আঞ্চলিক প্রতিবেদক ॥ করোনা ভাইরাস মোকাবেলা ও রমজানকে পুজি করে বরিশালের আগৈলঝাড়ায় অসাধু ব্যবসায়ীরা দাম বাড়িয়ে বিক্রি করছে নিত্য প্রয়োজনীয় সকল জিনিসপত্র। কোন মুদি দোকানে টাঙ্গানো নেই মূল্য নির্ধারনের তালিকা। উপজেলার কোন বাজারে প্রশাসনের মনিটরিং না থাকায় পাইকারী ও খুচরা ব্যবসায়িরা ইচ্ছেমতো দাম বাড়িয়ে বিক্রি করছে নিত্যপন্য। বাজারে সওদা কিনতে কর্মহীন শ্রমিক ও সাধারন মানুষের নাভিশ্বাস উঠেছে।
সরকারের নির্ধারিত কিছু পন্যের দাম নির্ধারণ করা থাকলেও উপজেলার কোনো বাজারে সরকার নির্ধারিত দামে কোন পন্য বিক্রি হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন ক্রেতারা।
করোনা মোকাবেলায় আগৈলঝাড়াকে লকডাউন ঘোষণার শুরুতে বাজারে জিনিসপত্রর দাম মোটামুটি স্বাভাবিক পর্যায়ে থাকলেও রমজান শুরুর অন্তত ১৫নি আগে থেকেই নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র দাম বাড়িয়ে বিক্রি করছেন ব্যবসায়িরা। একারণে এমন কোন নিত্য পণ্য নেই যা বাড়তি মূল্যে ক্রেতাদের কিনতে হচ্ছে না। সরকারীভাবে বাজার মনিটরিং না করার কারনে বিক্রেতার ইচ্ছেমতো দামে পন্য ক্রয়ে বাদ্য হচ্ছেন বলে অভিযোগ সাধারণ ক্রেতাদের। ক্রেতাদের অভিযোগ উপজেলা প্রশাসন বা ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে কোন বাজার মনিটরিং না করায় অসাধু ব্যবসায়িরা নিজেরা অধিক লাভবান হওয়ার পাশাপাশি সরকারের ভাবমুর্তি ক্ষুন্ন করছে।
উপজেলার সদরসহ বিভিন্ন বাজার ঘুরে জিনিসপত্রের দামের ব্যাপক পার্থক্য লক্ষ করা গেছে। তবে গ্রামের বাজারের তুলনায় উপজেলা সদর বাজারে সকল জিনিসপত্রর দাম অনেক বেশী নেয়া হচ্ছে বলে দেখা গেছে। যা প্রশাসনের কর্মকর্তারা বাজার করতে গিয়ে নিগ্রহের শিকার হলেও মান-সম্মানের কারনে ব্যবসায়িদের সাথে বিতর্কে না গিয়ে তাদের নির্ধারিত দামে পন্য কিনতে বাধ্য হচ্ছেন।
উপজেলার ৫ টি ইউনিয়নের বিভিন্ন বাজারে গত ১০ দিনের চেয়ে বর্তমানে রমজান উপলক্ষে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস পত্রের মূল্য কেজি প্রতি ৫ থেকে ৩০ টাকা টাকা বেশী দামে বিক্রি করতে দেখা গেছে। বাড়তি দামের সাথে ভেজাল পন্যও রয়েছে বাজারে।
শনিবার উপজেলা সদরসহ বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ৫৫ টাকার মশুর ডাল এখন ১শ টাকা, ১৮৫টাকার ২লিটার সয়াবিন তেল (প্যাকেট) বিক্রি হচ্ছে ২১০টাকায়। ৫৮টাকার চিনি বিক্রি হচ্ছে ৬৪ থেকে ৬৫ টাকায়, ৩৫ থেকে ৪০ টাকার পিয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৭০ টাকা পর্যন্ত। ২২০ টাকার আদা বিক্রি হচ্ছে ৪শ থেকে ৪৮০টাকায়, ২০ টাকা দরের আলু বিক্রি হচ্ছে ২৫ থেকে ৩০ টাকায়, ২৬৫ থেকে ২৮০ টাকার জিরা বিক্রি হচ্ছে ৪৭০ টাকা, ৩৪ টাকার এ্যাংকর ডাল এখন ৬০ টাকা, ৩২০ টাকার দারুচিনি ৪শ টাকার উপরে কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
ইফতারী পণ্যর মধ্যে ৭০ টাকার মুড়ি ১শ টাকা, ৭০ টাকার গুর ১শ টাকা, ৪০ টাকার চিড়া ৬০ থেকে ৬৫ টাকা, ৩০ টাকার বেগুন ৭০ টাকা, ৫৫ টাকার সোলা বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৮০ টাকায়। কাচা বাজারেও দামের গ্রামের তুলনায় সদর বাজারে বেশ পার্থক্য লক্ষ করা গেছে।
অধিক মুনাফালোভী ব্যবসায়ীরা রমজান উপলক্ষে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের মূল্য বৃদ্ধি করায় সাধারণ লোকজন বাজারে গিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছে। স্বল্প আয়ের লোকজন দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির কারণে তাদের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র না কিনে খালি হাতে ফিরছেন, যার প্রভাব পরছে তার রোজাদার সদস্যদের উপর। ক্রেতাদের অভিযোগ উপজেলা প্রশাসনের বাজার মনিটরিং করতে মাঠে না নামায় নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।
এব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার চৌধুরী রওশন ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, বাজার মনিটরিং করেছি, কোন জায়গায় ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করিনি। তবে পুণরায় বাজার মনিটরিং করতে নামবেন জানিয়ে বলেন বিক্রেতাদের পণ্য ক্রয়ের মেমো দেখে অসামঞ্জস্য বিক্রি করলে ভ্রাম্যমান আদালতে মাধ্যমে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রইচ সেরনিয়াবাত বাজারে পণ্যর মূল্য বৃদ্ধির সত্যতা স্বীকার করে বলেন, উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে দু’একদিনের মধ্যে তিনি বাজার মনিটরিং এর মাধ্যমে নিত্যপণ্যর মূল্য স্থিতিশীল পর্যায়ে রাখার আহ্বান জানাবেন।
Leave a Reply