ক ও ঝুঁকিপূর্ণ ব্রিজটি সংস্কার না করায় ভারী কোনো যানবাহন চলাচল হচ্ছে না। এ সড়ক দিয়ে যান চলাচল ও পুরাতন ওই ব্রিজ দিয়ে যান পারাপারে বর্তমানে ব্রিজটি নড়বড়ে ও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। একাধিকবার ওই ব্রিজের পাটাতন দেবে আলগা হয়ে সরে গেছে। আবার তা কোনো রকম মেরামত করে যান চলাচল স্বাভাবিক রাখা হয়। এভাবে গত ৫ বছর অতিবাহিত হলেও সর্বশেষ গত জানুয়ারিতে ব্রিজের পাটাতন ভেঙে যায়। ভাঙার ১ মাস পর স্থানীয় প্রকৌশলী বিভাগ দায়সারাভাবে এর সংস্কার করেন। সংস্কারের ১৫ দিন যেতে না যেতেই আবারও ওই ব্রিজের পাটাতন পুনরায় দেবে গেছে। বর্তমানে ব্রিজটিতে কোনো গাড়ি উঠলেই ঠকঠক শব্দ করে নড়ে। তখন মনে হয় এখনি ব্রিজটি ভেঙে পড়ে যাবে। গত ৩ মাস ধরে এ সড়ক ও ব্রিজ দিয়ে ভারী যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। স্থানীয়রা দেবে যাওয়া ওই ব্রিজের পাটাতনের ওপর মাটি ও গাছের গুড়ি ফেলে সংস্কার করায় স্বল্প পরিসরে যানবাহন পারাপারা হচ্ছে। ভারী যানবাহনগুলো পার হচ্ছে না। অপরদিকে সড়ক ও বেইলি ব্রিজটি এভাবে বেহাল দশায় পড়ে থাকলেও সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর এবং স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের ঠেলাঠেলিতে সড়ক ও ব্রিজটির কোনো সংস্কার কাজ করা হচ্ছে না। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের দাবি আমতলী-তালতলী সড়ক ও ব্রিজ সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। অপরদিকে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর দাবি করেন ওই সড়ক ও ব্রিজ কাগজে কলমে এখনো তারা পায়নি। ফলে দুই বিভাগের ঠেলাঠেলিতে সড়ক ও ব্রিজের সংস্কার কাজ বন্ধ রয়েছে। এদিকে আমতলী-তালতলী আঞ্চলিক সড়কের মানিকঝুড়ি থেকে কচুপাত্রা বাজার পর্যন্ত ১২ কিলোমিটার খানাখন্দে ভরা। ওই সড়ক দিয়ে যান চলাচল করতে মানুষের সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। বেহাল সড়কের কারণে গত ১ বছর ধরে ঢাকাগামী পরিবহন বাস, যাত্রাবাহী লোকাল বাস ও পণ্যবাহী ট্রাকসহ অন্যান্য ভারি যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, মানিকঝুড়ি থেকে কচুপাত্রা বাজার পর্যন্ত ১২ কিলোমিটার সড়কের বিভিন্ন স্থানে কার্পেটিং উঠে, দেবে ইটের খোয়া ও বালু বের হয়ে গেছে। সংস্কার না করায় এভাবে প্রায় ২ বছর সড়কটি পড়ে রয়েছে। আড়পাঙ্গাশিয়া নদীর ওপর নির্মিত বেইলি ব্রিজের মাঝখানের বেশ কয়েকটি পাটাতন দেবে গেছে। স্থানীয়রা দেবে যাওয়া পাটাতনে ওপর মাটি ও গাছের গুড়ি ফেলে দিয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছেন। আড়পাঙ্গাশিয়া বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি সরোয়ার হোসেন হাওলাদার বলেন, স্থানীয় প্রকৌশলী বিভাগ ও সড়ক জনপথ বিভাগের ঠেলাঠেলিতে সড়ক ও ব্রিজটির সংস্কার কাজ হচ্ছে না। এতে দুর্ভোগে পরেছে এ সড়কে চলাচলরত দুই উপজেলার লক্ষাধিক মানুষ। আসছে বর্ষা মৌশুমের পূর্বে দ্রুত সড়ক ও ব্রিজটি মেরামতের করে যান চলাচল স্বাভাবিক করার জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি জানাই। কড়াইবাড়িয়া বাজারের ওষুধ ব্যবসায়ী কবির আকন বলেন, আসছে বর্ষা মৌশুমের পূর্বে এ সড়কটি সংস্কার না করলে সড়কপথে যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বরগুনা সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. কামরুজ্জামান মুঠোফোনে বলেন, আমতলী-তালতলী আঞ্চলিক সড়ক ও ব্রিজটির বেহাল দশার বিষয়টি আমি জানি কিন্তু আমার কিছুই করার নেই। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগ ওই সড়কটি সওজকে হস্তান্তর না করায় সড়ক ও ব্রিজটি সংস্কার করতে পারছি না। বরগুনা এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী মো. ফোরকান খান মুঠোফোনে বলেন, সড়কের প্রাক্কলন তৈরি করে এলজিইডির প্রধান কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছে। অনুমোদন পেলে দ্রুত সড়কের কাজ শুরু হবে। কিন্তু ব্রিজের বিষয়ে তিনি জানান, স্থানীয়ভাবে প্রাক্কলন তৈরি করে সড়ক ও জনপথ বিভাগ থেকে সরঞ্জামাদি ক্রয় করে তা সংস্কার করা হবে।
Leave a Reply