বিশেষ প্রতিনিধি ॥ করোনার চরম দুঃসময়েও মানসিক পরিবর্তনের মাধ্যমে নতুন করে ঘুরে দাঁড়াতে আহবান জানাচ্ছে মৌসুমী বাহারী রংয়ের নানা ফুল। বরিশাল নগরীসহ জেলার বিভিন্ন স্থানে ফুঁটে থাকা বাহারী রংয়ের ফুল সৌন্দর্য বিলাচ্ছে অবিরাম। ফুলের আভায় করোনা যুগের অবসানের প্রত্যাশা নাগরিকদের। বিশেষজ্ঞরা রবলছেন, বাহারী রংয়ের কম্বিনেশন মনের প্রশান্তি তৈরি করে। নাগরিকদের স্বাচ্ছন্দ দিতে বেশি করে গাছ লাগানোর পরামর্শ দিয়েছেন তারা। কীর্তনখোলা নদী থেকে বরিশাল নদী বন্দরের স্টিমার ঘাটের দিকে তাকালে সাময়িক স্বপ্নপুরি মনে হতে পারে। কীর্তনখোলার তীরে সারি সারি কৃষ্ণচূড়ায় ফুটে থাকা লাল ফুল সৌন্দর্য ছড়াচ্ছে। বঙ্গবন্ধু উদ্যান ও লেকের বিভিন্ন স্থানে কৃষ্ণচূড়া, সোনালু, রাঁধাচূড়া, জারুল ফুলের কম্বিনেশন সবাইকে বিমোহিত করে। নগরীর বাংলাবাজার-বটতলা পশু হাসপাতাল এলাকা, বিএম কলেজ ক্যাম্পাস, শের-ই বাংলা মেডিকেল ক্যাম্পাস, বটতলা বাজারসহ নগরীর সর্বত্র ফুটে থাকা মৌসুমী বাহারী ফুল রাঙিয়ে দিচ্ছে পথচারীদের মন। নগরীর হীম নীড় পুকুরে আগের মতো না হলেও আভা ছড়িয়েছে শ্বেতপদ্ম। পথচারী নাজমুস সাকিব বলেন, করোনার কারনে চারপাশে বিরূপ পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। এর মধ্যে প্রকৃতির পরিবর্তন এবং নানা ফুলের সৌন্দর্য আমাদের পরিবেশের আরও পরিবর্তন নিয়ে এসেছে। তাপদাহের মধ্যে প্রকৃতির এই ছোয়া তাকে আরও প্রশমিত করছে। পথিক হাসান মাহমুদ মলয় বলেন, করোনায় সবাই মানসিকভাবে বিপর্যস্ত ও আতংকগ্রস্ত। এর মধ্যে নগরীর বিভিন্ন স্থানে রাস্তার পাশে ফুটে থাকা নানা রঙ্গিন ফুল পথচারীর মনের খোরাক জোগাচ্ছে। মনকে আরও উৎফুল্ল করছে। সরকারি কর্মকর্তা সাজ্জাদ পারভেজ বলেন, প্রকৃতি নবরূপে সেজেছে। চারিদিকে ফুলের সমারোহ। ফুলের ঘ্রান নিতে পারছেন। মুক্ত বাতাসে নিঃশ্বাস ফেলতে পারছেন, পাখির কলতান শুনতে পারছেন। ফুলের সুবাসে করোনা হারিয়ে যাবে আশা করেন তিনি। রমজানে ক্লান্ত অনেকেই কীর্তনখোলা নদী তীরসহ বিভিন্ন স্থানে ফুলের সৌন্দর্য উপভোগ করে সময় কাটান। পথচারীরা বলেন, করোনা মহামারি, তার উপর আবার বিরূপ প্রকৃতি সব কিছু মিলিয়ে মানব সভ্যতা কঠিন দুঃসময়ে। সবাই আতংকগ্রস্ত। এই সময়ে রাস্তার পাশের বিভিন্ন স্থানে ফুটে থাকা ফুলের সৌন্দর্য তাদের বিমোহিত করে। মনের প্রশান্তি জোগায়। এখান থেকে পরিবেশ-প্রকৃতির প্রতি শিক্ষা নিতে হবে। ঘুরে দাঁড়াতে হবে নতুন করে। নাগরিকদের মনের প্রশান্তির জন্য পরিকল্পিতভাবে মৌসুমী ফুলের গাছ লাগানোর উপর গুরুত্বারোপ করেন সংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব উদীচী বরিশালের সভাপতি মো. সাইফুর রহমান মিরন। বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান ডা. সুব্রত কুমার দাস বলেন, বৈশাখ থেকে আষাঢ় (মার্চ থেকে জুন) এই তিন মাস প্রকৃতি সৌন্দর্য্যরে ডানা মেলে দেয়। মনের প্রশান্তি তৈরি করে। জনগণের মনের প্রশান্তি বাড়াতে পারলে আর্থিক-সামাজিক সব দিকেই সমাজ লাভবান হবে বলে মনে করেন তিনি। এ জন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আঙিনা, রাস্তার ধারে, বাড়ির সামনে সর্বত্র মৌসুমী ফুল গাছসহ ফলদ, বনদ এবং ওষুধি গাছ লাগানোর উপর গুরুত্বারোপ করেন তিনি।
Leave a Reply