গলাচিপা প্রতিনিধি ॥ দিনদুপুরে দখল হয়ে যাচ্ছে পটুয়াখালীর গলাচিপা উপজেলার গোলখালী ইউনিয়নের পরান বল্লার খাল। প্রায় চার কিলোমিটার লম্বা এ খালটির গভীরতা প্রায় ২০ ফুট এবং প্রস্থ দেড়শ’ ফুট। সারা বছর খালটির প্রবহমান পানি কালিরচর গ্রামের কয়েক হাজার মানুষের কৃষি কাজসহ দৈনন্দিন চাহিদা মেটাচ্ছে। এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ খাল এলাকার কয়েক প্রভাবশালী বাঁধ দিয়ে দখল করার পাঁয়তারা করছে। এতে খালের দুই পাড়ের বাসিন্দারা ভবিষ্যতে পানি সংকটসহ বিভিন্ন সমস্যায় পড়ার আশঙ্কা করছেন। এরই মধ্যে গ্রামের লোকজন অবিলম্বে বাঁধ তৈরির কাজ বন্ধ করে খালটি দখলমুক্ত করার জন্য সংশ্লিষ্ট দফতরে লিখিত আবেদন করেছে। অভিযোগে বলা হয়েছে, কালিরচর গ্রামবাসীর প্রাকৃতিক পানির একমাত্র উৎস পরান বল্লার খাল। বর্ধিষ্ণু গ্রাম কালিরচরের অন্তত দুই হাজার পরিবারের কয়েক হাজার হেক্টর জমির চাষাবাদ ও পারিবারিক পানির প্রয়োজন মেটায় এ খালের পানি। ব্যাপক গভীরতার কারণে কখনই খালের দুই পাড়ের বাসিন্দাদের মিষ্টি পানির সংকটে পড়তে হয়নি। এছাড়া বেশ কিছু পরিবারের খালে মাছ ধরা জীবিকার প্রধান অবলম্বন। স্থানীয়দের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে সরেজমিন পরান বল্লার খাল ঘুরে দেখা যায়, খালের মাঝখানে বাঁশ ও নেট দিয়ে তৈরি বেড়ার বাঁধ দিয়ে বিভিন্ন পয়েন্টে মাটি ভরাট করা হচ্ছে। এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত কয়েক দিন আগে এ খালটি জরবদখল করে রাস্তার নামে বাঁধ দিচ্ছে কালিরচর এলাকার কয়েকজন প্রভাবশালী। স্থানীয় সাবেক ইউপি মেম্বার মোকছেদ হাওলাদার জানান, দুই পাড়ের অন্তত দুই হাজার হেক্টর কৃষি জমিতে বোরো, আউষ, আমন ধান, তরমুজ, মুগডালসহ কৃষিকাজে এ খালের পানির ব্যবহার হয়। খালটিতে বাঁধ দেয়া হলে চাষাবাদ ব্যাহত হবে। কালিরচর গ্রামের বাসিন্দা শহিদ হাওলাদার, মান্নান হাওলাদার ও রাজ্জাক সিকদারসহ কয়েকজন কৃষক জানান, স্থানয়ীরা যুগ যুগ ধরে পরান বল্লার খালে জাল দিয়ে মাছ শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছে এবং কৃষিকাজে পানি ব্যবহার করছে। প্রভাবশালীরা খালটি জবরদখল করে নেয়ায় স্থানীয় কৃষক পরিবারের লোকজন জমির মাঠে সেচ দিতে পারবে না। বরং খালটি প্রভাবশালীদের দখলে চলে যাওয়ায় গ্রামের মানুষের বেঁচে থাকাটাই দায় হয়ে পড়বে। বাঁধ দিয়ে পরান বল্লার খাল দখলের অন্যতম কালিরচর গ্রামের আনছার ডাক্তার বলেন, নিজের পকেটের টাকায় খালের পশ্চিম পাশে স্কুল, মসজিদ, মাদ্রাসাসহ আশপাশের মানুষের হাঁটাচলার সুবিধার জন্য খালে রাস্তা করে দিচ্ছি। এতে অন্যায় কিছু হচ্ছে না। মানুষের সুবিধার জন্য কাজ করছি। এ বিষয়ে গলাচিপা উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. নজরুল ইসলাম বলেন, নদী-খাল-বিল লিজ দেয়ার যেমন কোনো নিয়ম নেই; তেমনি বাঁধ দেয়াটাও সম্পূর্ণ অবৈধ। বিষয়টি আপনাদের মাধ্যমে জানতে পারলাম। দ্রুত তদন্তপূর্বক আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
Leave a Reply