বিশেষ প্রতিনিধি ॥ দেশের নৌপথে অনুমোদন ছাড়াই অসংখ্য স্পিডবোট দাঁপিয়ে বেড়াচ্ছে। অধিকাংশ স্পিডবোটেরই নিবন্ধন নেই। মূলত বাড়তি টাকা দিয়েই ওসব ঝুঁকিপূর্ণ স্পিডবোট ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ে নৌপথে চলাচল করছে। কিন্তু নৌদুর্ঘটনা রোধে নানা রকম উদ্যোগের কথা বলা হলেও যাত্রী নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হচ্ছে না। বরং প্রতি বছরই দুর্ঘটনায় মানুষের প্রাণহানি ঘটছে। গত ২২ বছরে প্রায় সাত শতাধিক ছোট-বড় নৌ-দুর্ঘটনা ঘটেছে। তাতে প্রায় সাড়ে ৬ হাজার নারী-পুরুষ ও শিশুর প্রাণহানি হয়েছে। প্রতিটি ঘটনায় তদন্ত কমিটি হলেও বেশির ভাগ তদন্ত রিপোর্টই আলোর মুখ দেখেনি। তবে কিছু কমিটির রিপোর্ট প্রকাশিত হলেও সুপারিশ বাস্তবায়ন হয়নি। ফলে ধামছে নানৌদুর্ঘটনাও। আবার ছোট ছোট অনেক দুর্ঘটনাই কর্তৃপক্ষ আমলে নেয়নি অভিযোগ রয়েছে। নৌপরিবহন অধিদপ্তর সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-চলাচল অধ্যাদেশ-১৯৭৬ অনুযায়ী নিবন্ধন ও রুট পারমিট ছাড়া স্পিডবোট চলাচলে আইনগত সুযোগ নেই। অথচ বেশির ভাগ স্পিডবোটই নিবন্ধন ও রুট পারমিট ছাড়াই বিআইডব্লিউটিএর ঘাট ব্যবহার করছে। সংস্থাটি ওসব ঘাট ইজারা দিয়ে কোটি কোটি টাকা রাজস্ব আদায় করছে। যদিও নৌপরিবহন অধিদপ্তর বন্দর এলাকা থেকে অনিবন্ধিত নৌযান চলাচল বন্ধে বিআইডব্লিউটিএকে চিঠি দিয়ে আসছে। সারা দেশে মাত্র ২০টি স্পিডবোটের রুট পারমিট আছে। অথচ দেশজুড়ে নৌপথে অবৈধভাবে সহস্রাধিক স্পিডবোট দাঁপিয়ে বেড়াচ্ছে। সূত্র জানায়, বর্তমানে দেশের মাত্র ৭টি রুটে ২০টি স্পিডবোট রুট পারমিট নিয়ে চলাচল করছে। সেগুলো হচ্ছে- পটুয়াখালীর পানপট্টি থেকে বোড়ালিয়া ১০টি, বরগুনার কুড়াকাটা থেকে আমতলী ২টি, লাহারহাট-ভেদুরিয়া একটি, হাজিরহাট-ঘোষেরহাটে ২টি, চরমোনতাজ-গৈনখালী রুটে ৪টি ও গৈনখালী-চরমন্ডল রুটে একটি। তার বাইরে মাওয়ায় কমবেশি ২০০টি, পাটুরিয়ায় প্রায় অর্ধশত, নরসিংদী ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় দুই শতাধিক স্পিডবোট নিয়ম লঙ্ঘন করে যাত্রী পরিবহন করছে। তাছাড়া বরিশাল, ভোলা, হাওড়াঞ্চলসহ বিভিন্ন এলাকায় রুট পারমিট ছাড়া স্পিডবোট চলাচল করছে। নৌপথ বিশেষজ্ঞদের মতে, নৌদুর্ঘটনায় তদন্ত কমিটির রিপোর্ট বাস্তবায়ন হয় না বলে দুর্ঘটনাও বন্ধ হচ্ছে না। দুর্ঘটনা ঘটার পর চালককে শাস্তি দিলেই শেষ হয়ে যায় না। এটাকে ফলোআপ করার জন্য মনিটরিং গ্রুপ গঠন করলে অনেকাংশ দুর্ঘটনা এড়ানো সম্ভব। সূত্র আরো জানায়, অতিসম্প্রতি মাদারীপুরের শিবচরে পদ্মা নদীতে বাল্কহেডের সঙ্গে স্পিডবোটের ধাক্কায় ২৬ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। ওই স্পিডবোটের নিবন্ধন বা রুট পারমিট ছিল না। লকডাউনে স্পিডবোট চলাচলে নিষেধাজ্ঞার মধ্যেই ওটি যাত্রী বহন করে। আর যে বালুবাহী (বাল্কহেড) জাহাজের সঙ্গে স্পিডবোটটি ধাক্কা লেগেছে ওই জাহাজটিরও নিবন্ধন নেই। নিবন্ধন ছাড়াই বিআইডব্লিউটিএ, নৌপরিবহন অধিদপ্তর, নৌপুলিশ ও কোস্ট গার্ড এবং স্থানীয় প্রশাসনের চোখের সামনে ওসব নৌযান চলাচল করছে। অভিযোগ রয়েছে, প্রভাবশালীদের মাধ্যমে সংশ্লিষ্টদের ম্যানেজ করেই অবৈধ ওসব নৌযান চলে। এদিকে এ প্রসঙ্গে নৌপরিবহন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক কমোডর এ জেড এম জালাল জানান, ওসব নৌযানের নিবন্ধন নেই। আইন মান্য করে চলে না। আইনের ব্যত্যয় করে চলে। যারা ওই ধরনের অন্যায়ের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট তাদের বিচারের আওতায় আনা হবে।
Leave a Reply