বাউফল প্রতিনিধি ॥ পটুয়াখালীর বাউফলে ভরণপোষন চাওয়ায় বৃদ্ধ বাবাকে পিটিয়ে দুই হাত ভেঙে দিয়েছে তার ছেলে। বাউফল উপজেলার সূর্যমনি ইউনিয়নের ইন্দ্রোকুল গ্রামে এ ঘটনা ঘটেছে। ওই বৃদ্ধার নাম মোঃ সেকান্দার আলী। রোববার দুপুরে তাকে বাউফল স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এনে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। চিকিৎসক আখতারউজ্জামান জানান, ওই বৃদ্ধার বাম হাতের মধ্য অংশ ও ডান হাতের বৃদ্ধ আঙ্গুল সম্পূর্ণ ভেঙে গেছে। অসুস্থ মোঃ সেকান্দার আলী জানান, তার চার ছেলে। বড় ছেলে সিদ্দিক সিকদার রাজধানী ঢাকায় থাকে। মেঝ ছেলে মিজান ও সেজ ছেলে সবুজ বাড়িতে থাকে। ছোট ছেলে তার শ্বশুর বাড়ির কাছে অলাদা বাড়ি করে বউ বাচ্চা নিয়ে থাকে। তিনি ও তার স্ত্রী ময়না বেগম নিজ ঘরে অনাহারে জীবন যাপন করতেন। এক সময় ক্ষুধার যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে তার স্ত্রী মেয়ে তাজ মহলের কাছে চলে যান। মাঝে মধ্যে তার বাবার বাড়ি গিয়েও থাকেন। তিনি হাত পেতে চলেন। মাঝে মধ্যে বড় ছেলের মেয়ে মরিয়মের বাড়ি গিয়ে দুই মুঠো খান। রাতে মসজিদে কিংবা কোন দোকান ঘরের বেঞ্চে ঘুমান। ঘটনার দিন শনিবার দুপুরের দিকে সেকান্দার আলী সিকদারের সেজ ছেলে সবুজ বাড়িতে বাঁশ কেটে সাবার করছিলেন। ওই খবর পেয়ে সেকান্দার আলী সিকদার বাড়ি যান। এরপর সেজ ছেলেকে বাঁশ কাটার কারণ জানতে চান। এসময় ছেলের সাথে তার তর্ক হয়। তিনি ছেলেকে বলেন, ‘আমার সম্পদ ভোগ করতে হলে আমাকে এবং তোমার মাকে ভরণপোষন দিতে হবে।’ এতে সেজ ছেলে রাজি হননি। বরং তার হাতে থাকা দায়ের উল্টো দিক দিয়ে তাকে পেটাতে থাকেন। একপর্যায়ে তাকে পিটিয়ে বাম হাতের মধ্য অংশ ও ডান হাতের বৃদ্ধ আঙ্গুল ভেঙে দেন। ঘটনার পর সেজ ছেলে সবুজ তাকে আটকে রাখেন। তাকে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে আসতে দেননি। এই খবর পেয়ে তার বড় ছেলে সিদ্দিকুর রহমান সিকদারের মেয়ে (নাতনী) মরিয়ম বেগম ওই বাড়িতে গিয়ে তার দাদাকে উদ্ধার করে রবিবার দুপুরে বাউফল স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এনে ডাঃ আখতারউজ্জামানকে দেখান। এক্সে করে দেখা গেছে তার বাম হাতের মধ্য অংশ ও ডান হাতের বৃদ্ধ আঙ্গুল সম্পূর্ণ ভেঙে গেছে। পরে তার হাত ও আঙ্গুল প্লাস্টার করা হয়। মরিয়ম বেগম জানান, তার দুই চাচা বাড়িতে থাকেন। তার দাদার সম্পদ ভোগ করেন। অথচ তাকে ও দাদীকে ভরণপোষন দেননা। ভরণপোষন চাইলে মারধর করেন। এর আগেও কয়েকবার তার দাদাকে মারধর করে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়। তার দাদা নিরুপায় হয়ে হাত পেতে জীবন চালান। রাতে মসজিদে কিংবা কোন দোকান ঘরের সামনের বেঞ্চে ঘুমান। আর তার দাদী কখনো মেয়ের বাড়ি, আবার কখনো তার বাড়িতে এসে থাকেন। এ ঘটনায় বৃদ্ধ সেকান্দার আলী বাউফল থানায় সেজ ছেলে সবুজ সিকদারের বিরুদ্ধে এজাহার দাখিল করেছেন। বাউফল থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি/তদন্ত) আল মামুন ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, ‘অপরাধীকে গ্রেপ্তারের জন্য ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে।’
Leave a Reply