বিশেষ প্রতিনিধি ॥ বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে করোনারী কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) চরম দুরাবস্থা বিরাজ করছে। সক্ষমতার ৪ গুণ রোগী ভর্তি রয়েছে ওই ওয়ার্ডে। পিনপতন নিরবতা থাকার কথা থাকলেও রোগী ও তাদের স্বজনদের পদভারে সব সময় মুখরিত ওই ওয়ার্ড। কেন্দ্রীয় শীতাতপ মেশিন নিয়ন্ত্রিত সিসিইউ বিভাগের ৮টি মেশিনের সবগুলো দীর্ঘদিন ধরে বিকল। বৈদ্যুতিক পাখাগুলোও কার্যক্ষমতা হারিয়েছে অনেকাংশে। শীতাতপ মেশিন বিকল এবং পাখাগুলো কার্যক্ষমতা হারানোয় তীব্র গরমে ত্রাহী দশা রোগী ও স্বজনদের। ওয়ার্ড এবং বাথরুম টয়লেটও নোংরা, ব্যবহার অনুপযোগী। রয়েছে ডাক্তার এবং চতুর্থ শ্রেণির জনবল সংকটও। হাসপাতালের পরিচালকও স্বীকার করেছেন কার্ডিওলজি বিভাগের (সিসিইউ) দুরাবস্থার কথা। এদিকে, বরাদ্দ না থাকায় সিসিইউ বিভাগের শীতাতপ মেশিন সচল করা যাচ্ছে না বলে জানিয়েছে গণপূর্ত বিভাগের কর্মকর্তারা। শের-ই বাংলা মেডিকেলের মূল ভবনের পূর্ব পাশে ‘আই’ এবং ‘এফ’ ব্লক ঘেঁষে মুমূর্ষু রোগীর উন্নত চিকিৎসার জন্য করোনারী কেয়ার ইউনিট বা সিসিইউ ভবন নির্মাণ করা হয় ২০০২ সালে। মোট ১২টি শয্যা রয়েছে সিসিইউ বিভাগে। গতকাল পর্যন্ত ওই ওয়ার্ডে ভর্তি ছিল ৪৮ জন রোগী। এ কারণে শয্যা ছেড়ে ওয়ার্ডের মেঝেতে স্থান হয়েছে রোগীদের। সিসিইউ বিভাগে সবসময় পিনপতন নিরবতা থাকার কথা থাকলেও রোগীর ভারে সরগরম। ৮টি শীতাতপ মেশিনের সবগুলো বিকল থাকায় অসহ্য গরমে ঘেমে একাকার রোগী ও স্বজনরা। ওয়ার্ডের বৈদ্যুতিক পাখাগুলোও তেমন ঘুরছে না। এ কারণে কেউ ব্যক্তিগত উদ্যোগে বাড়ি থেকে টেবিল ফ্যান এনে আবার কেউ হাতপাখা দিয়ে বাতাস করে গরমের হাত থেকে বাঁচার চেষ্টা করছেন। ওয়ার্ডের সর্বত্র নোংরা। বাথরুম টয়লেটগুলোও দুর্গন্ধময়, নোংরা এবং ব্যবহার অনুপযোগী। একমাত্র এনজিওগ্রাম মেশিনটিও দীর্ঘ ৬ মাস ধরে বিকল। এ কারণে হৃদযন্ত্রে রিং পড়ানো ও পেসমেকার পড়ানোসহ সব সেবা বন্ধ রয়েছে। রোগীর স্বজনদের অভিযোগ, সিসিইউ বিভাগের ডাক্তার-নার্সরা সহনশীল নয়। ডাক্তার-নার্সদের কাছে কিছু বলতে বা জানতে চাইলে তারা মেজাজ দেখায়। কর্তৃপক্ষের অসহযোগিতা এবং অব্যবস্থাপনায় ক্ষুব্ধ রোগীরা। তারা এসব সমস্যা সমাধানে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি জানিয়েছেন। হৃদ রোগীদের সিসিইউ বিভাগে ডাক্তার ও চতুর্থ শ্রেণির জনবল সংকট, শীতাতপ মেশিন বিকলসহ নানা সমস্যার কথা স্বীকার করলেন হাসপাতালের পরিচালক ডা. এইচএম সাইফুল ইসলাম। তিনি বলেন, এসব বিষয়ে সমাধান চেয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে একাধিকবার চিঠি দেওয়া হয়েছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে এসব সমস্যা সমাধান হয়ে যাবে বলে আশা করেন তিনি। এদিকে, হাসপাতাল রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে থাকা গণপূর্ত বিভাগের মেডিকেল উপ-বিভাগের উপ-সহকারী প্রকৌশলী ফিরোজ আলম বলেন, সিসিইউ বিভাগের শীতাতপ মেশিনগুলো বহু পুরনো হওয়ায় সেগুলো কার্যক্ষমতা হারিয়েছে। এর আগে একবার মেরামত করা হলেও বেশিদিন ব্যবহার করা যায়নি। সমস্যা সমাধানের জন্য অর্থ বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। বরাদ্দ পেলে দ্রুত সময়ের মধ্যে শীতাতপ মেশিন সচল করাসহ অন্যান্য সমস্যা সমাধান করা হবে বলে তিনি জানান। একজন রেজিস্ট্রার এবং ৩ জন মেডিকেল অফিসার দিয়ে পালাক্রমে ২৪ ঘণ্টা চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে সিসিইউ বিভাগের রোগীদের। পর্যাপ্ত নার্স থাকলেও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী রয়েছে মাত্র একজন।
Leave a Reply